Hanuman Chalisa in Bengali Pdf, Hanuman Chalisa Lyrics in Bengali, Hanuman Chalisa Meaning in Bengali

উদাহরণ স্বরূপ হনুমান চালীসার ‘চালীসা’র প্রচলন কবে থেকে, কোথায় লেখা হয়েছিল, লেখার সময়কাল, চালীসইই বা কেন, উনচল্পিশ বা একচল্লিশ নয় কেন ইত্যাদি? প্রশ্ন আরও আছে, যেমন কেন বলা হয় শ্রীহনুমানজীর সাধনা হল ‘হনুমান চালীসা’ পাঠ ? আজ থেকে পাঁচশো বছর আগে লেখা এই ‘চালীসা’ সময়ের সাথে সাথে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াচ্ছে এবং বহু মানুভের এই ‘চালীসা’ পাঠের হাতেনাতে ফল পা৫য়ার প্রচুর খবরও আসছে। এটা ঘটছে কেন ? রহস্যটা কী ?

Hanuman Chalisa Bengali Pdf, Hanuman Chalisa Bengali Lyrics, Hanuman Chalisa in Bengali Version Meaning

Also Read Hanuman Chalisa in English

रনুমन চালীসা
দোঁহা

শ্রীগুরু চরণ সরোজ রজ, নিজ মনু মুকুরু সুধারি।
বরনঙ্ড রঘুবর বিমল জসু, জো দায়কু ফল চারি।।
বুদ্ধিহীন তনু জানিকে, সুমিরোঁ পবন-কুমার।
বল বুধি বিদ্যা দেহ মোহিঁ, হরহঁ কলেস বিকার।।

চৌপাঈ

জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর। জয় কপীশ তিহঁ লোক উজাগর।। ১
রামদূত অতুলিত-বলধামা। অঞ্জনি-পুত্র পবনসূত নামা।। ২
মহাবীর বিক্রম বজরঙ্গী। কুমতি নিবার সুমতিকে সঙ্গী।। ৩
কঞ্চন বরণ বিরাজ সুবেশা। কানন কুণুল কুঞ্চিত কেশা।। ৪
হাত বত্র ঔর ধ্বজা বিরাজৈ। কাঁধে মূঁজ জনেউ সাজৈ।। ৫

Hanuman Chalisa Lyrics in Bengali Pdf

শঙ্কর সুবন কেশরীনন্দন। তেজ প্রতাপ মহাজগ বন্দন।। ৬
বিদ্যাবান গুণী অতি চাতুর। রাম কাজ করিবে কো আতুর।। ৭
প্রভু চরিত্র সুনিবে কো রসিয়া। রাম লখন সীতা মন বসিয়া।। ৮
সূক্ষ্ম রূপ ধরি সিয়হি দিখাবা। বিকট রূপ ধরি লঙ্ক জরাবা। ৯
ভীম রূপ ধরি অসুর সঁহারে। রামচন্দ্র কে কাজ সঁবারে।। ১০

Hanuman Chalisa Lyrics Bengali

লায় সজীবন লখন জিয়ায়ে। শ্রীরঘুবীর হরষি উর লায়ে।। ১১
রঘুপতি কীন্হী বহুত বড়াঈ। তুম মম প্রিয় ভরতহি সম ভাই।। ১২
সহস বদন তুমৃহরো যশ গাবৈঁ। অস কহি শ্রীপতি কন্ঠ লগাবেঁ।। ১৩
সনকদিক ব্রম্মাদি মুনীসা। নারদ সারদ সহিত অহীসা।। ১৪
যম কুবের দিগপাল জহাঁ তে। কবি কোবিদ কহি সকে কহাঁ তে।। ১৫

Hanuman Chalisa Bengali Lyrics

তুম উপকার সুগ্রীবহিঁ কীন্হা। রাম মিলায় রাজপদ দীন্হা।। ১৬
তুমহহরো মন্ত্র বিভীষণ মানা। লঙ্কেশ্বর ভএ সব জগ জানা।। ১৭
যুগ সহশ্র যোজন পর ভানূ। লীল্যো তাহি মধুর ফল জানূ।। ১৮
প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহীঁ। জলধি লাঘিঁ গয়ে অচরজ নাহঁঁ।। ১৯
দুর্গম কাজ জগত কে জেতে। সুগম অনুগ্রহ তুমৃহরে তেতে।। ২০

Hanuman Chalisa in Bengali Lyrics

রাম দুয়ারে তুম রখবারে। হোত না আজ্ঞা বিনু পৈসারে।। ২১
दिশদ অর্থ ব্যাখ্যা সर সস্কটমোচলকারী হনুমন ডালীসা
সব সুখ লইহে তুম্যারী সরনা। তুম রচ্ছক কাহূ কো ডর না।। ২২
আপন তেজ সম্হারো আটৈ। তীরোঁ লোক হাঁক তেঁ চাঁটৈ।। ২৩
ভূত পিশাচ নিক্ট নহিঁ আবৈ। মহাবীর জব নাম সুনাবৈ।। ২৪
নাটশ রোগ হরে সব পীরা। জপত নিরস্তর হনুমত বীরা। ২৫

Bengali Hanuman Chalisa

সঙ্কট ডেঁ হনুমান ছুড়াবৈ। মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাবৈ।। ২৬
সব পর রাম তপস্বী রাজা। তিন কে কাজ সকল তুম সাজা। ২৭
ঔর মরোরথ জো কোই লাবৈ। সোই অমিত জীবন ফল পাবৈ।। ২৮
চারোঁ যুগ পরতাপ তুম্হারা। হৈ পরসিদ্ধ জগত উজিয়ারা।। ২৯
সাধু সন্ত কে তুম রখবারে। অসুর নিকন্দন রাম দুলারে।। ৩০

Hanuman Chalisa Meaning in Bengali

অষ্ট সিদ্ধি লো নিধি কে দাতা। অস বর দীন জানকী মাতা।। ৩১
রাম রসায়ন তুম্হরে পাসা। সদা রহো রঘুপতি কে দাসা।। ৩২
তুমহারে ভজন রাম কো পাবৈ। জনম জনম কে দুখ বিসরাবৈ।।
৩৩ অস্তকাল রঘুবরপুর জাঈ। জহাঁ জন্ম হরি-ভক্ত কহাঈ।। ৩৪
ঔর দেবতা চিত্ত ন ধরঈ। হনুমত সেই সর্ব সুখ করঈ।। ৩৫

Hanuman Chalisa Bengali Meaning

সঙ্কট কটে মিটে সব পীরা। জো সুমিটর হনুমত বলবীরা।। ৩৬
জৈ জৈ জৈ হনুমান গোসাঈ। কৃপা করহু গুরুদেবকী নাঈ।। ৩৭
জ্রে শত বার পাঠ কর কোঈ। ছূটহি বন্দি মহা সুখ হোঈ।। ৩৮
জো য়হ পট় হনুমান চালীসা। হোয় সিদ্ধি সাখী গৌরীসা। ৩৯
তুলসীদাস সদা হরি চেরা। কীজে নাথ হৃদয় মহঁ ডেরা।। ৪০

দোঁহা

পবনতনয় সঙ্কট হরণ, মঙ্গল মূরতি রূপ।
রাম লখন সীতা সহিত, হৃদয় বসহু সুর ভূপ।।

হনুমানচালীসা

দোহা

শ্রীগুরু চরন সরোজ রজ নিজ মনু মুকুরু সুধারি।
বরনউ রঘুবর বিমল জসু জো দায়কু ফল চারি।|

বুদ্ধিহীন তনু জানিকে সুমিরোঁ পবন-কুমার।
বল বুथि বিদ্যা দেহু মোহি হরহু কলেস বিকার।|

শ্রীগুরুর চরণরণ কমনের পরানগের দ্বারা (অর্থাং শ্রীগুরুর চরণধূলির দ্বারা)
নিজের মনরূপ দর্ণণ পরিষ্কার করে নিয়ে রঘুবর শ্রীরামচট্দ্রের বিমল যশ বর্ণনা করতে

প্রবৃত্তি হচ্ছি। শ্রীরামের এই কীর্তিগাথা ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ- এই চতুর্বিধ পুরুষার্থই প্রদান করে। কিস্টে আমি যে নিতান্তই নির্বোধ (সুতরাং এই কর্মে অক্ষম) তা বুঝ্যে পবননन্দন হনুমানকে স্মরণ করছি – প্রভু, আপনি কৃপা করে আমায় সেঁই ক্ষমততা, বুদ্ধি এবং বিদ্যা দান করুন, আমার সর্বপ্রকার ক্রেশ এবং তজ্জনিত বিকারসমূহ হরণ করুন ।

চৌপাঈ

জয় হনুমান জ্ঞান গুন সাগর। জয় কপীস তিষঁঁ লোক উজাগর।।
হে হনুমান, হে কপি শ্রেষ্ঠ, আপনার জয় হোক। ख্ঞান ও গুনের সাগর স্বরূপ আপনি, তিনভুবনেই উজ্ট্রন (প্রসিদ্ধ) আপনার নাম॥ ১।

রাম দূত অতুলিত বল ধামা। অঞ্জনি-পুত্র পবনসুত নামা।
আপনি শ্রীরাদমের দূত, অতুলনীয় আপনার বল ও ত্জে। অঞ্জনার পুত্র আপনি,
পবন-নদ্দন নাচমও আপনি পরিচিত ॥ ২॥

মহাবীর বিক্রম বজরঙ্গী। কুমতি নিবার সুমতি কে সঙ্গী।
মशান বীর, মহাবিক্রমশালী, বজ্ঞাঙ্গবলী আপনি কুমতির নিবারণকর্ত এবং শুভবুদ্ধির সঙ্গী (অর্থাং শুভ বুদ্ধি প্রদানকারী) ॥ ৩॥

কষ্চন বরন বিরাজ সুবেসা। কানন কুঞুল কুঞ্চিত কেসা।
স্বর্ণবর্ণ দেহে শোভ্ন বেশে কর্ণে কুকুল এবং কুঞ্চিত কেশের শোভায় দশনয় আপनाর রূপ॥ 8 ॥

হাথ বজ ঔ ধ্বজা বিরাজৈ। কাঁধে মূঁজ জনেউ সাজৈ।
আপনার হন্তে বজ্ধ এবং ধ্বজা বিরাজিত, স্কক্ধে মুঞ্জাতৃণ নির্মিত উপবীত শোভমান ॥৫॥

Hanuman Chalisa in Bengali Meaning

সঙ্কর সুবন কেসরীনন্দন। তেজ প্রতাপ মহা জগ বন্দন।।
মহাদেবের অংশে জাত আপনি, বানর-শ্রেষ্ঠ কেশরী আপনার পিতা। তেজস্বিতায় এবং প্রতাপে আপনি সর্বজগতত পূজনীয় ॥৬॥

বিদ্যাবান গুনী অতি চাতুর। রাম কাজ করিবে কো আতুর।
সर্বপ্রকার বিদ্যা ও সকল গুণে ভৃষিত আপনি উদ্দেশ্যসাধনে অতিশয় দক্ষ ও
চতুর, বিশেষতঃ শ্রীরামের কার্য-সশ্পাদনে আপনি সর্বদাই তৎপর ॥৭॥

প্রভু চরিত্র সুনিবে কো রসিয়া। রাম লখন সীতা মন বসিয়া।
প্রতু শ্রীরামচট্দ্রের চরিতকথার রসগ্রাহী শ্রোত আপনি, আপনার হৃদয়ে শ্রীরাম, লम্कণ এবং সীতার निত্য বসতি ॥৮॥

সূক্ষ্ম রূপ ধরি সিয়হিঁ দিখাবা। বিকট রূপ ধরি লঙ্ক জরাবা।
ভীম রূপ ধরি অসুর সঁহারে। রামচন্দ্র কে কাজ সঁবারে।

সীতাদেবীর কাছে আথনি ক্ষুদ্র দেহ ধারণ করে দেখা দিয়েছিলেন, লঙ্কা-দহনের সময় বিকট আকার ধারণ করেছিনেন, রাক্ষসদের সংহারকানে আপনার রূপ অতি ভয়ক্কর, আইভাবে শ্রীরামচট্ট্রের কার্যোদ্ধারের জন্য আপনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপ ধারণ করেন। ৯-১০॥

Hanuman Chalisa in Bengali Version

লায় সজীবন লখন জিয়ায়ে। শ্রীরঘুবীর হরষি উর লায়ে ॥
রঘুপতি কীনৃহী বহুত বড়াঈ। তুম মম প্রিয় ভরতহি সম ভাঈ ॥
সহস বদন তুম্হরো জস গাবৈঁ। অস কহি শ্রীপতি কঠ্ঠ লগাবৈ ॥

মৃতসঞ্জীবনनী ওষধি নিয়ে এসে, আপনি শ্রীলস্्্রণকে পুনর্জীবিত করেন, (আপनার এই অসামান্য কর্মকুশলত দর্শনে) আনদ্দিত চিত্তে শ্রীরাম আপনাকে বক্ষে জড়িয়ে ধরেন। রঘুপতি আপনার অশেষ প্রশং সা করেন এবং বলেন ‘ ‘ুমি ভরতেরই মতো আমার পরম প্রিয় ভ্রাতা। আমি সহস্র-বদনে তোমার যশ কীর্তন করি’-এই কथा বলে শ্রীরাম আপনাকে কঠ্ঠিগ্ন করেন॥ ১১-১৩॥

সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনীসা। নারদ সারদ সহিত অহীসা।
জম কুবের দিগপাল জহাঁ তে। কবি কোবিদ কহি সকে কহাঁ তে।।

ত্রभाদি দেবশ্রেষ্ঠগণ, স্বয়ং দেবী সরস্বতী, সनকাদি মুনিচতুষ্টয়, অनন্তনাগ, নারদ-সহ অন্যান্য ঋযিবৃক্দ, যম-কুবেরাদি দিক্পালগণ ও কবিশ্রেষ্ঠ তथा জ্ঞানিবৃন্দ আপনার মशিমা বর্ণনা করে উঠুতে পারেন না॥ ১৪-১৫॥

Hanuman Chalisa Bengali Version

তুম উপকার সুগ্রীবহি কীন্হা। রাম মিলায় রাজ পদ দীন্হা।
আপনি সুগ্রীবের সঙ্গ রামের মিলন ঘটিয়ে তাঁকে রাজপদে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে তাঁর পরম উপকার সাধন করেছিলেন॥ ১৬॥

তুম্হরো মন্ত্ত্র বিভীষন মানা। লঙ্কেস্বর ভএ সব জগ জানা।
বিভীযণ আপনার পরামর্শ নেনেছিলেন এবং তার ফলে পরিণামে তিনি লক্কার অষীশ্বর হয়েছিলেন একথা জগতের সকলেইই জানে॥ ১৭॥

জুগ সহস্র জোজন পর ভানূ। লীল্যো তাহি মধুর ফল জানূ॥
সহস্র সহস্র যোজন দূরে অবঙ্ছিত যে সূর্যদেব তাঁকে আপনি মিষ্ট ফলষ্ঞানে গ্রহণ করতে উদ্যত হয়েছিলেন॥ ১৮॥

প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মার্ছী।। জলধি লাঁঘি গয়ে অচরজ নাহ্থী॥।
প্রভু শ্রীরামচট্দ্রের নামাক্িিত অঙ্গুরীয়ক মুখের মধ্যে নিয়ে আপনি সাগর লঅ্ঘন করে পরপারে গেছিলেন-এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই (কারণ বালককালেইই আপনি ॥১৯॥

দুর্গম কাজ জগত কে জেতে। সুগম অনুগ্রহ তুম্হরে তেতে।
জগতে যত দুষ্কর কাজ আছছ, সবই আপনার কৃপায় সহজসাধ্য হয়ে ওঠঠ ॥ ২০॥

Hanuman Chalisa in Bengali Translation

রাম দুআরে তুম রখবারে। হোত ন আজ্ঞা বিনু পৈসারে।।
শ্রীরাহের দ্বারে আপনিই রহ্ষক, আপনার অনুমতি ব্যতীত কেউই সেখানে প্রবেশ করিতে পারে না (অর্থাৎ আপনার কৃপা ব্যতীত ভগবান রামের প্রতি ভক্তি লাভ इड़ ना)॥ ২১॥

সব সুখ লইহ তুম্হারী সরনা। তুম রচ্ছক কাহূ কো ডর না॥ যে আপনার শরণ নেয়, সে সর্বসুখ লাড করে; আপনি যাকে রক্ষা করেন কারো কাছ থেকেই তার ভয় থাকে না ॥২২॥

আপন তেজ সম্হারো আপৈ। তীনোঁ লোক হাঁক তেঁ কাঁপৈ।। আপনার তেজ একমাত্র আপনিই সম্বরণ করতে পারেন (অন্য কেউ আপনার তেজ নিবারণ করতে পারে না।। আপনার হুक্কারে ত্রিভুবন কম্পিত হয় ॥২৩॥

ভূত পিসাচ নিকট নহি আবৈ। মহাবীর জব নাম সুনাটৈ।।
মহবীর হনুমানের নাম যখন যেখানে উচ্চারিত হয়, ভৃত-পিশাচাদি সে ছানের निকটেও आসতত পারে না ॥২8॥

নাসৈ রোগ হরৈ সব পীরা। জপত নিরন্তর হনুমত বীরা।
নিরন্তর হনুমানের নাম জপ করলে সর্বপ্রকার রোগ-পীড়াদি বিনষ্ট হয় ॥২৫॥

Hanuman Chalisa in Bengali Pdf

সঙ্কট তেঁ হনুমান ছুড়াবৈ। মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাবৈ।। সঙ্কটে পতিত হনে শ্রীহনুমানের নাম মুতে কীর্তন, মনে তাঁকে স্মরণ এবং ক্রমশঃ তাঁকে ধ্যাকে ধ্যান করলে, সেইই সষ্কট থেকে তিনি মুক্ত করেন॥ ২৬॥

সব পর রাম তপস্বী রাজা। তিন কে কাজ সকল তুম সাজা। তপস্বী শ্রীরাম সর্বজগতের সকলের প্রভু, সেই মহামহিমশালীর সকল গুরুতর কর্মসমূহের দায়িত্বপালন আপনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছিন॥ ২৭ ॥

ঔর মনোরথ জো কোই লাবৈ। সোই অমিত জীবন ফল পাবৈ।।

(সুতরাং) অন্য যে কোনো মনোবাসনা নিয়ে যে আপনার দ্বারম্ হয়, সে-ই অনন্ত জীবনের জন্য সেই সব ফললাভ করে (অর্থাৎ আপনার প্রদত্ত ফল সমূহ একজীবনে ভোগ করলেই শেষ হয়ে যায় না।) ১।২৮

চারোঁ যুগ পরতাপ তুম্হারা। ไহ পরসিদ্ধ জগত উজিয়ারা।
সর্বজগতেই একথা প্রসিদ্ধ আছে যে চার যুগেই আপনার প্রতাপ সমুজ্জনলভাবে বर्णমान॥ ২৯॥

সাধু সন্ঠ কে তুম রখবারে। অসুর নিকন্দন রাম দুলারে।।
সাধু সজ্জনগণের আপনি রক্ষাকর্তা, অসুরদের বিনাশকারী এবং শ্রীরামচট্দ্রের একান্ত প্রিয়শাত্র ॥ ৩০॥

Hanuman Chalisa Bengali Pdf Download

অষ্ট সিদ্ধি নৌ নিধি কে দাতা। অস বর দীন জানকী মাতা॥
মাতা জানকীদেবী আপনাকে এর্রা বর দিয়েছেন যে, আপনি ইচ্ছা করনেই অষ্ট সিদ্ধি এবং নয় প্রকার সম্পদ (নবধা ভক্তি অথবা কুবেরের পদ্ম, মহাপদ্ম প্রভৃতি নয়প্রকার বিধি) দান করতে পারেন॥ ৩১॥

রাম রসায়ন তুম্হরে পাসা। সদা রহো রঘুপতি কে দাসা।
শ্রীরামের প্রতি প্রেম-ভক্তি আপনারই ভাঞারে বিদ্যমান (অর্থাৎ আপনি দয়া না করলে তা লাভ করা যায় না)। হে রঘুপতির দাস মহাবীর হনুমান। আপনি সর্বদা আমার নিকটে থাকুন ॥৩২॥

তুম্হরে ভজন রাম কো পাবৈ। জনম জনম কে দুখ বিসরাবৈ।।
অন্ঠ কাল রঘুবর পুর জাঈ। জহাঁ জন্ম হরি-ভক্ত কহাঈ।

আপনার ভজনা করলে তা প্রকৃতপক্ষে শ্রীরামের উব্দেশ্যেই নিবেদিত হয় এবং

শ্রীরামের প্রীতি সম্পাদন করে। জন্ম-জন্ম সধ্চিত দুঃখরাশিকে তা ভুলিয়ে দেয় (অর্থাৎ দুঃখ निর্মূল হয়ে যায়)। যেখানে ( যে দেশে বা বর্ণে অথবा জাতিতে) সেই ভজনাকারীর জস্ম হোক না কেন ভগবদ্ভক্তরূপ্পেই তাঁর পরিচিতি হয় এবং অন্তে তিনি শ্রীরানের নিত্যধাদম গমন করেন ॥৩৩-৩৪॥

ঔর দেবতা চিত্ত ন ধরঈ। হনুমত সেই সর্ব সুখ করঈ। অপর কোনো দেবতার প্রতি চিত্ত নিবিষ্ট না করে কেবলমাত্র হুমানের সেবা করলেইই সর্ব ফললাভ হতে পারে॥৩৫॥

Hanuman Chalisa Pdf in Bengali

সঙ্কট কটে মিটে সব পীরা। জো সুমিরৈ হনুমত বলবীরা।
यिनि মহাবলবीर्यসমষ্বিত শ্রীহুনমানকে স্মরণ করেন, তাঁর সকল সঙ্চট দূরীভূত হয়, সর্ব রোগ নিরাময় হয়ে যায়। ॥ঔ৬॥

জৈ জৈ জৈ হনুমান গোসাঁ্গ। কৃপা করহু গুরু দেব কী নাঁ্গ।।
হে প্রভু হনুমানজী, আপনার জয় হোক, জয় হোক, জয় হোক। গুরুদেব যেমন তাঁর শিষ্যের প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন, সেইইরকম আপনিও আমাকে কৃপা করুন ॥৩৭॥

জো সত বার পাঠ কর কোঈ। ছূটহি বন্দি মহা সুখ হোঈ। এই হনুমান-চালীসা যে শতবার পাঠ করবে, তার বন্ধনমুক্তি ঘটবে এবং সে প্রতৃত সুখ-সৌভাগ্য লাভ করবে ॥৩৮॥

জো য়হ পটৈ হনুমান চলীসা। হোয় সিদ্ধি সাখী গৌরীসা।
যে কেউ এই হনুমান চালীসা পাঠ করবে, তারই সিদ্ধিলাভ (উদ্দিষ্ট ফললাড) হবে, এ বিষয়ে স্বয়ং মহদদেব প্রমাণ ॥৩৯॥

তুলসীদাস সদা হরি চেরা। কীজৈ নাথ হৃদয় মহঁ ডেরা॥
তুলসীদাস সদা সর্বদাই শ্রীशরির সেবক, দাসানুদাস। হে প্রভু, আथনি তার

দোঁহ

পবনতনয় সংকট হরন, মঙ্গল মূরতি রূপ।
রাম লখন সীতা সহিত, হৃদয় বসহ সুর ভূপ।

শ্রীরাম, লস্ম্ণণ এবং সীতাদেবী-সহ সঙ্কটমোচন, মঙ্গলময়বিগ্রহ সুরশ্রেষ্ঠ শ্রীপবনनদ্দন আমার হৃদয়ে বসতি করুন।
॥ ইতি ॥

সংকটমোচন হনুমানাষ্টক

মত্তগয়ন্দ ছন্দ

বাল সময় রবি ভক্ষি লিয়ো তব তীনळ লোক ভয়ো অঁখিয়ারো।
তাহি সোঁ ত্রাস ভয়ো জগ কো য়হ সংকট কাহ সোঁ জাত ন টারো।
দেবন আনি করী বিনতী তব ছাঁড়ি দিয়ো রবি কষ্ট নিবারো।
কো নহি জানত হৈ জগমেঁ কপি সংকটমোচন নাম তিহারো। ১

বালি কী ত্রাস কপীস বসৈ গিরি জাত মহাপ্রভু পহ্হ নিহারো।
চোঁকি মহা মুনি সাপ দিয়ো তব চাহিয় কৌন বিচার বিচারো।
কৈ দ্বিজ রূপ লিবায় মহাপ্রভু সো তুম দাস কে সোক নিবারো। ২

অঙ্গদ কে সঁগ লেন গয়ে সিয় খোজ কপীস য়হ বৈন উচারো।
জীবত না বচিহো হম সো জু বিনা সুধি লাএ ইহাঁ পগু ধারো।
হেরি থকে তট সিক্ধু সবৈ তব লায় সিয়া-সুধি প্রান উবারো। ৩

রাবন ত্রাস দঈ সিয় কো সব রাক্ষসি সোঁ কহি সোক নিবারো।
তাহি সময় হনুমান মহাপ্রভু জায় মহা রজনীচর মারো।
চাহত সীয় অসোক সোঁ আগি সু দৈ প্রতু মুদ্রিকা সোক নিবারো॥ 8

বান লগ্যো উর লছিমন কে তব প্রান তজে সুত রাবন মারো।
লৈ গৃহ বৈদ্য সুষেন সমেত তবৈ গিরি দ্রোন সু বীর উপারো।
আনি সজীবন হাথ দঈ তব লছিমন কে তুম প্রান উবারো। ৫

রাবন জুদ্ধ অজান কিয়ো তব নাগ কি ফাঁস সবৈ সির ডারো।
শ্রীরঘুনাথ সমেত সবৈ দল মোহ ভয়ো য়হ সংকট ভারো।
আনি খগেস তবৈ হনুমান জু বক্ধন কাটি সুত্রাস নিবারো। ৬

বক্ধু সমেত জবৈ অহিরাবন লৈ রঘুনাথ পতাল সিধারো।
দেবিহিঁ পূজি ভলী বিধি সোঁ বলি দেউ সবৈ মিলি মন্ত্র বিচারো।
জায় সহায় ভয়ো তব হী অহিরাবন সৈন্য সমেত সঁহারো। ৭

কাজ কিয়ে বড় দেবন কে তুম বীর মহাপ্রভু দেখি বিচারো।
কৌন সো সংকট মোর গরীব কো জো তুমসোঁ নহিঁ জাত ইহ টারো।
বেগি হরো হনুমান মহাপ্রভু জো কছু সঙ্কট হোয় হমারো। ৮

দোহা-লাল দেহ লালী লসে, অরু ধরি লাল লঁ।।
বজ দেহ দানব দলন, জয় জয় জয় কপি সূর।

॥ ইতি সংকটটমেচন হনুমানাষ্টক সর্পূর্ণ।

শ্রীহনুমৎ-স্তবন

সোরঠা- প্রনবডঁ পবনকুমার খল বন পাবক গ্যানঘন।
জাসু হৃদয় আগার বসহিঁ রাম সর চাপ ধর।।

বনের পক্ষে যিনি অ:্নির ন্যায় সেই পবনথুত্র হনুমানকে আমি প্রণাম করি।

অতুলিতবলধাম: হেমশৈলাভদেহ:
দनুজবनকৃশানু: জनिनाমগ্রগণ্যম:।
সকলগুণনিধান: বানরাণামধীশং
রঘুপতিপ্রিয়ভক্ত: বতজাত: नমमि॥

হারের মধ্যে উত্জন্ধল রত্নস্বরূপ সেই পবনপুত্র শ্রীহনুমানকে আমি সাদরে বন্দনা করি। মা অঞ্জনাকে যিনি অতিশয় আনन্দ প্রদান করেনেন, সীতার যিনি শোক নিবারণ করেছেন, অতিশয় বীর, অক্ষ সংহারক, লকার কন্য ভয়কর অর্থাৎ লঙ্কায় যিনি ত্রাসের সঞ্চার করেছেন সেইই বানরপতি শ্রীহনুমানকে আমি বন্দনা করি।

উब্्ख্्य সিক্ষোঃ সলिলং সলীলং
যঃ শোকবছি: জনকাত্মজায়াঃ।
আদায় তেनৈব দদাহ লষ্कং
নমামি তং প্রাঞ্লিরাঞ্জনেয়ম্।

যিনি লীলাভরে সমুদ্র লজ্ঘন করে জনকাত্মজা সীতার শোকাগ্নি গ্রহণ করে তার দ্বারা লষ্কাকে ভস্মীভূত করেছেন, সেই অঞ্জনাপুত্রকে আমি করজোড়ে প্রণাম করি।

মনোজবং মারুততুল্যবেগং জিতেন্দ্রিয়ং বুক্ধিমতাং বরিষ্ঠম্।
বাতাত্মজং বানরয়ূথমুখ্যং শ্রীরামদূতং শরণং প্রপদ্যে।

মনের সমকক্ষ শীঘগতিযুক্ত এবং বায়ুর সমান প্রবল বেগশালী, ইক্রিয়-বিজয়ী (ব্রফ্ষচারী), বুদ্ধিমানগণের মদ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, বায়ুপুত্র, বানরকুনের মধ্যে অগ্রগণ্য, শ্রীরামের দূত, সেই শ্রীহনুমানের আমি শরণাগত ইই।

আঞ্জনেয়মতিপাটলানनः কাঞ্চনাদ্রিকমনীয়বিগ্রহম্।
পারিজাততরুমূলবाসিनः ভাবয়ামি পবমানनন্দনম्॥!

যাঁর মুখ অতিশয় অতিশয় রক্তবর্ণ এবং দেহ স্বর্ণগিরির ন্যায় কান্তিযুক্ত, যিনি পারিজাত বৃক্ষমূলে निবাস করেন, সেই পবনनন্দন তथा অঞ্জনানদ্দন হনুমানের আমি মনन (চ্তিত্যা) করি।

যত্র যত্র রঘুনাথকীর্তনং তত্র তত্র কৃতমস্তকাঞ্জলিম্।
বাষ্পবারিপরিপূর্ণলোচনং মারুতিং নমত রাক্ষসান্তকম् ॥

যেখানে যেখানে শ্রীরঘুনাটের (নাম, রা, ঔণ, লীলা আদি) কীর্তন করা হয় সেই সেই জায়গায় করজজাড়ে নতমস্তক হয়ে, অশ্রুপূর্ণ নয়নে যিনি সদা উপছ্থিত থাকেন সেই রাক্ষস বংশের অন্তকারী পবননট্দে উল্দেশ্যে সকলেই প্রণাম নিবেদন করুন।

শ্রীহনুমানজীর আরতি

জাকে বল সে গিরিবর কাঁপৈ। রোগ-দোষ জাকে নিকট ন ঝাঁপৈ॥ ১
দে বীরা রঘুनाथ পঠाয়ে। লঙ্का জারি সীয় সুধि লায়ে। ৩
লঙ্कা সো কোট সমুদ্র সী খাঈ। জাত পবনসুত বার ন লাঈ॥ 8
লঙ্কা জারি অসুর সংহারে। সিয়ারামজীকে কাজ সঁবারে॥ ৫
লক্ষণ মূर्शिত পড়ে সকারে। আনি সজীবন প্রান উবারে।॥ ৬
ไৈঠি পতাল তোরি জম-কারে। অহিরাবন কী ভুজা উখারে।।
বाয়েঁ ভুজা অসুর দল মারে। দरिन ভুজা সন্তজন তারে॥ ৮
সুর নর মুনি আরতী উতারে। জৈ জৈ জৈ হনুমান উচারে॥ ৯
কঞ্চন থার কপূর লৌ ছাঈ। আরতি করত অঞ্জনা মাঈ।। ১০
জো হনুমান(জী) কী আরতী গাবৈ। বসি বৈকুণ্ঠ পরমপদ পাবৈ। ১১

শ্রীরামবন্দনা

আপদামপহর্তারং দাতারং সर्্সम্পদাম্।
লোকাভিরামং শ্রীরামং ভূয়ো ভূয়ো নমাম্যহম্॥
রামায় রভদ্রায় রামচন্দ্রায় মानসে।
রঘুনাথায় নাথায় সীতায়াঃ পতয়ে नমঃ।

নীলাম্বুজশ্যামলকোমলাঙ্গং সীতাসমারোপিতবামভাগম্।
পাণৌ মহাসায়কচারুচাপং নমামি রামং রঘুবংশনাথম্।

শ্রীরামস্তুতি

শ্রীরামচन্দ্র কৃপালু ভজু মন হরণ ভবভয় দারুণং।
নবকঞ্জ-লোচন, কঞ্জ-মুখ, কর-কঞ্জ পদ কঞ্জারুণং॥
কन्দर्भ অগণिত अমिত ছবि, नবनीল-নীরদ সুন্দরং।
পট পীত মানহ তড়িত রুচি শুচি नৌমি জনক সুতাবরং।
ভজू দীनবक्षू দিনেশ দানব-দৈত্যবংশ-নিকन्দनः।
রঘুনन्দ আনঁন্দকন্দ কোশলচন্দ দশরথ-নন্দনः॥
সির মুকুট কুত্ল তিলক চারু উদারু অঙ্গ বিভূষণং।
আজানুভুজ শর-চাপ-ধর, সংগ্রাম-জিত-খরদূষনং॥
ইতি বদতি তুলসীদাস শক্কর-শেষ-মুনি-মন-রঞ্জনং।
মম रुपয়-কঞ্জ निবস কুরু, काম খলদল-গঞ্জনং।
মনু জাহি রাচেউ মিলহি সো বরু সহজ সুন্দর সাঁবরো।
করুना निধन मूজन সীল সनহ জানত রাবরো।
মঞ্জুল মঙ্গল মূল বম অঙ্গ ফরকন লগে॥
” সিয়াবর রামচদ্রকী জয়”

শ্রীরামাবতার

ভএ প্রগট কৃগাল দীनদয়াল কৌসन् হিতकाরী।
नচ अडिরম उनू घनস্যাম निজ आয়ুধ डूজ চারী।
ভূষন বনমল नয়ন বিসালা সোভাসিক্ধু খরারী।।
কহ দুই কর জোরী অস্তুতি তোরী কেহি বিধি করোঁ অনন্তা।
ময়া গুन গ্যাनाতত अমना বেদ भूরन ভनম্ঠ।
করুনা সুখসাগর সব গুন আগর জেহি গাবহি শ্রুতি সন্তা।
সো মম रिত লগী জन অनूরाগী उয়উ প্রগট শ্রীকস্ঠা।
ত্রহ্মাণ निকায়া निर्মত মায়া রোম রোম প্রতি বেদ কইহ।
মম উর সো বাসী য়হ উপহাসী সুনত ধীর মতি থির ন রহৈ।
কহি कथा সুহাঈ মতু বুঝাঈ জেহি প সুত প্রেম লইহ।।
মাতা পুনি বোলী সো মতি ডোলী उজহ তত য়হ রূপা।
कीজৈ সमूनीল अতি প्সীল য়হ সুখ পরম অनপা।
সूनि বচন সুজানা রোদন ঠানা হোই বালক সুরভূপা।
য়হ চরিত জে গাবহি হরিপদ পাবহিঁ তে ন পরহিঁ उবকূপা।

শিবপঞ্চাক্ষরস্তোত্রম্

নাগেন্দ্রহারায় ত্রিলোচনায় ভস্মাঙ্গরাগায় মহেশ্বরায়।
নিত্যায় ऊদ্ধায় দিগস্বরায় उ’স্মে ‘न’ কারায় নমঃ শিবায়।।
মন্দাকিনীসলিলচন্দনচর্চিতায় নन्দীশ্বরপ্রমথনাথমহেশ্বরায়।
মন্দারপুষ্পবহুপুষ্পসুপূজিতায় उस्্ম ‘ম’ কারায় নমঃ শিবায়।।
শিবায় গৌরীবদনাক্জবৃন্দসূর্যায় দক্ষাধ্বরনাশকায় |
শ্রীনীলকণায় বৃষধ্বনায় তস্স্মে ‘শি’ কারায় নমঃ শিবায় ||
বসিষ্ঠকুষ্ভোদ্ভবগৌাতমার্য মুনীন্দ্রদেবার্চিতশেখরায় |
চন্দ্রার্কবৈশ্বানরলোচনায় তস্মে ‘ব’ কারায় নমঃ শিবায় ||
य (क्क) জ্তস্বরূপায় জটাধারায় পিনাকহস্তায় সনাতনায় |
দিব্যায় দেবায় দিগম্বরা? তস্মু ‘য়’ কারায় নমঃ শিবায় ||
পঞ্চাক্ষরমিদ: পুণ্যং যঃ পঠেচ্ছিবসন্দিথৌ |
শিবলোকমবাপ্নোতি শিবেনসহ মোদতে ||
|| ইতি ||

হনুমান চালীসার মধ্যে এমন কিছু তথ্য আছে যা আপাত-বিরোধী কিন্ত বাংলা ভাযায় এর বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ কোলো ভাল বই সম্ভবত না থাকায় এই লেখার দুঃসাধ্য প্রয়াস। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। যেমন হনুমান চালীসায় आছছ-

সংকট তেঁ হনুমান ছুড়াবৈ।
মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাটব। (হঃ চাঃ ২৬)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ‘মন’, ‘ক্রম’, ‘বচন’, ‘ধ্যান’, এগুলি এমন কোনো সহজসাধ্য বিষয় নয় যে ইচ্ছা করলেই তা করা যায়। মানসিক, বাচিক, কায়িক ও ধ্যান এগুলির বৈশিষ্টাই এমন যে এরা দীর্ঘ সময়ের সাধন সাপেক্ষ (মূলত জড় ও চঞ্জল মনকে স্থির করা)। তাহলে এমন কেন্ল হয় যে হনুমান চালীসা ইচ্ছায় বা প্রথম প্রথম অনিচ্ছায় পাঠ করলে বা মন, ক্রম, বচন ও ধ্যান সঠিক না হলেও লোকে সঙ্কট থেকে উদ্ধার পাচ্ছে বা সঙ্কট কাটিয়ে উঠছে? আবার দেখুন এই চালীসাতেই আছে –

সংকট কটে মিটে সব পীরা।
জো সুমিরৈর হনমত বলবীরা।। (হঃ চাঃ ৩৬)

অর্থাৎ শ্রীহনুমানজীর যে স্মরণ করে, তাঁর ভজনা করে বা পাঠ করে (তা সে শ্রীশ্রীরামচরিত মানস হোক বা শ্রীশ্রীরামচরিত মানসের ‘সুন্দর কাণ্ড’ হোক বা হনুমান চালীসা হোক, সঙ্কটমোচন হনুমানাষ্টক বা শ্রীহনুমৎ-স্তবন হোক ইত্যাদি) শ্রীহনুমানজী তার সঙ্কট কাটিয়ে দেন। লক্ষ্য করুন এখানে ‘সুমীরণ’-এর কথা বলা হয়েছে, মন, ক্রম, বচন ও ধ্যান কিন্তু এবার বলা হয়নি। এখানেই শেষ নয়, এই হনুমান চালীসাতেই আরও আছে-

জো য়হ পট় হনুমান চলীসা।
হোয় সিদ্ধি সাখী গৌরীসা। (হঃ চাঃ ৩৯)

গৌরীসা অর্থাৎ গৌরীপতি স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব। স্বয়ং মহাদেব সাক্ষী দাঁড়াচ্ছেন এই কথা বিশ্ববাসীকে জানাতে যে ‘হনুমান চালীসা’ যে পড়বে তার সিদ্ধির দায়িত্ব ডাঁর। এখন ‘হনুমান চালীসা’ পাঠঠর, তা সে মানসিক, বাচিক, কায়িক হোক বা গুনগুন করে হোক, ভজন করে হোক বা সাধারণ পাঠের মতো করেই হোক, যেভাবে হোক করলেই তার মানসিক (মনইই তো আসল) ইচ্ছাপূরণ হবে যার সাক্ষী স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব হবেন।

কিষ্টু প্রশ্ন ওঠে এই ‘হনুমান চালীসা’র এত প্রাধান্য এই কলিযুগে কেন ? কেন আমরা দেখি হনুমানজীর আরাধনা সমস্ত সাধু, সন্ত, যোগীরা করে থাকেন ? হনুমান চালীসা তাঁদের এত প্রিয় কেন ? যেহেতু হনুমান চালীসার পাঠ, তা সে বিশ্বাসেই হোক বা অবিশ্ধাসেই হোক, মানুষকে তার মনের ইচ্ছা, বিলেষ করে সঙ্কট থেকে উদ্ধারে সাহায্য করছে, এই চালীসার প্রত্যেকটি শব্দ তাই মক্ত্র স্বরূপ এবং কোটো মন্ত্রই সঠিক অর্থবোধ ছাড়া বা উচ্চারণ ছাড়া তার পূর্ণফল দিতে অক্ষম হয়। আমার এই প্রচেষ্টা, যা কিনা গুরু ও রীংহনুমানজীর কৃপা সাপেক্ষ, তা শুধু এই চালীসার প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যাসহ প্রস্তুত করা যাতে হনুমান চালীসার পাঠ হয় সবদিক থেরেই পরিপূর্ণ ও পূর্ণফলদায়ী।

শ্রীহনুমান চালীসা যেহেতু গোস্বামী শ্রীতুলসীদাসজীর অনन গুরুস্মরণের মূল পৃষ্ঠভূমি তইই বলা হয় যে ‘হনুমান চালীসা’ সমগ্র ‘শ্রী এ্রীরামচরিত মানস’-এর ভাষ্যস্বরূপ। আরও গভীরে গিয়ে বলা যায় শ্রীহনুমানজীর কাছে পৌঁছোনোর সবচেয়ে সহজতম সোপান হলো এই ‘হনুমান চালীসা’।

পরিশেষে অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলি যে এই চালীসার পাঠ শুু সঙ্কটই দূর করে না, স্বয়ং শ্রীহনুমানজী নানানরূপে এসে তাদের সাক্ষাৎও দেন। লেখক এর সাক্ষী হওয়ার সৌভাগ্য ও কৃপা পেয়েছেন। তাইতো মুক্তকণ্ঠে বলি এ এমন এক দুর্লভ বস্তু (হনুমান চালীসা) যা অবিশ্বাসেও ফল দেয়। বাকীটুকু আপনাদের হাতে ছাড়লাম। দেবাদিদেব মহাদেব যার সাক্ষী ঢাঁর কি অন্যথা হতে পারে ? কলিযুগের সমস্যা-জর্জরিত ছুটে চলা মানুযের সঙ্কট সমাধানের এর চেয়ে ভালো কোনো সহজ বিকল্প বোধ হয় আর হতে পারে না।

জয় সীয়ারাম
জয় শ্রীগুরু
জয় শ্রীরীহনুমান

প্রাক্-কথন

যেমন জানেন মাত্র তিনজন যথা ভগবান শংকর, মাতা ভবানী ও কাকভূষণ্ডী, তেমনি শ্রীহনুমানতত্তৃও আগাগোড়া রহস্যে ঘেরা। এই ব্রস্মাণ্ড-চালন ব্যবস্থায় তার ভূমিকাও কোরো অংশে ত্রিদেবের চেয়ে কম নয়। সর্বব্যাপক ভগবান বিষ্ণুর সত্যগুণের ধারক ও বাহক হিসেবে তিনি আরও অনেক কিছুর মধ্যে এই ভূলোকের সর্বত্র সর্বদা বিচরণ করছেন। তিনি স্বয়ং প্রাণতত্ত্ব। ঐই বিশ্বের তিনি প্রাণ। তিনি পবনদেবের পুত্র। যে কোনো প্রাণ-কেন্দ্রিক সাধনা তাঁর কৃপা বিনা অধরাই থেকে যায়। আর তাই

“সাধু সন্ত কে তুম রখবারে ……….” (হঃ চাঃ/৩০)

শ্রীহনুমানজী জাগ্রত তত্ট্ব। তিনি সদা জাগ্রত ও রামভজন রত। হরির সাধন-ভজন রত ব্যক্তির প্রতি তিনি অবশ্যই দৃষ্টি দেবেন এবং সেই ব্যক্তির উপলক্ধি অবশ্যই তাঁর কৃপা সাপেক্ষ।
আসুন, এইবার ‘হনুমান চালীসা’র কথায় চলে যাই।

এরকম মনে করা হয় যে এই ‘হনুমান চালীসা’র রচনা শুরু হয় অযোধ্যায়। প্রকৃতপক্ষে শ্রীশ্রীরামচরিতমানসের পুরো রচনাই গোস্বামী তুলসীদাসজী লেখেন অযোধ্যায় বসে; কিব্তু হনুমান চালীসা লিখতে লিখতে তিনি ‘কৈলাস-মানস সরোবরের’ উদ্দেশ্যে রওনা দেন বলে শোনা যায় এবং এই চালীসার শেষভাগ তিনি লেখেন মানস সরোবরের অতি মনোরম পরিবেশে। তিনি চালীসার চতুর্থ ও শেষ ভাগ ভগবান শংকরের পদমূলে বসে ও তাঁকে সাক্ষী রেখে শেষ করেন। গোস্বামীজী অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে তাই শ্রীশীরীহুমান চালীসার শেষ কয়েক চরণে বলেন :

জো য়হ পঢ় হনুমান চালীসা।
হোয় সিদ্ধি সাখী গ্গীরীসা। (হঃ চাঃ/৩৯)

গৌরীসা অর্থাৎ গৌরীপতি দেবাদিদেব মহাদেব। এখন দেখার এই ‘পড়া টা কেম্ন হবে? এই বিষয়ে আমরা পরে বিস্তারিত আলোচনা করব। প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক, এই ‘হনুমান চালীসা’য় ‘চালীসা’ শব্দ কেন এলো? চম্লিশ পংক্তিই কেন ? উনচল্পিশ কিংবা একচল্লিশ কেন নয়?

এখানে বলে রাখা ভাল গোস্বামী তুলসীদাসজী প্রধানত পরর্পরায় বিশ্বাস করতেন। স্মৃতি, শ্রুতি, বেদ, উপনিষদ, শাস্ত্রাদি ছিল তাঁর রচনার আধার। তাই ‘চালিসা’ নামের পিছনে এই শাস্ট্রাদির প্রভাব থাকা অমূলক নয়। মনে রাখা দরকার যে, এই চালীসার প্রবর্ডন প্রথমে তিনিই করেন। ঢাঁর লেখার পরও চালীসা অনেক হয়েছে, যেমন বিভিন্ন দেব-দেবীর চালীসা, অধুনা নেতা-নেত্রীর চালীসা ইত্যাদি।

আর একটা জিনিস এখানে মনে রাখা দরকার যে গোস্বামীজী মূলত কাশীতেই থাকতেন এবং তাই তাঁর মনের মধ্যে সব সময়ে এই অনুভব ছিল যে, তিনি যাই লেখেন না কেন তার ব্যাখ্যা শাস্ত্রানুরূপ না হলে কাশীর পঞ্ডিত কুলের অনুনোদন পাবে না। ইতিহাস বলে যে, গোস্বামীজী নিজের মতো থাকতেন এবং পণ্ডিত সমাজকে খুব একটা পাতা দিতেন না।

পূজ্য গোস্বামীজী যখন হনুমান চালীসা লেখা মনস্থ করেন তখন পরম্পরার ও কাশীবাসের কারণে প্রথমেই সর্ব-শাস্ত্রাদির মূল ‘বেদ’-এর ঐ মণ্ত্রের কথা তাঁর মনে পড়ে ভেখান থেকে চল্লিশ বা চালীসার কথা মাথায় আসে। ‘বেদ’-এর সেই মন্ত্রটি এইরূপ :

ইয়হ শম্বরম্ পর্বতেষু ক্ষীয়ংত্ম চত্বারিক্ষাম শরতঃ।
অबববিन्দত ঔজায়মানম् ঔৎহিং জঘানম্ ধনুংষয়াং সজ্জনা সঃ ইন্দ্রঃ।।

মস্ত্রটি বেদের সেই কাহিনীকে চিত্রিত করে, যে কাহিনী অনুসারে কোলো এক কালে শম্বর নানে এক রাক্ষস চতুর্দিক পর্বত পরিবেষ্টিত এক দুর্গম গুহায় বাস করতো। সমস্ত দেবতাদের, ঋষি-মুনিদের, সাধু-সজ্জনদের নানান রকম শারীরিক ও মানসিক পীড়া দিতো এবং চতুর্দিকে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। সে ঐ গুহার ভিতর শুয়ে থাকত এবং যখনই বাইরে বেরোতো তখন চারিদিকে হাহাকার রব শোনা যেতো।

এই রাক্ষস ছিল অবধ্য। দেবতা ও মুনি-ঋষিদের আর্তি শুনে দেবরাজ ইন্দ্র তাকে বধ করার সঙ্কল্প নিয়ে তার খোঁজ শুরু করেন। তাঁর এই থোঁজ শুরু হয় ভাদ্র মাসের প্রথম দিনে এবং অনেক চেষ্টার পর আশ্ধিন মাসের দশমীর দিন ইন্দ এই রাক্ষসকে বধ করেন। রাক্ষ্কে থোঁজা ও গুহা থেকে বার করে তাকে বধ করতে ইন্দর লাগে চল্মিশ দিন (ভাদ্রমাসের ত্রিশ দিন ও আশ্বিনমাসের দশ দিন)।

এই ভাবে সংসারকে ওই রাক্ষস থেকে পরিত্রাণ দিতে ঢাঁর লাগে চক্লিশ দিন। গোস্বামীজীর হঠাৎ বেদের ওই মন্ত্রের কথা মনে হবার কারণ হলো মনুষ্যজীবনে এরই উদাহরণ। আমাদের জীবনের মন-গুহায় না জানি কত

শম্বর এইভাবে শয়ে আছে যা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলিকে (অন্তঃকরণ ও বহিঃকরণ) অহরহ উৎপীড়ন করছে যার কারণে আমাদের সমস্ত চিন্তা-ভাবনা ও কর্ম রজঃ-চমঃয় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। শুভ চিন্তা, ভাল দেখা, ভাল বলা সব কেমন যেন মরীচিকার আকার নিচ্ছে। শুষু একজন্মে নয়, এই শম্বর শত শত জন্মে তার এই খেলা চালাচ্ছে। আমাদের না গুহার খবর আছে, না শম্বরের।

অথচ এই ইন্দ্রিয়গুলির অসীম ক্ষুতা আছে ওই শম্বরকে খুঁজে বার করে তার নিধন করার। এই ‘হনুমান চালীসা’ সেই ইন্দ্র যে শম্বরের অজাত্তে তাকে টেনে বার করে বধ করার সামর্থ রাখে। এই চল্লিশ দিনের যাত্রা তাই তুলসীদাসজীর প্রথম মনে পড়লো। তাঁর চালীসার বিচারের শুরু এখান থেকে। তাঁর চালীসা লেখার প্রথম

(প্রেণাও এখান থেকে। তাঁর মনে হলো শ্রীহনুমানজীর প্রকৃষ্ট সাধনা (তুলসীদাসজীর ভাষায় – সীধা-সাদা) এই হনুমান চালীসাকে সকলের সুবিধার জন্য চল্লিশ পংক্তিতে ধরে রাখি। পূজ্য গোস্বামীজীর দূরদৃষ্টিতে এই কথা ধরা পড়তে দেরি হয়নি যে, কলিযুগের মানুষের এই চল্লিশ পংক্তি পড়তে ধৈর্য্যের অভাব হবে।

বেদই শুধু নয়, চঞ্লিশ দিনের মাহাত্য ইতিহাসের অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। বিখ্যাত ‘টেন কম্যাগুমেন্টস্’ (Ten Commandments) মোজেস (হজরত মুসা) পেয়েছিলেন পাহাড়ের গুহায় চল্লিশ দিন কাটানোর পর। ভগবান যীশ মরুভূমিতে টানা চল্লিশ দিন উপবাসের কারণে ‘শয়তানি শক্তি’র উপর জয় পেয়েছিলেন। চল্লিশ দিলের মাহাত্য পবিত্র ইসলাম ধর্মেও আছে।

পূজ্য গোস্বামীজীর মাথায় এইগুলিও যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল বলে মনে হয়। গোস্বামীজী এই ‘চালীসা’ শব্দটি তাই অনেক চিস্তা ভাবনার পর গ্রহণ করেছেন। উপরের দুটি কারণের প্রেরণা ছাড়াও অন্য কয়েকটি বিষয়ও তাঁকে প্রভাবিত করেছিল। মানব জীবনের যাবতীয় সঙ্কটের মূল কারণ তো নিহিত আছে তার নিজের অন্তঃকরণে আর তাঁর ‘হনুমান চালীসা’ লেখার মূল কারণই হলো মানুষকে সঙ্কট থেকে নিস্তার পাবার সহজ ও সুগম রাস্তা দেখানো। অস্তঃকরণের শুদ্ধিকরণ ছাড়া তা তো সষ্তবই নয়।

আমাদের অন্তঃকরণ মূলতঃ চারটি বস্তুর উপস্থিতি ও তাদের কার্য-কারণের ফল। এগুলি হল মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার। মনের আবার দশ লক্ষণ, বুদ্ধিরও দশ লক্ষণ, চিত্ত ও অহংকারের আবার দশ-দশ লক্ষণ। এর মধ্যে কিছু লক্ষণ ভাল ও কিছু লক্ষণ ক্ষতিকারক। এই চার বস্তুর দশ-দশ লক্ষণকে একত্র

করলে হয় চল্লিশ। আর হনুমান চালীসা পাঠ এই চল্লিশ লক্ষণের মব্যে যেগুলো শুভ তাকে আরও জোরালো বা বলিষ্ঠ করতে আর অশুভ লক্ষণগুলোকে নিস্তেজ বা স্তিমিত করতে প্রতূুত সাহায্য করে। এখন দেখা যাক, এই লক্কণকলি কি কি? মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার যদিও সন্দিলিতভাবে আমাদের অন্তঃকরণ কিন্তু নিজের নিজের লক্ষণের কারণে এরা একদিকে যেমন স্বাধীন বা স্বতন্ত্র, অন্যদিকে এরা একজ্ন আর একজনের পরিপূরক শুভ-অকুভ দুই অবস্থাতেই।

আসুন আমরা এবার লক্ষণগুলিকে চিতে নিতে সংক্ষেপে একবার চোখ বুলিয়ে নিই। এদের শুভ-অশুভ প্রভাবটাও বোঝার চেষ্টা করি। চালীসার প্রভাব জানতে গেলে এদের জানাও জরুরি। প্রথমেই জেনে রাখা ভাল এই চার বৃজ্তির সবটাই কিন্তু জড় অর্থীৎ চেতনরহিত। সৃষ্টি তন্ত্বের অন্যুস অংশ এরা এবং মায়াকবলিল।

মন :- সবার প্রথমে মনকেইই ধরা যাক। মন সর্বদা চঞ্চুল এবং তীব্র গতিশীল। সঙ্কল্প-বিকল্প এর মূল আধার। ঈর্ষা, দ্বেষ, স্পর্ধা মনের স্ষতিকর দিকগুলির অন্যতম। অধ্যাড্ম মার্গের এরা প্রবল বাধা এবং এদের বাস মনের গভীরতম প্রদেশে। এদের চেয়েও ক্ষতিকর হচ্ছে ‘ভয়’ ও ‘সন্দেহ’ যা কিনা বিষয় ও ব্যক্তির প্রতি অতিরিক্ত প্রীতিকর কারণে হয়।

বুদ্ধি :- অন্তঃকরণের বৃত্তিগুলির মূল চালক হল বুদ্ধি। এর অন্যতম কাজ হল মনকে চালনা করা। কলিযুগে কিস্তু এর উল্টোটাই দেখা যায়। বুদ্ধির লক্ষণের অন্যতম হল বিষয়ে ‘নিশ্চয়তা’ দেওয়া। আবার ভুল বোঝাও এর কাজ। মজ্ঞার কথা হল এই বুদ্ধিই আবার অন্যাকে পরামর্শ দেয় এবং ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়।

এর ভাল দিকগুলির মধ্যে অন্যতম হল শাস্ত্র ইত্যাদিতে দক্ষতা পাবার ইচ্ছা বা জ্ঞানলাভের আকাষ্কা। এর আর একটি বিশেষত্ব হল কখনও কারোর কুক্ষিগত না হওয়া কারণ সে সর্বদাই বিকশিত হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। সূর্য বুদ্ধির প্রিয় দেবতা আর তাই গায়ত্রী মন্ত্র এই বুদ্ধিকে “…….. ধীমহি, ধিয়ো য়ো ন: প্রচোদয়াৎ ভঁ” করার আহ্বান জানায়।

চিত্ত :- একে একক্থথায় ‘সংগ্রাহক’ বলা যায়। জন্ম-জন্মান্তরের সংস্কার এর ভাগ্ডারে জমা থাকে। একদিকে বিক্ষিপ্ত হওয়া যেমন এর কাজ, তেমনি এর অত্যন্ত ভাল দিক হল ‘দ্রবীভূত’ হওয়া যা আধ্যাছিক জীবনে খুবই জরঁরী। প্রসন্নতা বা উদাসীনতা এর থেকেই আসে। মহর্ষি পতঞ্জলি আধ্যাত্ম মার্গের সাধনায় এই চিত্তের ওপর খুব জোর দিয়েছেন। । তাঁর কথা অনুযায়ী ‘চিত্ত-নিবৃক্তি’ বা ‘চিত্ত-নিরোধ’ মানুষকে ‘সমাধি’-স্থিতিতে পোঁছে দিতে সক্ষম।

অহংকার :- এটি একটি তামসিক বৃত্তি। এর প্রভাবে মানুষ অভিমানী হয়। শত্রহতা বা হিংসা এর সহজাত। চাটুবারিতা এদের খুব পছন্দের হয়। প্রমাদের কারণে অপরকে তাচ্ছিল্য বা আঘাত করতে এদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা रয় ना।

হনুমান চালীসা পাঠ এই লক্ষণগুলির অশুভশক্তিকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেয় এবং তা হয় আমাদের অজাস্তে। তখন এরাই সমস্ত শভ গুণের আধার হয়ে ধীরে ধীরে মনকে অস্তর্মুখী করতে সাহায্য করে। এতক্ষণ আমরা অন্তঃকরণের মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকারের লক্ষণগুলি সংক্ষেপে জানলাম। এর মধ্যে শুভ ও অশুভ দুইই আছে।

আগেই বলেছি শ্রীহনুমান চালীসা পাঠ 刃ভ লক্ষণগুলিকে প্রকাশ করে এবং তাকে বলবতী করে আর অগুভ লঙ্ষণগুলিকে তার মূল থেকে উচ্ছেদের কাজ করে। কিছু কথাকার তাঁদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে চালীসা নামের আরও কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। এক মত অনুযায়ী ‘চালীসা’র সক্ধি হলোঃ চাল্ + ঈশ্ অর্থাৎ চলমান ঈশ্বর। যে ঈশ্বর চলতে শেখায়, যে জীবিত, যে আমাদের জীবন-দর্শনের মূল প্রেরণা স্বরূপ, চালীসা তাঁরই গুণরাশির বর্ণনা।

আবার যাঁরা ভগবান শিবের পরম ভক্ত, তাঁরা যেহেতু হনুমানজী একাদশ রুদ্র অবতার, তাই ভাগবান শিবের সঙ্গে এই চালীসার মিল খোঁজেন। অনুধাবনে কঠিন হলেও তাঁদের মতে ভগবান সদাশিবের দ্বাদশ জোতির্লিঙ, অষ্টমূর্তি (বেদ ও মহিন্ন স্তোত্র অনুযায়ী), পঞ্চমুখ এবং পরেরো নেত্র মিলে চল্লিশ হয় এবং চালীসা নামের এটাও একটা কারণ। আসুন, আমরা এবার হনুমান চালীসার মূল পর্বে প্রবেশ করি।

দোঁহা

শ্রীণুরু চরণ সরোজ রজ, নিজমনু মুকুরু সুধারি।
বরনউ রঘুবর বিমল জসু, জো দায়কু ফল চারি।।

সারানুবাদ : শ্রীগুরুদেবের চরণ পদ্মের ধূলিতে নিজের মনরূপী আয়নাকে

পরিষ্কার করে রঘুবংশের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির নির্মল কীর্তি বর্ণনা করছি যা কিনা চার রকমের ফল দিতে পারে।

ব্যাখ্যা :- হনুমান চালীসার এই দোঁহা দিয়ে যেমন চালীসা আরস্ভ হয়েছে, তেমনি এই দোঁহাই আবার শ্রীভ্রীরামচরিত মানসের অযোধ্যাকাণুর প্রথম দোঁহারূপে বিরাজ করছে। অর্থাৎ সবার আগে গুরু-স্মরণ দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে। গুরু বন্দনা দিয়ে শুরু করা তো আমাদের পরম্পরায় আছেই। কিন্তু এখানে গুরুর আগে ‘শ্রী’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে। সদ্গুরু লাগানো হয়নি, ধর্মগুরু নয়, বিদ্যাগুরু নয়, কুলগুরুও নয়, জগদ্গুরুও নয়।

গোস্বামী তুলসীদাসজী ভগবান শঙ্করের কৃপায় কবি হয়েছেন। গোস্বামীজী রামায়ণে সদ্গুরু শব্দ তো ব্যবহার করেছেন। কিন্তু হনুমান চালীসা ও অযোধ্যাকাতুর আরস্ভই করেছেন ‘শ্রী’ শব্দ ব্যবহার করে। শাস্ত্রে এই ‘শ্রী’ শব্দের অনেক মাহাছ্য বর্ণনা রয়েছে। সাধারণত কোনো ভগবত কथা শুরু হয় “অথ শ্রী …….” বলে, বর্ণনা শেষ হয় “ইতি শ্রী ……” বলে।

এই ‘শ্রী’ ঐশ্বর্য সূচক, কল্যাণকারী বা মঙ্গলপ্রদ বলে এর এত প্রাধান্য। আবার ‘শ্রী’র আর এক অর্থ লস্ক্মীও হয়। কিক্তু এই ‘শ্রী’ শব্দ লক্ষ্মীর চেয়েও উপরে থাকে যখন আমরা দেখি যে দেবী লক্ষ্মীর বিখ্যাত সূত্র লক্ষীসূত্র না হয়ে ‘শ্রীসূক্ত’ রূপে বিখ্যাত হয়। গোস্বামীজী গুরুর আগে শ্রী শব্দ ব্যবহার করে জগতকে জানাতে চাইছেন যে আমার গুরুও ঐশ্বর্যবান, লক্ষ্মীবান ও কল্যাণকারী। আমার গুরু সৃজনকারীও বটে।

প্রসঙ্গক্রমে, একটা কথা এখানে উঠে আসে যে পরম্পরায় গুরুর নাম তো সাধারণতঃ নেওয়া হয় না কারণ নাম নিলে গুরু ব্যক্তি হয়ে যান, তিনি আর ব্যাপক পরমতত্ত্ব থাকেন না। তুলসীদাসজীকে যখন একাস্তভাবে গুরুর নাম নিতে হতো তখন তিনি কখনও কখনও ‘হরর’ শব্দ ব্যবহার করতেন। তিনি তাঁর ‘বিনয় পত্রিকায়’ ‘হে হরি’ শব্দ চাঁর গুরু স্মরণে বেশ কয়েকবার ব্যবহার করেছেন।

ুধু তাই নয়, এই হনুমান চালীসায় শিনি ‘হরি’ শব্দ ব্যবহার করেছেন একেবারে শেষ চৌপাঈ-এ “চুলসীদাস সদা হরি চেরা …….” (হঃ চাঃ- চৌ 8০)। হনুমান চালীসার আরত্ভে তো আছেই, গুরুর শ্মেরণ চালীসার উপসংহারেও আছে। মঙ্গলাচরণে গুরুদেবকে স্মরণের পরে হনুমান চালীসার শেষেও গুরুকে স্মরণ করতে ভোলেনলি চৌপাঈ ৩৭-এ তিনি লিখছেনজৈ জৈ জৈ হনুমান গোসাঈ। কৃপা করহু গুরুদেব কী নাঈঁ।।

এর থেকে এটা শ্পষ্ট যে তুলসীদাসজী ब্রীহনুমানজীকে গুরুর আসনে স্থাপন করেছেন। তাঁর উপাসনা করেছেন।এরপর এই গুরুর চরণকে পদ্মের সঙ্গে তুলনা করে তার ‘রজ’ বা ধূলির দ্বারা নিজের মন-দর্পণকে পরিষ্কার করার কথা বলছেন। ‘রজ’ মানে চরণ স্পর্শ করে তাঁর ধুলো লেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ‘রজ’র ব্যাপক অর্থ শাস্ত্রকাররা করেছেন।

যেমন ‘রজ’ মানে গুরুর বচন, ‘রজ’ অর্থে গুরু যে মতাদর্শের অনুসরণ করেছেন সেই পথে চলার সাহস। গুরুর চরণের ‘রজ’ অর্থে মানুষের রজোগুণ মেটানোর ক্ষমসা রাখা। সমস্ত ভারতীয় শাস্ত্র গুরুর মহিমার বর্ণনায় কখনও ক্ষান্ত হয়নি। আসুন এবার দেখি এই মহিমার রহস্যঃ অধিকাংশ লোকের ধারণা যে গুরু তাঁর শিষ্যকে ভগবানের দর্শন করিয়ে দেন, তাই ুরুর এত মহিমা।

কিল্তু বেদাস্ত এই তথ্যকে স্বীকার করে না। বেদাত্ত শেখায় যে, বাস্তবে ভগবানকে তো মানুষ পেয়েই আছে কারণ মানব ও ভগবান অভিন্ন। এই ভগবানের সঙ্গে মানুষের পরিচয় করে দেবার কাজটি গুরু করেন, তাই তাঁর এত প্রাধান্য। শাস্ত্রকারেরা দু’রকম পুরুষার্থের বর্ণনা দিয়ে থাকেন।

যেমন-লৌকিক পুরুষার্থ :- আমার যা নেই তার উপলক্ধি করালোর নাম লৌকিক পুরুষার্থ। মনে করুন কারুর বাংলো বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি নেই। সে যদি তার পরিশ্রম দ্বারা সম্পত্তি বানায় ও ক্রমে ক্রমে বাংলো বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি কেনে বা প্রাপু হয়, তাকে বলে লৌকিক পুরুষার্থ।

অলৌকিক পুরুষার্থ :- আমার যা আছে, তার সম্বন্ধে আমাকে সম্যক জ্ঞান করালোর নাম অলৌকিক পুরুষার্থ। লোকিক পুরুষার্থের দ্বারা সংসারের সব জিনিস উপলন্ধ হয় কিষ্তু ভগবানকে পাওয়া যায় না, কারণ ভগবান তো আমার থেকে আলাদা নল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতার ১৮ অধ্যায়ের ৬১ নং ল্লোকে বলছেন- ”

‘হে অর্জুন, ঈশ্বর প্রত্যেক প্রাণীর হৃদয়ে অবস্থান করছেন।” সমস্ত সৃষ্টিতে যুগ যুগ ধরে সনাতনী সদ্গুরুরা বার বার একটইই কথা বলেছেন যে, যে পরমতত্তৃকে আপনারা বাইরে খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তা বস্তুত আপনার ভিতরেই আছেন। তুলসীদাসজী তাই যখনই শ্রীরামের স্মরণ করেন তখনই তিনি অশ্রসজল নয়নে শ্রীহনুমানজীকে তাঁর সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জানান। কারণ সদা অস্তরে অবস্থান করা প্রভুর খোঁজ তো হনুমানজীই দিয়েছিলেন একজন সমর্থ সদ্গুরু হিসেবে।

আপনারা কখনও ভেবে দেখেছেন যে, যে চোখ দিয়ে আমরা সমগ্র বিশ্ধকে দেখছি, সেই চোখ দিয়ে আমরা নিজেকে দেখতে পারি না। নিজেকে দেখার জন্য চোখের তো দরকারই, সাথে দরকার একটি পরিষ্কার আয়না। তেমনি বিশুদ্ধ স্ব-স্বরূপকে না জানলে ঈশ্বরের অনুভবও অসম্ভব। বাইরের সংসার দেখার জন্য যেমন দুটি চোখ দরকার, তেমনি প্রভুদর্শনের জন্য ভেতরের দুটি চোখ দরকার – জ্ঞান এবং বৈরাগ্য। শরীরের দুই চোখে ছানি পড়লে আমরা যেমন সবকিছু ঝাপসা দেখি, তেমনি জ্ঞানরূপী অন্তর্চক্ষুতে ‘

দ্বেষ’ আর বৈরাগ্যরূপী অস্তর্চক্ষুতে ‘রোগের’ ছানি পড়লে আমাদের অন্তর্দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে যায়। পরিণামে আড্দর্শনও হয় না। চোখে ছানি পড়লে তা সারাবার জন্য যেমন ব্যবস্থা আছে, তেমনি এই জান ও বৈরাগ্যের চোখের ছানি সারাবার অমোঘ ঔষধি হলো শ্রীগুরু চরণরজ অর্থাৎ সদ্গুরুর চরণরজ। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, যে ধূলিকণা উড়ে এসে চোখে পড়লে দৃষ্টি রুদ্ধ হয় এবং চোখ বন্ধ করতে বাধ্য হয়, সেই একই ধূলিকণা যদি গুরুর চরণে সম্বন্ধ পায়, তা হলে তা অস্তর্চক্ষুর দৃষ্টি খুলে দেয় এবং স্বরূপের পরিচয় করায়।

শ্রীণুরু চরণ সরোজ রজ নিজমনু মুকুরু সুধারি।
গুরুর চরণের ‘রজ’ নিয়ে বা মনরূপ আয়নাকে পরিক্ষার করার কথা আমরা জানলাম, কিন্তু গুরুর চরণকে পদ্মর সঙ্গে তুলনা কেন ?

চুলসীদাসজী বলছেন যে গুরুর চরণ ‘কমল’ স্বরূপ বা ‘পদ্ম’ স্বরূপ। পদ্ম কেমন, না যার রস আছে, রূপ আছে, গক্ধ আছে, স্পর্শ আছে, শব্দ আছে। যখন বাতাস বয়, তখন পদ্ম দুলতে থাকে আর বাতাসের সাথে মনে হয় যেন কথা বলে। শব্দ আসতে থাকে। পদ্মের রসও আছে। এই জগৎ পঞ্চ-তন্মাত্রে বিভোর হয়ে বিষয়ী হয়ে আছে (রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ ও স্পর্শ)। কিল্টু গুরুর চরণকমল সর্বদই শুভ। এই চরণকমলের রজ মানুষকে বিষয় থেকে দুরে নিয়ে জ্ঞান এবং বৈরাগ্যের সাথে পরিচয় করায় আর অস্তর্মনের চোথের ধুলো পরিষ্কার করে নিজেকে নিজের পরিচয় করায়।

বরনউ রঘুবর বিমল জসু ঃ প্রশ্ন উঠতে পারে যে গোস্বামীজী তে শ্রীহনুমানজীর স্তুতি করার জন্য এই চালীসা রচনা করছেন, তাহলে প্রথম চরণেই কেন রঘুবর-এর বিমল কীর্তি বা রস বর্ণনার কথা বলছেন। আসুন এর কারণটা জেনে নিইঃ-

(১) সমস্ত শীরীরামচরিতমানসে, বিশেষতঃ সুন্দরকাণ্ড মাতা সীতা ও ভগবান রাম শ্রীহনুমানজীকে ‘সুত’ অর্থাৎ পুত্ররূপে ডেকেছেন। এীহনুমানজী তো জনকনন্দিনীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেছেন। সমগ্র রামায়েে শীরামচন্দ্রই শুধু নয়, পরন্তু রাজা দশরথ, লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রম্লকেও রঘুবর বলে উপ্লেখ করা হয়েছে। রঘুকুলের যাঁরা শ্রেষ্ঠ তাঁদের সবাইকে রঘুবর আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

শ্রীহনুমানজী রঘুবর-এর দূত হিসেবেই শুধু নয়, রঘুবংশের সমস্ত কার্যে সেবক হিসেবে সর্বদা যোগদান করেছেন। শ্রীরাম ও জনকন্নন্দিনী সীতা তাঁকে পুত্ররূপে স্বীকার করেছেন। শ্রীহনুমানজী দেবী সীতাকে মা বলে সর্বদা সম্বোধন করেছেন। তাই তিনিও কুলের একজন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হয়ে গেছেন। তিনিও তাই রঘুবর সম্বোধনে আছেন। এমনিতে বাড়ির কোনো সেবক দীর্ঘ দিন পরিবারের সাথে থাকলে, সে সেই পরিবারের একজন সদস্য হয়ে যায়।

(২) প্রভু শ্রীরামের কথা শ্রীহনুমানজীকে সদাই প্রসন্ন করে যেমন শ্রীহনুমানজীর গাথা প্রভু শ্রীরামকে। গোস্বামীজী খুব ভালভাবেই জানেন যে, শ্রীহনুমানজী তাঁর নিজের গুণ-গাথা শোনার জন্য কখনই আসবেন না। আর যাঁর গুণ-গাথা তিনিই যদি রস আস্বাদনের জন্য না আসেন তাহলে এই চালীসার রচনাও সর্বথা বৃথা প্রয়াস হবে। কিল্ত তিনি জানেন প্রভু শ্রীরামচন্দ্রের বিমল কীর্তির গাথা যেখানে হবে, সেখানে তিনি সত্বর পৌঁছে যাবেন। এর অনেক প্রমাণ আমরা শান্তের পেয়েছি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তাঁকে দ্বারকায় ডেকে আনার (মহামতি গরুদ্ডকে দিয়ে) চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। কিস্তু যখন ब্রীকৃষ্ণ বলে পাঠালেন

যে প্রভু শ্রীরাম তাঁকে দ্বারকায় স্মরণ করেছেন, তিনি তাঁর ধ্যান ভঙ্গ করে শ্রীগরুড়ের অনেক আগে দ্বারকায় পৌঁছেছিলেন এবং প্রভু শ্রীরাম ও মাতা সীতার দর্শনের আনন্দ নিয়েছিলেন। শ্রীশ্রীরামচরিতমানসে একটি ঘটনার উল্লেখ আছে যে সমুদ্রতীরে যখন মহামতি জাম্ববান বানর যোদ্ধাদের সাথে (এর মধ্যে বালীপুত্র অঙ্গদ, শ্রীহনুমানজী, নল, নীল ইত্যাদিও আছেন)

সমুদ্র পার হওয়ার প্রসঙ্গে যোজনা করছেন, তখন হনুমানজীর গুণকীর্তন করে তাঁকে সমুদ্র পার হতে বলেছিলেন। কিন্তু শ্রীহনুমানজীর কোনো উৎসাহ দেখা যায়নি কিন্তু যখন জাম্ববান তাঁকে বললেন যে, প্রভু এ্রীরামের এই কাজ আপনাকে করতে হবে এবং একমাত্র আপনিই প্রভুর ইচ্ছা পূরণ করতে সমর্থ, এই কথা শোনা মাত্র তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন এবং দেখতে দেখতে তাঁর বিশাল চেহারা ও কাতিতে সবার চোখ ধাঁধিয়ে গেলো। তিনি একলাফে নিকটবর্তী পাহাড়ে উঠে পড়লেন সমুদ্র পার হবার জন্য।

জো দায়কু ফল চারি ঃ তুলসীদাসজী চালীসার প্রথমে বলছেন যে, রঘুবীরের যশোগান করতে যাচ্ছি যা চার রকমের ফল দেয়। সাধারণতঃ ফলের বর্ণনা যে কোলো স্তোত্র বা স্তুতির শেষে হয় কিত্তু এখানে মঙ্গলাচরণের প্রথম দোহাতেই ফলের বর্ণনা দেখা যাচ্ছে। ভগবানের স্তুতি বা সেবা যোগ্য সময়ে তার ফল প্রদান করে, কিল্তু ভগবানের ভক্তের স্তুতি বা সেবা সঙ্গে সঙ্গে ফল প্রদান করার ক্ষমতা রাখে। শ্রীশ্রীরামচরিতমানসের উত্তরকাঞ্ডের দোঁহা ১২০তে ভক্তপ্রবর কাকভূশুঞ্জিজী খগরাজ গরুড়কে বলছেন :-

‘মেরো মন প্রভু অস বিশ্ধাসা। রাম তে अधिক রাম কে দাসা।।’
অর্থাৎ হে প্রভু, আমার মঢে তো এই বিশ্বাস আছে যে প্রভু শ্রীরামের দাস প্রভু শ্রীরামের চেয়েও বড়।

শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে (৯-৪-৬৩) ভক্তরাজ অম্বরীষকে রক্ষা করার সময় ভগবান ঋষি দুর্বাসাকে পরিক্কার বলেছিলেন, “হে মহামুনি দুর্বাসা, আমি সদাই ভক্তাধীন থাকি, আমি একদমই স্বতন্ত্র নই। ভক্তরা আমার হৃদয় জিতে নেয়। ভক্তরা আমায় প্রেম করে আর আমি তাদের।”

তাই তুলসীদাসজী বলছেন যে, রঘুবরের যশগান্ যিনি করবেন, বিশেষতঃ তাঁর পরমভক্ত হনুমানজীর, তিনি অবশ্যই চার রকনের ফল পাবেন। অনেকট। এই রকম যেমন, যখন বর্ষা আসে তখন গাঁয়ের নদী জলে ভর্তি হয়। এখন তুমি জল ঘড়ায় ভরবে, না লোটায় নেবে, না খালি স্নান করবে এটা তোমার ওপর নির্ভর করবে। পরমাডার বা তাঁর ভক্তের গুণগানের বর্ষা অবশ্যই চার রকমের ফল দেবে।

এখন এটা নেওয়া না নেওয়া তোমার ওপর। চার রকমের যে ফল পাওয়া যাবে তা হলো : অর্থ, ধর্ম, কাম ও মোক্ষ। অর্থ বলতে আমরা যে টাকা-পয়সা বুঝি, স্থূল হিসেবে তা তো মিলবেই কিষ্তু এর সাথে যেটা পাওয়া যাবে তা হলো অমূল্য অর্থাৎ জীবনের অর্থ। শাস্ত্র তথা জীবনের অর্থ তার কাছে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হবে যার পিছন পিছন আসবে জ্ঞন ও বৈরাগ্য। আর অর্থ যদি ধর্মের রাস্তায় অর্জিত হয় তাহলে ধার্মিক হওয়া তো শু সম সম়ের ব্যাপার। কিল্তু ধার্মিক হওয়াই শেষ কথা নয়। বরং আধ্যাছিক পথের এটইই তো প্রথম সোপান।

ধর্মের পথ ধরে যে কর্ম অর্থ যোগায় সেই কর্ম তখন আনন্দদয়ায় হয়। (টাকা-পয়সা) আছে কিলু অর্ধ আহায় যেন বাঁফতে না পারে, ধার্মিক আমি যেন ২র্মান্ধ না ইই; আমার কৃতকর্ম যেন অপরের সুতের কারণ হয়, কর্ম আমি যেন উপুলক ইই, আর চ্থথই মোক্ষ দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়।

কিস্টু আধ্যাফ্মিক মার্গের সত্যিবারের অনুরাগীরা এই চার পদার্থে বা ফলে সধ্ত্ট নয়। তারা এই পাওয়াকে লোকস্লান বলে মরে করে। হনুমান চালীসা পাঠ করে, রঘুবরের ুণ কীর্তন করে, নাম-সংক্তীর্ত করে এই চার পদার্থ পাওয়াতে তারা সন্ত্ট নয়। তারা বরং প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে যে, হে প্রভু, তুমি এই চার ফল ফেরত নাও এবং তার পরিবর্তে এক ফল দাও।

প্রভু তো অস্তর্যমী, তিনি মুচকি হেসে यদি জিজেঞ্সস করেন, এই চারের বদলে কি চাই? ত্থন প্রকৃত ভত্ত প্রভুকে বলেন যে, প্রভু, আপনার গুণগান করেছি তো চার ফল পেয়েছি, কিষ্টু এই চার আপনি নিয়ে নিন আর পরিবর্তে আপনার চরণে অথগ প্রেম দিন। গোস্বামীজী তাঁর লেখা বিনয় পত্রিকায় বরেছেন এে এই চার ফলের यদি কোনো ফল হয়, তবে তা হলো নাম। প্রভুর নামে প্রীডি। সংক্ষিপু কथाয় প্রভুপ্রম।

দোঁহা

বুদ্ধিহীন তনু জানিকে, সুमिরৌ পবনকুমার।
বল বুধ বিদ্যা দেহ মোহি, হরহঁঁ কলেস বিকার।।

সারানুবাদ : নিজেকে বুদ্ধিইীন ভেবে বায়ুপুট্রে স্মরণ করছি। পার্থনা করাছ আমাকে শকি, বুদ্ধি, বিদ্যা দিন আর আমার ক্রেশ এবং বিকার হরণ কु़्न।

ব্যাখ্যা : অত্যস্ত সোজা সাপটা অর্থ। এই দোহায় প্রথনে গোস্বামীজী রামচরিজ্লানসের’ মত নিত্য নতুন বিচারধারার সৃষ্টিকর্তা, অস্ত গ্রণের প্রণেতা আপনার কাছে স্বার্থ নিয়ে এসেছি। আমি অজ্ঞনী, বুদ্ধিইীন, ডইই হে পবন

কুমার, আপনাকে স্মরণ করছি আর প্রার্থনা করছি যে, আপনি আমায় তিনটি জিনিস দিন- বল (শক্তি), বুদ্ধি ও বিদ্যা।” শ্রীহনুমানজী জিজ্ঞেস করছেন, “প্রথম দোহায় তো চার ফল পাওয়ার কথা হলো, কই তখন তো আপনি কিছু দাবি রাখেননি; তবে এথন কেন্ন বল, বুদ্ধি ও বিদ্যা চাইছেন?” গোস্বামীজী তার উত্তরে বলছেন, “তিন বস্তু চাইছি এটা সত্য, কিস্তু পরিবর্তে সতেরো বস্তু আপনি নিয়ে নিন।”

বলছেন, “বল, বুদ্ধি, বিদ্যা দেহ মোহি, হরহু কলেস বিকার।” সতেরো বস্তু আপনাকে দিচ্ছি আর কেবল তিনটি জিনিস আমাকে দিন। তুলনায় আমি দিচ্ছি অনেক বেশি, চাইছি খুব কম।” হনুমানজী তখন বলছেন, “আপনি আমায় স্মরণ করেছেন আর এই স্মরণ করেছেন অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে, অত্যন্ত দীনতার সঙ্গে; আপনার এই “অমি বুদ্ধিহীন” স্বীকার আমার মন ছুঁয়ে গেছে। এখন বলুন আপনি ঠিক কি চাইছেন আর সতেরো বস্তু ছেড়ে দেবার কথা কি বলছেন?”

গোস্বামীজী বলছেন, “সবার প্রথমে আপনি বল বা শক্তি দিন কারণ আমি শননেছি আপনি অতুলিত বল ধাম।” এখানে লক্ষ করার বিষয় হলো যে গোস্বামীজী এই দোঁহায় শ্রীহনুমানজীকে পবনপুত্র বা বায়ুপুত্র বলে সম্বোধন করেছেন। দেবাদিদেব মহাদেবের দিব্যতেজ শ্রীহনুমানজীর মাতা অঞ্জনাতে প্রতিস্থাপিত করার মাধ্যম ছিলেন বায়ুদেব। তাই শ্রীহলুমাজীকে পবনপুত্র নামেও ডাকা হয়। তিনি তাঁর পিতা বায়ুদেবের কাছ থেকে মুখ্যতঃ তিনটি গুণ পেয়েছেন।

প্রথম : বল বা শক্তি, দ্বিতীয় :- প্রাণরক্ষকতা, पৃতীয় ঃ সর্বব্যাপকত্ব। আগেই জানানো হয়েছে যে শ্রীহনুমানজী স্বয়ং প্রাণতত্ত্ব। বায়ুকে ছাড়া জীবন সম্ভব নয়। প্রাণের মূলই হল বায়ু। শ্রীহনুমানজী অনেক ব্যক্তির প্রাণ রক্ষা করেছেন।

যেমন, সুগ্রীব :- বালীর ভয়ে আতঙ্কিত সুগ্গীবকে প্রভু শ্রীরামের সঙ্গে বক্ধুত্ব করিয়ে তার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। পরম শক্তিমান বালিকে যদি প্রভু বধ না করতেন, তবে সুগ্রীবের বাঁচাই মুশকিল হতো।

যেমন, সীতা :- লঙ্কার অশোকবনে জনকনন্দিনী প্রাণত্যাগের জন্য মনস্থির করে ফেলেছিলেন। এই শ্রীহনুমানজীই সমুদ্র লঙ্গন করে সমগ্র লঙ্কায় বোঁজ করে অশোকবনে পোঁছে প্রভু -্রীরামের দেওয়া আংটি দিয়ে তাঁকে আশ্বস্ত করলেন যে, প্রতু শ্রীরাম একমাসের মধ্যে এসে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। এইভাবে উনি মা সীতার প্রাণরক্ষা করলেন।

লক্ষ্মণ : রাম-রাবণ যুদ্ধে মেঘনাদের বাণে মুর্ছিত লক্ষ্মণকে একরাত্রির মধ্যে হিমালয় থেকে সঞ্জীবনী বুটি এনে ডাঁর প্রাগ রক্ষা করেছিলেন।

বায়ুটেরের মতো শ্রীহনুমানজীভ সর্বব্যাপী। এই সৃষ্টির যে কোনো স্থানে যে কোনো সময় প্রকট হয়ে ঢাঁর উপস্থিতির অনুভব তিনি করাতে পারেন। শ্রীহনুমানজীর ব্যাপকত্ব নীমাহীন। আমরা জানি ভে বায়ু পাঁচ প্রকার। মানুযের দেহে অবস্থিত পঞ্চপ্রাণ যথা প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান ৫ সমান-এর সঞ্চালক হলেন শ্রীহনুমানজী। এই পঞ্চপ্রাণের শরীরের অবস্থান এবং পঞ্চুখী হনুমানজীর মৃখের দিশা পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্বন্ধয়ক্ত। যেমন-

ক্রম প্রাণের প্রকার মনুষ্যদেহে স্থান শ্রীহনুমানজীর মুখ মুখের দিক/দিশা
প্রাণ रुদয় কপি পূর্ব
অপান गुर्य বরাহ উন্তর
সমান नाভि নৃসিংহ দক্ষিণ
8 উদান কঠ্ঠ হয়গ্রীব উর্ধ্ব
ব্যান সমগ্র শরীর গরুড় পশ্চিম

বলা হয় যে, গোস্বামীজী এই কারণে শ্রীহনুমানজীর চালীসায় পাঁচবার ‘জয়’ শব্দ প্রয়োগ করেছেন। কোথায় কোথায়-

জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর। জয় কপীশ তিহু লোক উজাগর।। (টোপাঈ ১) জজ জৈ জৈ হনুমান গোসাঈ। কৃপা করহু গুরুদেব কী নাঈ।। (চৌপাঈ ৩৭)

বল বুধি বিদ্যা দেতু মোহি :- গোস্বামীজী প্রথমেই শক্তি বা বল চাইলেন। এই চাওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি মানুষকে শেখালেন যে, হনুমানজীর কাছে যদি চাইতেই হয় তবে টাকা, পয়সা না চেয়ে শক্তি চান, কেনলা আআ্মা বলহীনে মেলে না। ‘মুক্তক উপনিষদ’ এ কথা ঘোষণা করেছে যে, এই আত্যা বলহীন শরীরকে প্রাপু হয় না। এখানে বল এর অর্থ পহেলবান্ নয়; একজন সাধকের শারীরিক দিক দিয়ে সুস্থ থাকা জরুরী কারণ সুস্থ শরীরে মনও বলবান হয়।

কিস্তু শাস্ত্রকারগণ ও মুনি-ঝষিরা এর আরও অনেক গভীর অর্থ খুঁজে বার করেছেন যা প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় সংক্ষিপ্ত ভাবে উঙ্লেখ করছি। যেমন সাধুর বল হলো সাধুতা। যাঁরা যোগী তাঁদের বল হলো যম-নিয়ম। এক আদর্শ নারীর বল হলো লজ্জা। বুদ্ধিমান-এর বল হলো তেজস্বিতা আর বিচারের শুদ্ধতা। ভক্তর বল হলো ভরসা। ख্ঞানীর বল হলো সমদর্শন বা সম্যক দর্শন।

ত্যাগীর বল হলো অস্তঃকরণে বৈরাগ্য। এখন বোঝা যাচ্ছে গোস্বামীজী কেন প্রথমেই বল চাইলেন কারণ তিনি বৈরাগী, যোগী, আবার জ্ঞানীও। তিনি ভক্ত, তিনি সদ্গুরু, তিনি সন্ত। গোস্বামীজী স্বয়ং বিশ্বাস আর শ্রদ্ধার ঘনীভূত रूপ।

শ্রীহনুমানজী তাঁর এই প্রার্থনা স্বীকার করে বলছেন, “ঠিক আছে চল বল দিয়া” (ঠিক আছে তোমায় কাখ্থিত শক্তি দিলাম)। তুলসীদাসজী তখন বললেন, “আমায় আর একটি বস্ত দিন। আপনি বুদ্ধিমান, তাই বুদ্ধি দিন।” শ্রীহনুমানজী তখন জিজ্ঞেস করলেন, “বল চেয়েছো, দিয়েছি। আবার বুদ্ধি চাইছ কেন ?”

তুলসীদাসজীর উত্তর মনকে ছুঁয়ে যাবার মতো। তিনি বলছেন, “আমি বুদ্ধি চাইছি কারণ বুদ্ধি শক্তিকে নিয়স্ত্রণ না করলে তা কখনও সৃজনশীল হয় না। আমি সমাজকে সৃজন করার জন্য যে বল, বুদ্ধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তাকে চাই।” বুদ্ধির কয়েকটি লক্ষণ আছে –

  • সমস্যা সমাধানের শক্তি;
  • বিপরীত অবস্থাকে অনুকূলে আনার শক্তি;
  • নির্ণায়ক শক্তি;
  • দূরদর্শিতা।

যদি শক্তি থাকে অথচ বুদ্ধি না থাকে পরিণামে হিংসা বাড়বে। তুলসীদাসজী সমগ্র মানব সমাজকে মাথায় রেখে ভেবেচিত্তে তাঁর প্রার্থনা রাখছেন।

কিন্তু এরপর বিদ্যা চাইলেন কেন ? কারণ শক্তি ও বুদ্ধি একত্রে মানুষকে উদ্ধত করতে পারে। এই দুই একত্রে বহ্ধনেরও কারণ হয়। শাস্ত্রজ্ঞান আর অনুভব মানুষকে বিচারশীল করে। বিদ্যাবান মানুষ তার নম্রতা ও নিঃস্পৃহতার কারণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। গোস্বামীজী শ্রীহনুমানজীর ভক্ত দের জন্য এই সব প্রার্থনা করেছেন যাতে তাঁরা সদাই সদ্গুণের অধিকারী হন।

হরল্ছ কলেস বিকার :- শ্রীহনুমানজী গোস্বামীজীর প্রার্থনা শুনে তাঁকে একে একে বল, বুদ্ধি ও বিদ্যা প্রদান করলেন। তারপর বললেন, “গোস্বামীজী আপনি বলছিলেন, যে সতেরো বস্তু আমায় দেবেন, ঢো দিন।” গোস্বামীজী বললেন, “এই সতেরো বস্তু এত গভীর ভাবে আমার মধ্যে ঢুকে গেছে যে আমি তো দিতে পারবো না, আপনি বরং তা ছিনিয়ে নিন।” বললেন, “হরएँ কলেল বিকার।”

ঋষি পতঞ্জলি চাঁর যোগসূত্রে পাঁচ রকমের ক্লেশ-এর কথা বলেছেন। সেঙুলো হলো অবিদ্যা-অস্মিতা-রাগ-দ্বেষ ও অভিনিবেশ। এই প্রতিটি বিষয় আত্যন্ত গভীর ও প্রভাবশালী। এ এক বিস্তৃত আলোচনার ক্ষেত্র। কিন্তু অত্যন্ত সংক্ষিপু ভাবে বলতে গেলে বলতে হয় :-

১. অবিদ্যা :- পবিত্রতে অপবিত্রর ভাব দেখা আর অপবিত্রতে পবিত্রর ভাব দেখা; অনাআ্মায় আত্মার আর আত্যায় অনাত্মার ভাব দেখা; বস্তুর প্রকৃতরূপকে না বুঝতে পারা, অসাধুততত সাধুতাকে দেখা বা সাধুতাতে অসাধুতাকে দেখা।

२. অস্মিতা :- একটা উদাহরণে যেমন তুলসীদাসজী বলছেন, আমি ব্রাহ্মণের ছেলে, আমি রামচরিত্মানস লিখেছি, আমি বড় সাধু-সন্ত, আমার প্রভু রামের দর্শন হয়েছে, এ সমস্ত কিছু আমার মনকে যদি প্রভাবিত করে তো আপনি সেই অস্মিতা হরণ করুন। ।যেমন অস্মিতার কারণে মানুষ নিজেকে ইন্দিয়, মন আর বুদ্ধির দাস ভাবে কিল্তু প্রকৃতপক্ষে জীবাতা বা আমি এই সবের সঙ্গে সম্পর্ক রহিত।

৩. রাগ :- ইন্দ্রিয়, মন আর শরীরে আত্মাবাব জাগ্রত হলে যে বস্তু, ব্যক্তি বা বিষয়ে সুখ অনুভব হয় বা তাঁকে পাওয়ার ইচ্ছা জাগে তাকে রাগ বলে। যতক্ষণ ইপ্নিত বস্তুর প্রাপ্তি না হয় ততক্ষণ দুঃখের অনুভব হয়।

8. দ্বেষ :- ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর অপ্রাপ্তিতে যে দুঃখ অনুভব হয় সেই দুঃখের কারণগুলির প্রতি তখন দ্বেষ জন্মে, তা সে বস্তু হোক বা ব্যক্তি। তখন ঘৃণা, তিরস্কার বা ক্রোধের আকারে সেই দ্বেষের বহিঃপ্রকাশ হয়।

এই রাগ ও দ্বেষ দুটি কঠিন রোগ এবং এই রোগ সারানো খুব মুস্কিল। কিস্তু জ্ঞান ও গুণের সাগর শ্রীহনুমানজীর কৃপায় যখন মানুষের নিজ শুদ্ধ-স্বরূপের জ্ঞান হয় তখন লে বোঝে যে আসলে এই সুখ আর দুঃখের আগমন তার নিজ আত্ম-স্বরূপের সঙ্গে সম্পর্কহীন। শ্রীহনুমানজীর কৃপায় তার তথন রাগ ও দ্বেষজনিত কারণকে অনিত্য মনে হয় এবং বৈরাগ্যভাবের অনুভবে এই দুটি সম্পর্কে উদাসীন হয়ে ওঠে।

৫. অভিনিবেশ :- মৃত্যুভয়ের আর এক নাম অভিনিবেশ। মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া কঠিন। মৃত্যভয় কেন লাগে-

  • পুরনো কর্মের কথা মনে পড়ায়,
  • ভবিষ্যতের চিঙ্তা ভে এই সবের কি হবে ?
  • এতদিনের এই প্রিয় শরীর যাকে অত্যন্ত যত্নে লালন-পালন করা হয়েছে, তাকে ছেড়ে যেতে হবে চার ভয়,
  • মৃত্যুযস্ত্রণার ভয়।

শ্রীহনুমানজীর কৃপায় যখন সাত্বিক বুদ্ধির উদয় হবে, তখন দেহের নশ্বরতা ও আত্মার অমরত্বের জ্ঞন হবে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যু ভয় চলে যাবে।

বিকার :- সর্বমোট বার রকম্মের বিকার আছে। ছয় রকমের বিকার শরীরের, আর ছয় রকম বিকার মনের।

শরীরের বিকার :- অস্তি (নিজ অস্তিত্বের গর্ব); জন্ম, বৃদ্ধি, পরিবর্তন, ক্ষয় ও মৃত্যু। তুলসীদাসজী প্রার্থনা করছেন এই ছয় বিকার হরণ করলন। আমার জন্ম, বৃদ্ধি, পরিবর্তন, ক্ষয় ও মৃত্যুকে হরণ করুন।

শরীরের পর মনের ছয় বিকার :- কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। এই বিষয়ে আমাদের সবারই কিছু কিছু ধারণা আছে। অত্যন্ত সংক্ষেপে বলতে গেলে :

১. কাম :- সঙ্গ থেকে কাম-এর জন্ম। আসক্তি কাম বাড়ায়। ভগবান কপিল তাঁর মা দেবহুতিকে বলেছিলেন, সর্বদা সাধুসঙ্গ করা বা কখনই অসাধু সঙ্গ না করা কাম নাশের উপায়। সাধু তিনিই হবেন যিনি আসক্তিকে জয় করেছেন। কাম এক ধরনের মানসিক বিকার।

  • ক্রোধ :- কামনার বাধা হলেই ক্রোধ।
  • লোভ :- ‘লাভ’ এর ইচ্ছাই হল লোভ। বেশি লাভের ইচ্ছার কথাই বলা হচ্ছে।
  • মোহ :- সমস্ত মানসিক রোগের মূলই হলো মোহ।
  • মদ :- প্রাপু বস্তু, ব্যক্তি বা বিশেষ কারণের জন্য গর্ব অনুভব করা।
  • মাৎসর্য :- অপরের ভাল উন্নতি দেখলে মনের জ্বলনকে বলে মাৎসর্য।

শ্রীহনুমান চালীসা निয়মিত পাঠ করা এক ভক্ত শ্রীহনুমানজীর কাছে তাঁর আর্তি এইভাবে রাখছেন যা অত্যন্ত ভাবগ্রাহী বলে এখানে উল্লেখ করছি। ভভক্ত প্রার্থনা করছেনঃ “হে শ্রীহনুমানজী, আমায় তিন চাকার সইকেল দিন যা চালানো খুব সহজ। বৃদ্ধ, বিকলাঙ্গ এমনকি বাচ্চারও চালাতে পারে। এই তিন চাকা হল ‘বল, বুদ্ধি ও বিদ্যা।’ আমার গতি চাই না, চাই শরণাগতি। আমি বুদ্ধিহীন বিকলাঙ্গ, বলহীন বিকলাঙ্গ এবং বিদ্যাহীন বিকলাঙ্গ।

আপনি বল, বুদ্ধি ও বিদ্যা দিন আর ক্লেশ ও বিকার হরণ করুন। হে হনুমান, আমার তো কোনো গতি নেই। আপনি কর্মের দেবতা, জ্ঞানের দেবতা। আপনি আমায় কর্ম করাতে চান তো আমার গতিইীনতার কারণ এই সতেরো ক্লেশ ও বিকার হরণ করুন্ন আর ধীরে ধীরে পোঁছনোর জন্য বা শরণাগতির জন্য ভিন্য চাকার সাইকেল (বল, বিদ্যা, বুদ্ধি) দিন।”

দোঁহা

পবनऊनয় সংকট হরন, মঙ্গল মূরতি রূপ।
রাম লখন সীতা সহिত, হৃদয় বসহ সুর ভূপ।।

সারানুবাদ : হে পবনপুত্র! আপনি ক্ষ বা বিপদ হরণকারী এবং মঙ্গলের মুর্তিময় স্বক্রপ। হে দেবাদিদেব! ঐরীাম, লক্ষণ ও সীতার সাথে আপনি আমার হৃদয়ে অবস্থান বা বাস করুল।

ব্যাখ্যা : গোস্বামী তুলসীদাসজী হনুমান চালীসার শেষে ঢাঁর হৃদয়ের অস্তঃস্থল থেকে শ্রীহনুমানজীর বাছে সকাতর প্রার্থনা নিবেদন করছেন। শ্রীহনুমানজীর সহিত তাঁর হৃদয়ে সদা অবস্থান করার প্রার্থনা জানাচ্ছেন। আর এই দোঁহাতে তিনি শ্রীহনুমানজীর কছে প্রার্থনা করছেন যে, তিনি যেন প্রভু ब্রীরাম, ভাই লক্ষণ, মাতা সীতাকে নিয়ে তাঁর হৃদয়ে সদা অবস্থান করেন। এই দোঁহাতে তিনি শীরুনুমানজীকে একবার সম্বোধন করলেন ‘পবনপুত্র’ বলে এবং অন্যবার বললেন ‘দেবাধিদেব’।

বায়ুপুত্র হনুমান যে সর্বসঙ্কটহারী তার পরিচয় আমরা ‘চালীসা’য় বহুবার পেয়েছি। ‘সংকট মোচন হনুমানাষ্টক-‘এ তুলসীদাসজী বলছেন, “…কাজ্জ কিয়ে বড় দেবন কে ছুম…”। অর্থাৎ শীরুহুমানজ্জী দেবতাদের অনেক কাজ স্বয়ং করে দিয়েছেন বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছেন। তাই দেছে তাঁকে ‘দেবাধিদেব’ বলা সঠিক হয়েছে। শীহনুমানজী যখন যে কাজই করুন না কেন, তা সর্বদা তাঁর ভক্তের কল্যাণকারী হয় বা বিশ্বের কল্যাণসূচক হয়ে থাকে। তাই মঙ্গলের সাক্ষাৎ স্বরূপ।

একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হন শ্রীহনুমানজীর উপস্থিতি বা তাঁর সাক্ষনৎ সর্বদাই সাক্ষাৎকারীকে ধন্যাবাদের অনুভব করায়। যেমন শ্রীহনুমানজীর লঙ্কাপ্রবেশের সময় ডাঁর মুষ্টাঘাতে মৃতপ্রায় লঙ্কিনী ডাঁর পরিচয় পেয়ে গদগদ কঠ্ঠে বলেছিলেন, “হে তাত! আমার অনেক পূণ্যের কারণে আজ শ্রীরানের দূত আপনাকে আমি চাক্ষুষ দর্শন করলাম”। (রা:চ:মা:)

একই ভাবে শ্রীহনুমানজীর প্রথম দর্শনে পরিচয় পেয়ে লঙ্কাধিপতি রাবণের ভাই বিভীষণও আবেগরুদ্ধ কঠ্ঠে বলে উঠেছিলেন, “যখন শ্রীরামচন্দ্রের কৃপা হল তখনই আপনি আমাকে কৃপাপূর্বক দর্শন দিলেন।” (রা:চ:মা:)
গোস্বামীজী তাই ‘চালীসা’র শেষে শ্রীহনুমানজীর কাছে প্রার্থনা করছেন যে প্রভু শ্রীরাম, লঙ্ষ্ণণ এবং সীতার সঙ্গে আপনি সদা আমার হৃদয়ে অবস্থান করুন্ন।

আসুন, ‘হনুমান চালীসা’ পাঠের শেষে আমরাও শ্রীহনুমানজীর পরমভক্ত এবং প্রখ্যাত কথাকারদের দ্বারা করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ সেই প্রার্থনা করি :”হে হনুমানজী! এই গ্রন্থের পাঠকদের জিজ্ঞাসু হৃদয়ে আপনি সর্বদা প্রভু শ্রীরাম, লক্ষ্মণ এবং মাতা সীতার সঙ্গে বিরাজ করুন্ন। আমরা সবাই আপনার বল, বুদ্ধি, বিদ্যা, শৌর্য্য, ধৈর্য এবং পরাক্রম থেকে যেন সর্বদা প্রেরণা পাই। আপনিই প্রভু শ্রীরামের কাজে আমাদের মার্গদর্শন করান। আপনার কাছে থাকা ‘রাম রসায়ন’ পেয়ে আমরা যেন অনস্ত শ্রদ্ধাবান ইই। আশীর্বাদ করুন্ন আমাদের আধ্যাছ্মিক যাত্রা যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় এবং কৃপালু প্রভু শ্রীরানের চরণ কমলে সদা স্থান হয়।”

দেবাধিদেব শ্রীহনুমান ও সাধারণ হনুমান

ভূমিকা : হিসেবে হিল্দুদের নিকট পুজনীয়। রামায়ণের মূল চরিত্র রাম যাকে হিল্দুরা ভগবান বিষুঞর অবতার হিসেবে মলে করে চাঁর অনুগত চরিত্র হিসেলে পাওয়া যায় এই হনুমানকে। তিনি বায়ু দেবতার পুত্র। হিন্দুদের কাছে হনুমান রামভ্ট হিসেবে পরিচিত। রামায়ণের কাহিনী অনুসারে হনুমান সীতাকে উদ্ধারের জন্য লঙ্কায় অভিযান চালান এবং রামায়ণের বিভিন চরিত্রকে কঠিন সষ্চট হচে উদ্ধারে সাহায্য করেন।

দেবাধিদেব শ্রীহনুমান ও সাধারণ হনুমান ভূমिका :

হনুমান হলেন হিন্দুধর্মের একজন দেবতা যিনি রামের একনিষ্ঠ ভক্ত। পুরাণে হনুমানকে বিশেষ স্থান দেওয়া হয়েছে। রামায়ণ বর্ণিত হনুমান পবননন্দন হিসেবে হিন্দুদের নিকট পুজনীয়। রামায়ণের মূল চরিত্র রাম যাকে হিন্দুরা ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসেবে মনে করে তাঁর অনুগত চরিত্র হিসেবে পাওয়া যায় এই হনুমানকে। তিনি বায়ু দেবতার পুত্র। হিন্দুদের কাছে হনুমান রামভক্ত হিসেবে পরিচিত। রামায়ণের কাহিনী অনুসারে হনুমান সীতাকে উদ্ধারের জন্য লঙ্কায় অভিযান চালান এবং রামায়নের বিভিন্ন চরিত্রকে কঠিন সঙ্কট হতে উদ্ধারে সাহায্য করেন। সংস্ষিপু পরিচয় :

সংক্ষিপু পরিচয় :

উল্লেখ — রামায়ণে অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র
জन्म — চৈত্র মাসের শক্ল একাদশী মঘা নক্ষত্র
মাতা ও পिতা — অঞ্জনা এবং রাজা কেশরী, পবনদেব ও দেবাদিদেব শিব
भूত্র — মৎসরাজা বা মকরধ্বজ (প্রসঙ্গ অহিরাবণ)
অস্ত্র — মুষ্টি, গদা, পরশু, চক্র, ঢাল, খণ্ডা (তরোয়াল) কাতার
বাহন — নেই
নামমাহাছ্ম — সঙ্কটমোচন, অণুভ শক্তির বিনাশ, প্রভু শ্রীরামের কৃপালাভ
মন্ত্র — হং হনুমতে রুদ্রাত্মকায় ছংং ফট্ হনুমতে নমঃ
উৎসব — হনুমান জয়স্তী
মন্দির —

  • তুলসীদাসজীর প্রতিষ্ঠিত সঙ্কটদোচন শ্রীহনুমানজীর মন্দির, বারাণসী,
  • সঙ্কটমোচন হনুমান মন্দির, ফিলাউর, পাঞ্জাব,
  • চিত্রকূট মন্দির, মধ্য ভারত,
  • যখু মন্দির, হিমাচলপ্রদেশ,
  • শ্রীলঙ্কা ও
  • দেশবিদেশব্যাপী অসংখ্য মন্দির

মূর্তি

  • প্রাচীনতম : ৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে খাজুরহে পাওয়া গাহিলের পুত্র গোলকের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত
  • 8১ মি. উচচু মূর্তি, ইয়েরাভরম, অন্ধ্রপ্রদেশে বীর হনুমান মূর্তি,
  • পুরন্দর দুর্গ, বালী, ইন্দোনেশিয়ার মূর্তি,
  • তামিলনাড়ুতে একাদশ শতাব্দীতে চোল বংশ প্রতিষ্ঠিত হনুমান মূর্তি ও
  • দেশবিদেশেব্যাপী অংসখ্য মৃর্তি

হনুমান নামের উৎস ও বিভিল্ন নাম :

হনুমান নামটি এসেছে হনু (“চোয়াল”) এবং মান (“বিশিষ্ট” বা “কদাকার”) শব্দদ্বয় থেকে। অর্থাৎ “হনুমান” শব্দার্থ “কদাকার চোয়ালবিশিষ্ট”। অপর একটি সূত্র বলে হনুমান নামটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ হন (“হত্যা”) এবং মানা (“গর্ব”) থেকে। অর্থাৎ হনুমান অর্থ “যাঁর গর্ব হত হয়েছে”। কিছু জৈন গ্রন্থ থেকে জানা যায় হনুমান তাঁর উৈশব ‘হনুরাহা’তে কাটিয়েছেন এবং তাই তাঁর নাম হনুমান।

অপর একটি তথ্যানুসারে, “হনুমান” নামটি প্রাক-দ্রাবিড়ীয় শব্দ (যা পুরুষ বানরের জন্য ব্যবহৃত) এনা-মান্দি থেকে এসেছে, যা পরবর্তীতে সংস্কৃতিতে “হনুমান” হয়। “হনুমান” শব্দের ভাষাগত পার্থক্যর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে হনুমাত, অনুমান (তামিল), অনোমান (ইন্দোনেশীয়), আন্দামান, (মালয়) এবং হনলামান (লাও)। এছাড়া আরও রয়েছে:

  • অঞ্জন্যা, হনুমাস্তা,
  • অঞ্জন্যা, অঞ্জনিপুত্র বা অঞ্জনেয়ুডু বা হনুমাষ্ঠুডু (তেলেগু), যার অর্থ “অঞ্জনার পুত্র”
  • অঞ্জনেয়ার, গ্রামীণ তামিলীয়রা ব্যবহার করে।
  • কেশরী নন্দন (“কেশরী”পুত্র)
  • মরুতি (“মরুত পুত্র”) বা পবনপুত্র (“পবনপুত্র”) ; এই নামগুলোর উদ্ভব ঘটেছে বায়ুর বিভিন্ন নাম থেকে, যিনি অঞ্জনার গর্ভ থেকে হনুমানকে বহন করেন।
  • বজরং বলী, “একক শক্তিশালী (বালী), যার বভ্রর ন্যায় পা রয়েছে ; গ্রামীণ উত্তর ভারতে এই নাম ব্যবহৃত হয়। বজরং বলী বলতে আরো বোবানো হয় একক শক্তিশালী বালী যার শরীরের রঙ বজ্রের ন্যায়।
  • সং কেরা পেমুজা দিওয়া রামা, হনুমান, ইন্দোনেশীয় “”রাম-এর বলশালী ভক্ত, হনুমান”

মহাভারতে হনুমান :

মহাবীর হনুমান ‘রামায়ণ’-এর চরিত্র। তিনি অমর। তাই পরবর্তী মহাকাব্য ‘মহাভারত’-এও তাঁর সাবলীল উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এই মহাকাব্যে তিনি কেমন যেন এক ধীর-শান্ত ব্যক্তিত্ব। ঢাঁর বীরভাব এখানেও বজায় রয়েছে বটে। কিত্তু তার উপরে প্রলেপ পড়েছে জ্ঞানের, অভিজ্ঞতার।

হনুমান এবং ভীম দু’জনেই পবনপুত্র। সেদিক থেকে দেখলে, তাঁরা ভ্রাতা। পাগুবদের অজ্ঞাতবাসের সময়ে হনুমান এক অসুস্থ এবং বৃদ্ধ বানরের বেশে ভীমকে দেখা দেন। ভীম ছিলেন অসষ্ভব আত্মগর্বী। তাঁকে শিক্ষা দেওয়াই ছিল বজরং বলীর উদ্দেশ্য। ভীমের পথ রুদ্ধ করে অসুস্থ বৃদ্ধের ছদ্মবেশে হনুমান শুয়ে ছিলেন। ভীম তাঁকে অতিক্রম করতে চাইলে তিনি ভীমকে বলেন তাঁর লেজটি সরিয়ে চলে যেতে। ভীম বহ চেষ্টাতেও সেই লেজ সরাতে পারেননি। শেষে তিনি অনুভব করেন, এই ব্যক্তি কোনো সাধারণ বানর নন। তিনি হনুমানের শরণ নেন।

হনুমানের সঙ্গে অর্জুনেরও দ্বৈরথ ঘটেছিল। সেতুবঙ্ধ রামেশ্বরমে অবস্থানকালে অর্জুন এক ক্ষুদ্র বানরের সম্মুখীন হন। অর্জুন সেই বানরের সামনে গর্ব ভরে বলেন, বানরদের সাহায্য না নিয়ে রামচন্দ্র একাই সেই সমুদ্র-সেতু নির্মাণ করতে পারতেন। তির যোজনা করেই তো সেটা করা সম্ভব ছিল। ক্ষুদ্র বানর অর্জুনকে আহ্বান জানায় ওই কাজ করে দেখাতে। অর্জুন ব্যর্থ হলে ক্ষুদ্র বানরের ছদ্মবেশ ত্যাগ করে হনুমান প্রকট হন। অর্জুন তাঁর শরণ নিলে, তিনি অর্জুনের রথশীর্ষে অধিষ্ঠান করবেন বলে বর দেন। অর্জুনের রথের উপরে তাই ‘কপিধ্বজ’ শোভা পায়।

মাত্র চারজন ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে ভগবদ্গীতা তনেছিলেন এবং বিশ্বরূপ দর্শন করেছিলেন। এঁরা হলেন- অর্জুন, সঞ্জয়, ঘটোৎকচ এবং

বর্বরিক (ঘটোৎকচের পুত্র)। কিত্তু একথা মনে রাখতে হবে, ধ্বজ হিসেবে রথশীর্ষে অবস্থানের কারণে হনুমানও ছিলেন সেই তালিকায়। अन्गणम कीर्जि :

(১) পধ্চমুখী রূপ ধারণ : রাবণের ভাই মহিরাবণ ও অহিরাবণ যখন রাম ও লস্ষ্মণকে পাতালে বন্দী করে রাখে, তখন হনুমান পধ্চমুখী রূপ ধারণ করে পাঁচদিকে জ্বলত্ত পাঁচটি প্রদীপকে একই সঙ্গে নিভিয়ে দুই রাক্ষসকে হত্যা করে রাম ও লস্ষণকে উদ্ধার করেন।

(২) সাহিত্য কীর্তি : কথিত আছে, রামের রাবণ জয়ের পর হনুমান হিমালয়ে বসে শ্রীরামের সমস্ত কীর্তি চাঁর নখ দিয়ে লিখে ‘হনুমৎ রামায়ণ’ নামে এক সাহিত্য রচনা করেন। পরে মহর্ষি বাল্মীকি সেই রচনা দেখে অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে পড়েন। হনুমান এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন যে ‘হনুমৎ রামায়ণ’ এত উৎকৃষ্ট রচনা যে তার কাছে বহ পরিশ্রমে লেখা তাঁর রামায়ণ কিছুই নয়।

এই শনে হনুমান ‘হনুমৎ রামায়ণ’ পরিত্যাগ করেন। এতে বাল্মীকি লজ্জিত হয়ে বলেন যে হনুমানের যশোগান যা তাঁর রামায়নে উনোক্ত তা গাইবার জন্য ঠাঁকে আরও একবার জন্ম গ্রহণ করতে হবে। মনে করা হয় যে মহর্ষি বাশ্মীকি পরবর্তী জন্মে গোস্বামী ঢুলসীদাসজী রূপে বিখ্যাত হন।

বলা হয় ‘হনুমৎ রামায়ণ’-এর একটি অংশ মহাকবি কালিদাসের সময়ে নদীীীরে পাওয়া যায় যা পেয়ে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন এবং বিলুপ্ত হরফে লেখা অংশটিরি পাঠোদ্ধার করেন।

সাধারণ হনুমান :

সাধারণ হনুমান যা আমরা সচরাচর দেখতে পাই সেগুলির তিনটি প্রজাতি পাওয়া যায় :-

উত্তুরে হনুমান বা সাধারণ হনুমান বা ধূসর হনুমান বা মুখপোড়া হনুমানের বৈজ্ঞানিক নাম Semnopithecus entellus । এদের দেহের রং ফ্যাকাশে-কমলা এবং নিচের দিকে কিছুটা হালকা। মাটিতে থাকা অবস্থায় এরা সাধারণত লেজ বাঁকিয়ে শরীরের উপর দিকে রাখে। মাথাসহ দেহের দৈর্ঘ্য ৫১-১০৮ সেমি এবং লেজ ৭২-১০৯ সেমি লম্বা হয়। পুরুষ ও স্ত্রী হনুমানের ওজন যথাক্রুমে ৯-২১ কেজি ও ৮-১৮ কেজি হয়ে থাকে। একটি দলে ৮ থেকে ২৫টির মতো সদস্য দেখা যায়।

চশমা পরা হনুমান বা কালো হনুমান বা কালা হনুমানের বৈজ্ঞানিক নাম Trachypithecus phayrei । এদের পিঠ ও লেজ ধূসর-কালো কিং্বা গাঢ় বাদামি রডের এবং নিচের দিকটা সাদাটে-ধূসর রঙের হয়। এদের চোখ ও মুখ ঘিরে সাদা বলয় রয়েছে। পুরুষ ও স্ত্রীর দেহের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৫০-৫৫ সেমি, ও 8৫-৫৩ সেমি এবং ওজন যথাক্রমে ৭-৯ কেজি ও ৮-১৮ কেজি হয়ে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রীর লেজের দৈর্ঘ্য গড়ে ৬৫-৮৬ সেমি হয়।

মুখপোড়া হনুমান বা লালচে হনুমান বা লাল হনুমানের বৈজ্ঞানিক নাম Trachypithecus pileatus। কপালে পিছন ফেরানো, সোজা, লম্বা, মোটা, টুপির মতো একগুচ্চ চুল থাকার কারণে এরা টুপিওয়ালা হনুমান নামেও পরিচিত। এদের পিঠ ধূসর থেকে গাঢ়-ধূসর রঙের, নিচের দিক ও দাড়ি বাদামি-হলুদ থেকে কমলা-লাল রঙের এবং লেজের মাঝ থেকে শেষ প্রাস্ত পর্যণ্ত ক্রমাব্বয়ে গাঢ় রঙের হয়। পুরুষ ও স্ত্রী হনুমানের দেহের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৬৮-৭০ সেমি ও ৫৯-৬৭ সেমি, লেজ যথাক্রনে ৯৪-১০৪ সেমি ও ৭৮-৯০ সেমি এবং ওজন যথাক্রনে ১১-১৪ কেজি ও ৯-১১ কেজি হতে দেখা যায়। একটি দলে ৩-১৫টির মতো সদস্য থাকে।

Leave a Comment