Hanuman Chalisa Chaupai 34 Meaning in Bengali

The recitation of Shree Hanuman Chalisa is believed to ward off evil and negativity.

Hanuman Chalisa Chaupai 34 in Bengali with Meaning & Analysis

অন্তকাল রঘুবর পুর জাঈ।
জহাঁ জন্ম হরি-ভক্ত কহাঈ।

সারানুবাদ : যেখানেই ( যে দেশে, বা বর্ণে, বা জাতিতে) সেই ভজনকারীর জন্ম হোক না কেন, ভগবদ্ভক্ত বা প্রভুর ভক্তরূপেই তার পরিচিতি হয় এবং অত্তে তিনি শ্রীরামের নিতাধামে গমন করেন।

ব্যাখ্যা : এই চৌপাঈটি এর আগের চোপাঈটির সঙ্গে একসাথে দেখতে হবে। শ্রীতুলসীদাসজী এই চৌপাঈতে শ্রীহনুমৎ ভজনের পরিণামের কথা বলতে গিয়ে বলছেন যে, তাঁর স্মরণ-মনন-কীর্তন প্রভু শ্রীরামের কৃপাকে যেমন সহজে পাইয়ে দেয়, তেমনই কোনো কারণে যদি সাধনা অপূর্ণ থাকে, তাহলেও তার পরিচিতি জন্মান্তরে হরিভক্তরূপেই হয় এবং শেষ পর্যন্ত প্রভু শ্রীরামের ধামেই তার স্থান হয়।

গোস্বামীজী এই চৌপাঈতে ‘অন্তকাল’ ও ‘জন্মান্তর’ এই দুটি বিষয়ে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইছেন। প্রথনে এই ‘অন্তকাল’-এর অর্থ আমরা দেখি। এর এক অর্থ যেমন হয় অন্তে বা শেযে, তেমনই এর আর এক অর্থ শেষ সময় বা মৃত্যুর সময়। সনাতন ধর্ম জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী আর তাই দেহত্যাগের পূর্ব মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যেকার প্রত্যেক স্কনেের হিসাব আমরা রাখতে পারি কিন্তু মৃত্যুর পর তার কি গতি হয় তা জানা সন্তব হয় না। ‘জন্মান্তর’ একথা বলে এে মৃত্যুর পর সূক্মদেহ এক দেহ ছেড়ে অন্য দেহে প্রবেশ করে ‘কর্মের এক সুব্যবস্থিত অবস্থা অনুযায়ী।। কিন্তু এই মাঝখানের সময়ে কি ঘটে তা জানার ফ্মুতা মন ও বুদ্ধির পক্ষে সম্ভব হয় না। কর্র্মের এই সুব্যবস্থিত অবস্থা

প্রধানতঃ সঞ্ণিত, প্রারক্ক ও ক্রিয়মাণ কর্মের দ্বারা চালিত হয়। এই ব্যবস্থারই এক অঙ্গ হলো মৃত্যুর ঠিক পূর্বমুহূর্তের মন ও বুদ্ধির অবস্থা। মৃত্যুর পর আআার গতি কি হয় অর্জুনের এই প্রশ্নের ঊত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতায় বলছেন, “যে আমার স্মরণ করতে করতে শরীর ত্যাগ করে, সে আমারই স্বরূপকে প্রাপু হয়-এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ बनই।”

জীবনের অন্তিম সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয় এইজন্য যে, সেই মুহূর্তের মনের ভাবনা পরবর্তী জীবনের চালনা শক্তিকে প্রভাবিত করে। মৃত্যুপথযাত্রী মানুফেরা এবং মনোবিজ্ঞানীরা বলেন সেইসময় জীবাত্মা সমস্ত জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলিকে ফিল্মের মতো ‘ফাস্ট ফরোয়ার্ড’ করে দেখিয়ে দেয় এবং মৃত্যুর মুহূর্তে সেইসব প্রচগুভাবে মনে আলোড়ন ফেলে।

তাই দেখা যাচ্ছে যে, মৃত্যুর সময় বা অন্তিমকালের গুণবত্তা পরবর্তী জীবনের দিশা নির্দেশ করে। শ্রীহনুমৎভজন ও নামকীর্তন জীবনকে সুন্দর থেকে সুন্দরতর বানায় এবং তাই শ্রীতুলসীদাসজীর কথায় ‘অন্তকাল রঘুবর পুর জাঈ’ হয়ে যায় কারণ ভজনের অভ্যাস মন ও বুদ্ধিকে সদা ‘নামময়’ করে।

গোস্বামী তুলসীদাসজী সেই সমস্ত অসংখ্য সাধক, ভক্তদের কথাও মাথায় রেখেছেন যাঁরা শুদ্ধজীবন ও সৎসঙ্গে সময় কাটালেও ডাঁদের ইপ্সিত লক্ষেন তা সে পরমাজার সাক্ষাৎকার, ব্রহ্মলীন অবস্থা, মুক্তি বা ইষ্টসাযুজ্য ইত্যাদিতে পৌঁছতে পারেননি।

গোস্বামীজী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতার সেই বিখ্যাত উক্তির কথা মাথায় রেখেছেন যেখানে ভগবান বলছেন, “যোগভ্রষ্ট মানুষ পূর্ণকর্ম করার কারণে নির্দিষ্ট লোক প্রাপু হয়ে সেখানে অনেক বছর কাটিয়ে কোনো পবিত্র শ্রীমন্তর ঘরে অথবা বুদ্ধিমান যোগীর কুলে জন্ম নেয়। সংসারে এই ধরনের জন্ম নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দুর্লভ হয়।”

গোস্বামীজী তই বললেন, “জহাঁ জন্ম ইরি-ভক্ত কহাঈ।” ब্রীহনমমান স্মরণ-মনন-কীর্তনে যার অনুরাগ থাকে, কোনো কারণে এই জীবনে ইপ্সিত লক্ষে না পৌঁছলেও, সে যেখানেই জন্ম নিক, অবশ্যই প্রভুভ্তুরূপে তার পরিচিতি হবে।

প্রভু শ্রীরাতের বৈরী না হন এবং তাঁর পত্নী সীতাকে শেন সসম্মানে প্রভু শ্রীরাদের কাছে ফিরিয়ে দেন। ঢাঁদের এই সাক্ষাৎ এতদূর সুদূরপ্রসারী হয়েছিল যে ভ্রাতা রাবণকে: বোঝাতে গিয়ে বিভীষণ তার দ্বারা পদাঘাত প্রাপু হন এবং পরে সমুদ্র লধ্টন করে প্রভু শ্রীরামের শরণাগত হন। করুণানিধি শ্রীরাম তাঁকে লঙ্কার অধিপতি করেন এবং সখা ও পরামর্শদাতা হিসাবে সম্মান দেন।

(৩) সীতা : লঙ্কার অশোকবনে জনকনন্দিনী সীতার চরম সঙ্কটের সময় শ্রীহনুমানজীর সেখানে উপস্থিত হওয়া এবং তাঁকে প্রভু শ্রীরামের আংটী দিয়ে তাঁর বিরহের অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টা রামায়ণের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তিনি নিজের বিশালমূর্তি দেখিয়ে মাতা সীতার মনে বিশ্বাস জাগান যে রাবণের রাক্ষসবাহিনীর তুলনায় বানর ও ঋক্ষরা কোনো অংশে কম নয়। মাতা সীতা শ্রীহনুমানজীকে আশীর্বাদ দিয়ে অনেক কথার মধ্যে এই কথাও বলেন যে, ঢাঁর বিরহ-সাগরে তিনি (শ্রীহনুমানজী) এক জাহাজ স্বরূপ।

(8) লস্ম্মণ : লক্ষ্মণ সর্বদাই শ্রীইনুমানজীর কাছে ঋণী। শ্রীহনুমানজী তাঁকে তিন তিন বার মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। প্রথমবার সঞ্জীবনী বুটি এনে, দ্বিতীয়বার খগরাজ গরুড়কে নিয়ে এসে এবং তৃতীয়বার পাতালে অহিরাবণ বধে যোগদান করে। লঙ্কাযুদ্ধের অন্যতম রাক্ষসবীর রাবণপুত্র মেঘনাদকে বধ করার এক অন্যতম কাণ্ডারীও ছিলেন শ্রীহনুমানজী, যাঁর সাহায্যে লক্ষ্ণী এই নিধন কার্য করেন।

(৫) ভরত : অধিকাংশ রামায়ণই প্রভু শ্রীরামের ভাই ভরতের যশগান মুক্তকছে করেছেন। ঢাঁর তপোশ্চর্যা ও সদ্গুণ কোনো সিদ্ধ মহাপুরুষের চেয়ে কম ছিল না। ভরত প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে প্রভু শ্রীরামের চৌদ্দ বৎসর বনবাস যেদিন শেষ হবে, তার পরদিন তিনি (প্রভু শ্রীরাম) অযোধ্যায় না ফিরলে, তিনি আগুনে আগাহতি দেবেন। তাঁর এই পরম প্রেমাকুল ভাইকে প্রভু শ্রীরাম বনবাসকালে সর্বদা স্মরণ করতেন এবং তাঁর জন্য সবার আড়ালে অশ্রু বিসর্জন করতেন, যা একবার লক্ষ্মেণের নজরে পড়ে যায়।

প্রভু যে শীঘই অযোধ্যায় ফিরবেন, প্রভু শ্রীরামের আদেশে শ্রীহনুমানজী ভরতকে এই সমাচার দিতে এসে দেখেন যে প্রভুর অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় ভরত পরম আকুল ক্রল্দন করছেন। নিজের বিপ্ররূপ ছেড়ে শ্রীহনুমান ভরতকে এই সমাচার দিলে ভরতের দুঃখ দুর হয়। শ্রীশ্রীরামচরিতমানসে গোস্বামীজী এই ঘটনার উল্লেখ করে লিখেছেন যে, ভরত বলছেন, “হে হনুমান, তোমার দর্শনে আমার সব দুঃখ চলে গেছে। মনে হচ্ছে তোমার রূপে আজ আমার প্রিয় রামের সাতে মিলন হচ্ছে।”

(৬) বানর : যখন দক্ষিণ দিশায় জাম্ববানের নেতৃত্বে বিশাল বানরবাহিনী মাতা সীতার খোঁজে রওনা হলেন, তখন সুগ্রীব তাদের একমাস সময় দিয়েছিলেন এবং মাতা সীতার খেঁঁ না আনতে পারলে মৃত্যুদত্ডের বিধান দিয়েছিলেন। একমাস সময় প্রায় পূর্ণ হওয়ার মুখে ছিল এবং সমস্ত বানরকুল যখন নিরাশায় বিষাদগ্রস্ত ছিল, তখন -্রীহনুমানজী সমুদ্র লখ্যন করে মাতা সীতার থোঁজ এনে সাক্ষাৎ মৃত্যুদণ্ড থেকে অঙ্গদ, জাম্ববান ও অন্যান্য বানরবীরদের রক্ষা করেছিলেন।

(৭) প্রভু শ্রীরাম : যিনি স্বয়ং সঙ্কটহারী, তাঁর সঙ্কট দূর করেছিলেন শ্রীহনুমানজী। পরপর দু-দুবার প্রভু শ্রীরামের প্রাণরক্ষা করেন- একবার মহামতী গরুড়কে এনে আর দ্বিতীয়বার পাতালে অহিরাবণের ভুজা-উৎপাটন করে। এছাড়া প্রভু স্বয়ং মাতা সীতার খোঁজ না পাওয়ায় বিরহাকুল ছিলেন, তখন তাঁর দুঃখ দূর করেছিলেন মাতা সীতার চূড়ামণি এনে দিয়ে। এছাড়াও, রামায়ণে শ্রীহনুমানজীর সঙ্কটহরণের আরো অনেক বাহিনী আছে। যেমন-

(৮) রাজা সুবাহু : একবার অপ্ধমেধ যজ্ঞের ঘোড়ার সাথে থাকবার সময় তাঁর কৃপায় রাজা সুবাহর সঙ্কট দূর হয়েছিল।

(৯) পুষ্কন, শক্রম্ন ও অন্যান্যরা : আর একবার ধর্মপ্রাণ মহারাজ বীরমণির রাজ্যে অশ্বমেধের ঘোড়ার প্রবেশ ও তাকে আটকানোর পরিপ্রেক্ষিতে এক ভীষণ যুদ্ধ বাধে যাতে যুদ্ধক্ষেত্রেই ভরতপুত্র পুষ্কল ও পরে স্বয়ং শত্রুঘ্যের মৃত্যু হয়। শ্রীহনুমানজীর বীরত্ব, বুদ্ধি ও প্রভুকৃপায় শত্রুঘ, পুষ্কলসহ সমস্ত মৃত যোদ্ধারা প্রাণ ফিরে পান।

এইসব মহান চরিত্রদের যদি শ্রীহনুমানজী সঙ্কট থেকে উদ্ধার করতে পারেন, তাহলে তাঁর স্মরণ-মনন ও কীর্তনে আমাদের সব সঙ্কট অবশ্যই দূর হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেইই থাকতে পারে না। শুধু দরকার হলো তাঁর প্রতি অবিচল শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস।

Leave a Comment