Devotees around the world recite the Hanuman Chalisa Lyrics with deep reverence.
Hanuman Chalisa Chaupai 2 in Bengali with Meaning & Analysis
রামদূত অতুলিত বলধামা।
অঞ্জनि পুত্র পবনসুত नমা।।
সারানুবাদ : শ্রীরামচক্রের দূত, যিনি অতুলনীয় শক্তির ভাণ্ডার এবং অঞ্জনির পুত্র ও বায়ুদেবের পুত্র নামে বিখ্যাত।।
ব্যাখ্যা : রামদূত : শাস্ত্রকার তথা কোনো কোনো কথাকারের মতে দূত তিন রকমের হয়-
- রাজদূত
- রামদূত
- রাহদূত
লক্ষ্য করুন রামদূতকে মাঝখানে রাখা হয়েছে। রাহদূত অর্থে তিনি স্বয়ংকে প্রায়োজিত করেন অপরকে পথ দেখানোর কাজে। এরা সব্ত্ব প্রধান হয়ে থাকেন এবং অহংকার ও ক্রোধ রহিত হন। রাজদুতে রজো ও তমোগুণের লক্ষণ বিদ্যমান। তমোগুণ কম আর রজোগুণ বেশি। সাম-দাম-দগ-ভেদের আশ্রয় এদের নিতে হয় মালিকের বার্তা পৌছনোর জন্য। কিস্তু রামদূত ত্রিওুণাতীত না সত্ত্ব, না রজ, না তম।
আর শ্রীহনুমানজীকে দেখুন তিনি গুণাতীত। একবার প্রভু শ্রীরাম শ্রীহনুমানজীকে প্রশ্ন করে বসলেন, “হনুমান, তোমার ও আমার মধ্যে কিসের সম্বন্ধ ?” তো শ্রীহনুমানজীর উত্তর, “यদি দেহবুদ্ধির কথা বলেন তাহলে আমি আপনার দাস, আর যদি অন্তঃদৃষ্টি থেকে দেখি তাহলে আমি আপনার ভক্ত। কিক্তু যদি আত্মদৃষ্টি থেকে বিচার করি তাহলে আপনিও যা আমিও তা। আমার আপনার মধ্যে কোন ত্যাত নেই।” এ রকম উত্তর একমাত্র রামদূতই দিতে পারেন। ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে অবশ্য দূতের ১৯টি লক্ষণ থাকার কথা বলা হয়েছে।
- মেধাবী,
- বাক্পটু,
- প্রাজ্ঞ,
- পরচিত্তপলক্ষক অর্থাৎ অন্যের চিতের গতিবিধিকে মুহূর্তে বুকে নেওয়া,
- ধীর,
- যথৌক্তবাদী অর্থাৎ যেটুকু বলার শধু সেটুকুই বলা,
- গুণী,
- ভক্তঃ নিজের স্বামীর প্রতি ভক্তি সমর্পিত,
- পবিত্র,
- দক্ষ,
- বিচক্ষণ,
- সহিষ্ণু,
- বিবসরহীন,
- পবিত্র আচরণযুক্ত,
- প্রতিভাবান,
- আকর্ষক ব্যক্তিত্ব,
- বগ্মী,
- निস্পৃহ,
- নানাশাস্ত্রবিচক্ষণ।
শ্রীহনুমানজী এই সমস্ত গুণের অধিকারী। রামদূতের আর এক অর্থ সত্যের দূত বা ধর্মের দূত, আর যে সত্যের দূত হবে সে তো ‘অতুলিত বলধামা’ই হবে।
অতুলিত বলধামা : গোস্বামীজী বলছেন শ্রীহনুমানজী অতুলনীয় বলের অধিকারী। অতুলনীয় অর্থে যার কোনো ঢুলনা হয় না। রামায়ণে চার রকম বলের উল্লেখ পাওয়া যায়-
- বল,
- মহাবল
- অতিবল
- বিশালবল।
শ্রীশ্রীরামচরিতমানসে উল্লেখ আছে ভগবান রাম সুগ্রীবকে বলছেন, “হে সুগ্রীব, আপনার সব কাজ আমি করে দেবো। আমি এর জন্য মায়ার কোনো সাহায্য নেবো না। আমার নিজের ‘বল’ দ্বারা আপনার কাজ করে দেবো।” সুগ্রীব এরপর প্রভুকে বলছেন প্রভু, আপনি নিজের বলের কথা বললেন, কিষ্টু বালী তো ‘মহাবলের’ অধিকারী।” এখানে ‘বল’ আর ‘মহাবলের’ উম্লেখ পাই।
সুগ্রীব এরপর প্রভু শ্রীরামকে বালীর মহাবলের পরিচয় দিয়ে বললেন যে, আপনি যদি সাত তালগাছকে এক বাণে বিধ্বনস্ত করতে পারেন তবে ছিলেন বানররাজ মহাবলশালী কেশরী। শ্রীকেশরী ভগবান শংকরের আরাধনা ও তপের দ্বারা আশীর্বাদ পেয়েছিলেন যে, তিনি ইচ্ছা অনুসারে মানবদেহ ধারণ করতে পারবেন। পরে দেবী অঞ্জনার বিবাহ বানররাজ শ্রীকেশরীর সঙ্গে रয়।
বিবাহের দীর্ঘদিন পরেও সস্তান না হওয়ায় দুঃখী অঞ্জনাদেবী ঋষিশ্রেষ্ঠ মাতঙ্গের দ্বারস্থ হয়ে পুত্রপ্রাপ্তির উপায়ের প্রার্থনা করেন। ঋষি মাতঙ্গ তাঁকে বলেন – “পম্পা সরোবরের পূর্বদিকে পঞ্ণশ যোজন দূরে আছে নরসিংহাশ্রম। সেখান থেকে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত নারায়ণগিরি পর্বতের উপর আছু স্বামীতীর্থ বলে একটি জায়গা। এই স্বামীতীর্থ থেকে এক ক্রোশ উত্তরে অবস্থান করছে আকাশগঙ্গা তীর্থ।
এই তীর্থে স্নান করে সেখানে বারো বছর তপস্যা করলে তোমার অত্যস্ত গুণবান পুত্রের প্রাপ্তি হবে।” মুনির কথা অনুসারে দেবী অঞ্জনা পুষ্করিণীতে স্নান করে এই তীর্থের পরিক্রমার পর ভগবান বরাহ অবতারের স্তুতি করেন। আকাশগঙ্গা তীর্থে অবস্থৃানরত সমস্ত ঋষিদের প্রণাম করে, তাঁর স্বামীর অনুমতি নিয়ে পূর্ণ উপবাসের সঙ্গে বারো বছর তপস্যা করেন। তাঁর বারো বছরের তপস্যায় সস্তুষ্ট হয়ে বায়ুদেব ঢাঁকে পুত্রসন্তানের বরদান করেন।
একবার যখন পতিব্রতা দেবী অঞ্জনা মানবীর দেহ ধারণ করে দিব্য আভূষণে ভূষিত হয়ে তাঁর পতি বানররাজ কেশরীজীর সঙ্গে সুমেরু পর্বতের অত্যন্ত মনোহর বাগিচায় ভ্রমণ করছিলেন তখন তাঁর মনে হলো কে যেন তাঁকে স্পর্শ করছে। দেবী অঞ্জনা তখন অত্যন্ত শিষ্ট ভাষায় বলে উঠেন, “কে আমার পতিব্রতাকে নাশ করতে চায়?” তাঁর এই কথা শুনে বায়ুদেব দর্শন দান করে বলেন,
“হে দেবী, হে সুশ্রীনী, আমি তোমার পতিব্রতাকে নাশ করতে আসিনি, তুমি মনে কোনো ভয় রেখো না। আমি অব্যক্তরূপে মানসিক সংকল্পের দ্বারা তোমার ভিতরে তেজ স্থাপন করেছি। তোমার পরাক্রমী এবং বুদ্ধিমান পুত্র হবে। তেমার পুত্র বড় মহান, ধৈর্যবান, মহাতেজস্বী, মহাবলী হবে এবং লম্ফ ও তার ব্যাপকতায় (ঝাঁপ এর দীর্ঘতা ও গতিবেগ) আমার সমান হবে।”
ব্রহ্মদেবের মানসপুত্র জাম্ববানজী শ্রীহনুমানজীকে আরো বললেন – “হে মহাকপি! যখন বায়ুদেব এই কथা তোমার মাকে বললেন তখন তোমার মাতা অত্যন্ত প্রসন্ন হলেন। হে মহাবাহো! হে বানরশ্রেষ্ঠ, এরপর তোমার মা তেমায় এক গুহায় জন্ম দিয়েছিলেন।” চৈত্র মাসের শক্ল পক্ষের
পূর্ণিমা यা কিন্না মঙ্গলবার ছিল, সেই পবিত্র দিনে অঞ্জনাপুত্র শ্রীহনুমানজীর শুভ আবির্ভাব হল। যেহেতু এই সন্তান অঞ্জনার গর্ভ থেকে প্রকট হলেন তাই তাঁর এক নাম অঞ্জনাপুত্র, বায়ুদেব মাধ্যম ছিলেন তাই পবনসুত, রাজা কেশরীর পুত্র হবার কারণে কেশরীনন্দন আর ভগবান শংকরের একাদশ রুদ্রের রূপে অবতার ধারণ করায় তাঁর আর এক নাম হলো শঙ্করসুবন।
কোথাও কোথাও এই মান্যতাও আছে যে শ্রীহনুমানজী চৈত্র মাসের তক্ল পক্ষের একাদশী তিথির দিন জন্মেছিলেন যখন নক্ষত্র ছিল মঘা। শ্রীহনুমানজীর করা নানা লীলার কথা মাথায় রেখে তাঁর আরও নাম দেওয়া হয়েছে যেমন মারুতি, মারুতনनদ্ন, বাতাত্মজ ইত্যাদি।
এবার দেখে নেওয়া যাক শ্রীহনুমানজী তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে নিজের মুখে ঢাঁর কোন নামটা বলছেন। শ্রীর্রীরামচরিতমানসে এক জায়গায় তিনি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলছেন-আমার নাম হলো হনুমান। চোদ্দো বছর বনবাসের পর শ্রীরাম লক্ষ্মণাদির সঙ্গে অযোধ্যায় ফেরার আগে শ্রীহনুমাজীকে পাঠালেন শ্রীভরতের সঙ্গে দেখা করতে নন্দীগ্রামে। যেখানে শ্রীভরত সিংহাসনে প্রভু শ্রীরামের পাদুকাজোড়া রেখে একজন বনবাসী তপস্বীর মতো এই দীর্ঘ চোদ্দ বছর কাটিয়েছেন।
শ্রীভরত প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে প্রভু শ্রীরাম চোদ্দো বছর পর অযোধ্যায় ফিরে না এলে তিনি আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। প্রভু শ্রীরাম শ্রীভরতকে এই খবর দেওয়ার জন্য শ্রীহনুমানজীকে পাঠালেন যে তিনি ফিরে আসছেন। শ্রীহনুমানজী শ্রীভরতকে বললেন, “আমি পবনপুত্র, এক বাঁদর। হে কৃপানিধান ভরতজী, আমার নাম হনুমান।” এই কারণেই গোস্বামীজী চালীসার আগে অন্য কোনো নাম না দিয়ে রাখলেন খালি হনুমান। তাই নাম হলো হনুমান চালীসা।