Devotees sing the Hanuman Chalisa Lyrics with devotion in temples and during religious gatherings.
Hanuman Chalisa Chaupai 38 in Bengali with Meaning & Analysis
জো শত বার পাঠ কর কোঈ।
ছূটহি বন্দি মহা সুখ হোঈ।
সারানুবাদ : যে এই চালীসা একশত বার পাঠ করবে, সে বন্ধন থেকে মুক্ত হবে এবং অত্যন্ত সুখী হবে।
ব্যাখ্যা : গোস্বামীজী চালীসা পাঠের মহিমা এই চৌপাঈ এবং এর পরের চৌপাঈতে কীর্তন করেছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে এই ‘হনুমান চালীসা’ একশত বার পাঠ করলেই কি সত্যিকারের সুখ অর্থাৎ আধ্যাত্মিক আনন্দের সুখ এবং কঠিন সঙ্কট থেকে মুক্ত হওয়া যাবে? আরো প্রশ্ন হতে পারে ‘একশই’ কেন,
তার বেশি বা কম নয় কেন? সাংসারিক আকর্ষণে আসক্ত মানুষ যাদের ভৌতিক সুতোগ সুবিধা জোগাড় করতেই দিন পার হয়ে যাচ্ছে, তাদের শ্রীহনুমানজীর ওপর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস থাকলেও, অতবার পাঠ করার সময় যদি বার করতে না পারে, তাহলে তাদের সঙ্ষটমুক্তি এ আধ্যাছ্দিক আনন্দলাভের কি কোনো উপায় থাকবে না ?
শাস্ত্রকার ও কথাকারদের মত হলো এই ‘একশ’ শব্দ কেবলমাত্র ইঙ্গিতবাইী। এটা বলা এই কারণে যে, এই চালীসার ‘নিয়মিত’ পাঠ প্রয়োজন। যন্ত্রের মতো ‘একশ’ বার পাঠ করার কথা এই চোপাঈ বলছে না। পাঠ বা গান তখনই কার্যকরী হবে যখন শ্রীহুনুমানজীর প্রতি পূর্ণ প্রেম ও শ্রদ্ধা জাগরূক হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে উচ্চারণের দিকেও। প্রত্যেকটি চৌপাঈ-এর অন্তঃর্নিহিত অর্থ ও তার ভাব জানা অত্যন্ত জরুরি।
যদি কেউ অত্যন্ত ভাবপূর্ণ ও একাগ্রতার সঙ্গে পাঠ করেন এবং তা নিয়মিত করেন, তবে সংখ্যা কম-বেশি যাই হোক, সেই পাঠ শ্রীহনুমানজীর কৃপায় পাঠককে ধীরে ধীরে সাংসারিক আকর্ষণ ও ভোগবাদী বৃত্তিগুলির বন্ধন থেকে অবশ্যই মুক্ত করবে। শধু তাই নয়, শ্রীহনুমানজীর কিছু কিছু গুণ সেই পাঠকের মন ও বুদ্ধিকে প্রভাবিত করবে, যেমন তার মধ্যে বিচারশীলতা, নির্ণয়শক্তি ও মানসিক দৃত়তা আনবে। যার ফলে তার মধ্যে সৎকর্ম করার বা সৎসঙ্গে যুক্ত হবার প্রবণতা বাড়বে।
এই চালীসা পাঠ বার বার করার ইচ্ছা আপনা আপনিই জাগবে। এর ফল আরো ভালো হবে যদি তা অপরের কল্যাণ কামনায় করা হয়। প্রভু শ্রীরাম সর্বব্যাপক ‘বিষুণুস্বরূপ’। জগতের কল্যাণ কামনার অর্থে প্রভু শ্রীরামের কাজ করা বোঝায়। শ্রীহনুমানজী বিভীষণকে বলেছিলেন যে, খালি রামনাম করলেই হবে না, প্রভুর কাজও করতে হবে। রাবণ তাঁকে বিতাড়িত করতে পারেন এই আশঙ্কা সন্ত্বেও শ্রীহনুমানজীর এই পরামর্শ বিভীষণ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন।
রাবণের ভ্রুকুটী উপেস্মা করেও তিনি জনকনন্দিনী সীতাকে প্রভু শ্রীরামের কাছে ফিরিয়ে দিতে বলেছিলেন। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ভৌতিক সুখ অল্প সময়ের জন্য হয় এবং এই সুখভোগ অনেক বন্ধনের কারণ হয়। কর্মাধীন জগত অমোঘ নিয়নে ‘…পুনরপী জনমং পুনরপী মরণং…’ চলতেই থাকে ও ভবিষ্যতে অনেক দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হয়, যা আমরা চাই বা না চাই।
তাই আতু-উপলক্ধি ও আত্ম-বিকাশের মার্গে চলা সাধক, ভক্ত, যোগী, কর্মী, জ্ঞানী, সবই আধ্যাছিক আনन्্স্বরূপ ‘মহাসুখ’ কামনা করে এবং ‘আবা-গমন’ থেকে মুক্ত হতে চায়। গোস্বামীজী তাই ‘হনুমান চালীসা’র মহিমা বর্ণনায় দৃত়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘শ্রীহনুমান চালীসা’র নিয়মিত পাঠ পরিণামে ‘মহাসুখ’ অনুভব করায় এবং সব রকঙের বন্ধন থেকে মুক্ত করায়। গোস্বামীজীর নিজের জীবনেই একটি ঘটনা ঘটেছিল এবং তার থেকে এই পাঠের সিদ্ধান্ত তাঁর দৃঢ় হয়। ঘটনাটি সংক্ষেপে এই রকম-
একবার এক ব্রাহ্মণের অন্তিম যাত্রার প্রস্তুতি চলছিল। গোস্বামীজী ঘটনাক্রমে সেই স্থান দিয়ে পেরোচ্ছিলেন। হঠাৎ এক স্ত্রী তাঁর পা জড়িয়ে ধরে প্রার্থনা করলে, তিনি, না দেখেই, স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠলেন, “অখণ সৌভাগ্যবতী হও।” তখন সেই মহিলা, যিনি সেই অন্তিমयত্রী ব্রাম্মাের স্ত্রী, বলে উঠলেন, “আপনার কথা ব্যর্থ। আমার স্বামী একটু আগেই মারা গেছেন এবং তাঁর অন্তিম যাত্রার প্রস্তুতি চলছে।”
গোস্বামীজী বলে উঠলেন, ” ‘মার মুখের শব্দ ব্যর্থ হওয়ার নয়। আমি তোমার পতিকে জীবিত করব।” গোস্বামীজী উপস্থিত সবাইকে চোখ বন্ধ করে শ্রদ্ধার সঙ্গে শ্রীরাম-নাম করতে বললেন। অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে উপস্থিত সবাই সেইই ব্রাঙ্মণকে প্রাণ ফিরে পেতে দেখল।
সেই সময়ের মোগল সম্রাট আকবরের কাছে এই খবর পৌছে গেল মন্ত্রী টোডরমল ও ভক্ত কবি রহিমের মাধ্যমে। বাদশাহ তুলসীদাসজীকে তাঁর দরবারে হাজির হতে বললেন। গোস্বামীজী সাহিত্যচর্চায় ব্যস্ত থাকার বারণে আমন্ত্রণ স্বীকার করলেন না। বাদশাহ আকবর তাঁর এই আচরণ ধৃষ্টতা ভেবে তাঁকে সৈন্য পাঠিয়ে ধরে এনে দরবারে কিছু ‘চমৎকার’ দেখাতে বললেন। গোস্বামীজী বললেন, “’আমি কোনো ‘চমৎকার’ করি না।
আমি শ্রীরামের ভক্ত মাত্র। এই সম্পূর্ণ লীলা এবং কৃপা আমার ইষ্টদেব শ্রীরামেরই।” বাদশাহ তখন তাচ্ছিলে্যের সঙ্গে বললেন, “তাই? ঠিক আছে। দেখি শ্রীরাম তোমার জন্য কি করেন!” এই কথা বলে গোস্বামীজীকে ফতেপুর সিকরীতে জেলে বন্দি করে রাখলেন। গোস্বামীজীও বাদশার কাছে না ঝুঁকে সেই জেলে বসেই ‘হনুমান চালীসা’ ক্রম্গাত চল্লিশ দিন পাঠ করলেন। এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। হঠাৎ অসংখ্য বানর কোথা থেকে এসে সমস্ত নগরীকে তছনছ করতে লাগলো। সমস্ত নগরবাসী ও মোগল সৈন্য এই বানরদের পরাক্রনমের কাছে অসহায়
হয়ে বানরদের কাঞ্ডকারখানা দেখতে লাগলো। কোলো এক বৃদ্ধ হাফিজ্জ তখন আকবরকে জানালেন যে, কোলো ‘পবিত্র সন্ত’ কে আপনি বন্দি ক:রেছেন বলে এই ঘটনা ঘটছে। বাদশাহ তাঁর ভুল বুঝতে পেরে গোস্বামীজীকে মুক্ত করলেন এবং তাঁর কাছে ক্ষম্মা প্রার্থনা করলেন।
গোস্বামীজী বাইরে আসতেই সেই বানরকুল শান্ত হরলা এবং তারা স্থানত্যাগ করলো। তুলসীদাসজী যাবার আগে আকবরকে জানালেন যে, তিনি যেন ফতেপুর সিকরী ছেড়ে অন্যত্র তাঁর রাজধানী করেন। বাদশাহ তাঁর রাজধানী পরে দিল্লী সরিয়ে নেন। ‘Warrior Ascetics And Indian Empires’ এবং ‘Hanuman’s Tale : The Message Of A Divine Monkey’ নামক গ্রষ্থে এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।