The Hanuman Chalisa is a revered devotional hymn dedicated to Lord Hanuman.
Hanuman Chalisa Chaupai 1 in Bengali with Meaning & Analysis
জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর।
জয় কপীস তিছঁ লোক উজাগর।।
সারানুবাদ : হে শ্রীহনমান, আপনার জয় হোক। আপনি জ্ঞান আর গুের সমুদ্র। তিন লোকেই প্রসিদ্ধ বানরাধিপতি আপনার জয় হোক।
ব্যাখ্যা :- জয় হনুমান জ্ঞান ওণ সাগর আদে আমরা দেখবো তুলসীদাসজী প্রথমেই ‘জয়’ ঘোষণা কেন করলেন ? বললেন- জয় হনুমান, জয় কপীস। কিস্তু কেন শ্রীহনুমানজীর জয়? এই সংসারে কার জয় ঘোষণা করা উচিত? গোস্বামীজীর লেখা অনেক গ্রন্থই বিখ্যাত হয়েছে। কিন্তু তাঁর লেখা অনেক সাহিত্য প্রচুর অদ্ভুত তথ্যে ভরপুর হলেও তার প্রসিদ্ধি অতটা হয়নি।
এই রকম্ই এক রচনায় গোস্বামীজী বলছেন, “যে স্বভাবত স্থির, শাত্ত, শীতল অথচ গস্ভীর, যার মধ্যে অনুভবের ভাঞুার সদা মজুত থাকে তার ‘জয়’ ঘোষ হতে পারে।” ‘জয়’ ঘোষ সেই সাধকের হতে পারে, সেই শরণাগতের হতে পারে যে ভগবান শংকর, প্রভু রাম বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপাসনায় রত। আর হনুমানজী, যিনি স্বয়ং একাদশ রুদ্রাবতার, যিনি জ্ঞান ও গণের সাগর, তাঁর জয় উদঘোষ হওয়া তো খুবই স্বাভাবিক।
এবার ‘হনুমান’ এই শব্দের পটভূমিকেও জেনেনি। হনুমান এই নামটি দেবরাজ ইন্দ্র দিয়েছিলেন। ছোট বয়সে শ্রীহনুমানজী একবার সূর্যকে ফল ভেবে তাকে গ্রাস করতে গিয়েছিলেন। রাহু তাঁকে বাধা দেল কিস্তু হনুমানজীর বলের কাছে হার স্বীকার করে তিনি ইন্দ্রের কাছে এই ঘটনার কথা জানান। দেবরাজ তখন তাঁর বাহন ঐরাবতকে পাঠান কিন্তু ঐরাবত ওই বালক হনুমানের তেজ ও ক্ষমতা দেখে ভয়ে পালিয়ে যান।
তখন দেবরাজ এসে ঢাঁর অমোঘ বজ্রাঘাত করে কপি হনুমানের হনু ভেঙ্গে দেন। পরে তার নাম দেন হনুমান। বাল্মীকি রামায়ণে (উত্তরকাণ্ড, সর্গ ৩৬, শ্লোক ১১) ইন্দ্র বলছেন, আমার হাত থেকে ছুঁড়ে দেওয়া বজ্রের আঘাতে এর হনু ভঙ্গ হর়ে যায়। অতএব এর নাম হনুমান হবে। এই কাহিনীর কতটা কাব্যময় অথবা অধ্যাত্মময় সে নিয়ে বিবাদ হতে পারে কিস্তু একবিংশ শতাব্দীতে এই ঘটনা যেন বাস্তব বর্জিত মনে হয় যা খুবই স্বাভাবিক। আমরা জানি সূর্যদেবকে পঞ্চদেবের একজন হিসেবে
নিত্যপূজায় অর্ঘ্য দেওয়া হয়। বেদে সূর্যকে ব্রহ্মও বলা হয়। রাহু অর্থে তমোগুণী বৃত্তি। সূর্য অর্থ জ্ঞান। ঐরাবত যে কিনা ইন্দ্রের বাহন সে রাজসিক বৃত্তির পরিচায়ক, সে দেবতাদের ভোগের প্রতীক। মুনি-ঋষিরা মনে করেন এই ঘটনা ঘটেছিল সূর্যগ্রহণের দিন। জ্ঞনরূপী সূর্যকে তমোঞুণী রাহ গ্রাস করার চেয়ে কোনো হনুমততত্ত্ব, প্রাণতত্ত্ব বা বিচারবান ব্যক্তি এই জ্ঞানকে হৃদয়স্থ করুন বা আতুস্থ করুন্ন তা সর্বতোভাবে কাম্য।
হনুমান শব্দের আরো অনেক ব্যাখ্যা আছে, আমরা তার মধ্যে কয়েকটি একটু দেখেনি :-
- হনুমান = হনু + মান; এর অর্থ হনু যুক্ত ব্যক্তিই হনুমান।
- ২নুমান = হন্ + উৎপাদন + মান; হন্ ধাতুর এক অর্থ হয় হিংসা যা ত্রীহনুমানজী যখন প্রহার বা সংহার করেন তখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়। এর নামার্থ এই হয় যে শ্রীহনুমানজী সর্ব সঙ্কটহর্তা, সর্ববিধ ভূত-প্রেত-পিশাচ গ্রহাদির বাধা বা পীড়াকে নিবারণ করা শত্রু বা অসুরসংহারক।
হন্ ধাতুর আর এক অর্থ হল গতি; ব্যাকরণের পণ্ডিতরা গতি শব্দের তিন অর্থ করেছেন- জ্ঞান, গমন ও প্রাপ্তি। শ্রীহনুমানজীর নামের তাই অর্থ দাঁড়ায়-জ্ঞানবান, গতিমান এবং প্রাপ্তিবান।
জয় হনুমান জ্ঞন ওণ সাগর ঃ শ্রীহনুমানজী অনন্ত গুণের ভাঞার। তিনি জ্ঞানের সমুদ্র। গোস্বামীজী সমুদ্রের সঙ্গে তাঁর জ্ঞান ও গুণের তুলনা করলেন কেন ? সমুদ্রের সাত লক্ষণ ঃ গল্ভীর, গভীর, বিশাল, মর্যাদাসম্পন্ন, রত্নের ভাগ্ডার, জলের ভাণ্ডার, এই সমুদ্রেই লক্ষ্মী-নারায়ণ তাঁদের শয়নসজ্জা পেতেছেন। আসুন, শ্রীহনুমততত্ত্বের সাথে মিলিয়েনি-
- গম্ভীর – শ্রীহনুমানজীর জ্ঞান ও গুণ সাগরের মত গম্ভীর;
- গভীর – হনুমানতত্ত্রের গভীরতা মাপজোক করা যায় না;
- বিশাল – বাল্মীকি রামায়ণে লঙ্কাকাণ্ড ও উত্তরকাণ্ডে ঢাঁর জ্ঞান
- গুনের এক বিশাল ক্রম দেওয়া আছে, যেমন- তেজ, ধৃতি, যশ, চাতুর্য, সামর্থ্য, বিনয়, নীতি, পুরুষার্থ, পরাক্রম, উত্তমবুদ্ধি, শৌর্য, বল, ধৈর্য, প্রজ্ঞ, প্রভাব, উৎসাহ, বুদ্ধি, সুশীলতা, মধুরতা, নীতি-অনীতির বিবেক, গস্ভীরতা ইज्याদি।
- মর্যাদা – প্রভু মন্দিরের বাইরে চুপচাপ নিজের মর্যাদার মধ্যে অবস্থান
করেন। শ্রীহনুমানজী সময়মতো প্রকট হন, অন্য সময় চূপচাপ প্রভু শ্রীরামের নাহে বিলীন থাকেন।
৫. রত্নের খাজানা – শ্রীহনুমানজীর দেহ স্বর্ণময়, ঢাঁর অন্তর্দেহ রাম-রত্নের খনি ছাড়া আর কি ? মীরাবাঈ গেয়ে উঠেছিলেন- ‘পায়োজী ম্যয়নে রাম রতন ধন পাঁয়ে।।’
৬. লক্ষ্মী-নারায়ণের সমুদ্রে নিবাস – পরম বিষ্ণু, ভগবান শ্রীরাম, পরম লক্ষ্মী মা জানকী যাঁর হৃদয়-মন্দিরে সদা অবস্থান করছেন, তিনিই শ্রীহনুমানজী। সমুদ্রের হৃদয়ে যেমন লক্ষ্মী-নায়ায়ণের বাস তেমনি শ্রীহনুমানজীর হৃদয়ে সদা লক্ষীी-নারায়ণের বাস।
জয় কপীশ তিলুঁ লোক উজাগর ঃ প্রথমে শ্রীহনুমানজীর জয়, তারপর কপীশের জয়। দুটি আলাদা আলাদা শব্দে বন্দনা করা হয়েছে। শ্রীহনুমানজীর রূপে আপনার জয় হোক কারণ আপনি জ্ঞন আর গুনের সাগর। আর কপীশের রূপেও আপনার জয় হোক কারণ আপনি তিনটি ‘লোক’-কেই প্রকাশমান বা প্রসিদ্ধ করেছেন।
সংস্কৃতজ্ঞ বিদ্বানরা ‘কপি’র অর্থ করেছেন ‘কম্’ বা ‘সুখম্’। ‘কম্’ এর অর্থ হল সুখ। অর্থাৎ ‘সুখম্ পিবতি ইতি কপি’। নিরস্তর ব্রহ্ম সুখ যিনি পান করেন তাঁকে ‘কপি’ বলা যেতে পারে। কপি মানে কেবল বাঁদর নয়। শ্রীহনুমানজী কেবল ব্রহ্মসুখ পান করা কপি নন, বরং যত লোক এই সুখ পান করে তিনি তাঁদের ঈশ্বর। কপি + ঈশ = ব.পীশ। প্রভু শ্রীরাম ব্রহ্ম আর শ্রীহনুমানজী এই ব্রহ্ম সুখে সদা অবস্থান করেন, রামের কথা শোনেন, রামের গান করেন, রামের লীলা স্মরণ করেন, তিনি তাই কপি এবং কপীশ।
তিল্ঁ লোক উজাগর : হে কপীশ, আপনার জয় হোক কেনন। আপনি তিনটি ‘লোক’-কেই প্রকাশমান বা প্রসিদ্ধ করেছেন। আমাদের সংস্কৃত তিন্ লোকের দু’রকম অর্থ করেছে। এক ব্যক্তিকে মাথায়. রেখে আর দ্বিতীয় ‘সমষ্টিকে’ মাথায় রেখে।
ব্যক্তি — জাগৃতি, স্বপ্ন ও সুযুপ্তি, এটা সাধনের তিন লোক। আর সমষ্টির – ভূঃ ভুবঃ স্বঃ অর্থাৎ স্বর্গ, মৃত্যু ও পাতাল লোক। শীরীনুমানজী সুষুপ্তি, জাগৃতি আর স্বপ্ন এই তিন লোরেই রমণের পরে তূরীয়তে অবস্থানকারী মহাপুরুষ আবার, তিনি স্বর্গলোকে প্রয়োজনে উড়ান ভরেন, মৃত্যুলোকে প্রভু স্মরণকারীকে বা তাঁর স্মরণকারীকে প্রেরণা দেন আর
পাতাললোকে গিয়ে প্রভুর খোঁজ করে তার পরিত্রাতার ভূমিকা আদায় করেন। মনে রাখতে হবে উজাগর অর্থে প্রভাবিত করা নয় কারণ অপরকে প্রভাবিত করা তেমন শক্ত কাজ নয়। উজাগর অর্থে আত্ম-চেতনাকে প্রকাশিত করা যা এ্রীহনুমানজী মৃত্যুলোকে সদাই করে চলেছেন।