Each verse of the Hanuman Chalisa narrates an aspect of Hanuman’s divine qualities.
Hanuman Chalisa Chaupai 37 in Bengali with Meaning & Analysis
জৈ জৈ জৈ হনুমান গোসাঈ।
কৃপা করহু চরুদেব কী নাঈ।
সারানুবাদঃ হে গোস্বামী হনমান! আপনার জয় হোক, জয় হোক, জয় হোক। ওরুদেবের মতন কৃপা করুন।
ব্যাখ্যা : গোস্বামী তুলসীদাসজী হনুমান চালীসার একেবারে শেষে এসে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি ‘চালীসা’ শুরু করেছিলেন শ্রীগুরুর চরণকমলের ‘রজঃ’ র বন্দনা দিয়ে আর এথন শেষ করছেন গুরুমহিমার ‘উদ্-ঘোষ’ দিয়ে। আমাদের শাস্ত্রীয় পরস্পরায় উপক্রম এবং উপসংহার সমানতাপুর্বক হওয়া উচিত এবং এখানে তাই হয়েছে।
শ্রীহনুমানজীর উদ্দেশে গোস্বামীজী তিনবার ‘জয় হোক’ ‘উদ্-ঘোষ’ করেছেন। আসলে চালীসার একদম শেষলগ্নে তিনি অত্যন্ত ভাব-বিহুল হয়ে পড়েছিলেন। আর হবেন নাই বা কেন, শ্রীহনুমানজীর উপস্থিতি ও আলিঙ্নের প্রতীক্ষারত গোস্বামীজী অঞ্র্পুর্ণ নয়নে তাঁর ভাবুক হৃদয়ের উথলে ওঠা ভাব থেকে বলে উঠলেন, “জয় হৌ! জয় হো! জয় হো!” ভক্তিমার্গের পথিকদের এই ক্ষণ হয় অত্যন্ত সংবেদনশীল ও মূল্যবান।
ইষ্ট সাক্ষাৎকারের সময় যত কাছে আসতে থাকে, ভক্ত হৃদয় তত উদ্বেল, ব্যাকুল ও গদগদ হয়ে যায়। মহাপ্রভু শ্রীচেতন্যদেবের ভাযায়, ‘… নয়নং গলদखরঞ্ধারয়া বদনং গদগদ রুদ্ধয়া গিরা। পুলকৈর্নিচিতং বপুঃ…..’ প্রভুর কাছে প্রার্থনা তখন একটই কথা শোনাতে চায় (মহাপ্রভুর ভাষায়)” ‘হে আমার নাথ! পতিতং মাং বিষহে ভাবান্মুবৌ। কৃপয়া তব পদপস্কজ-স্থিত ধূলীসদৃশং বিচিত্তয়।।”
শ্রীহনুমানজীর ভক্তকুল এবং গোস্বামীজীর গুগ্রাহীরা এই তিনবার ‘জৈ, ‘জি, জৈ…’ শব্দের আরো অনেক অর্থ বার করেছেন। যেমন-
- ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ- এই তিন কালেই আপনার জয় হোক।
- ভৃঃ ভুবঃ স্বঃ- অর্থাৎ পৃথিবী, অস্তরিক্ষ এবং স্বর্গ, এই তিন লোকেই আপনার জয় হোক।
- মন, বচন ও কর্ম- অর্থাৎ আপনার ভক্তি ও কৃপায় যেন এই তিন खुদ্ধ इड़।
- সভ্ধ, রজ ও তম- অর্থাৎ আপনার কৃপা এই তিন গৃণের উপরে निয়ে গিয়ে যেন গুণাতীত অবস্থার অনুভব প্রাপ্ত করায়।
- ভ্ঞন, কর্ম ও ভক্তি- এই তিনের সমন্ধয়ে যেন আধ্যাত্রিক সাধনা পূর্ণण প্রাপ্ত হয়।
গোস্বামীজী শ্রীহনুমানজীকে এর পরে গোসাঈ বলে সম্বোধন করেছেন। আসুন, দেখা যাক এর দ্বারা তিনি জগৎকে কি জানাতে চাইছেন।
গোস্বামী : সংস্কৃত শব্দ গোস্বামীর অপভ্রংশ হল গোঁসাই। গোস্বামী অর্থাৎ গৌ + স্বামী। এই গৌ শব্দের অনেক অর্থ আছে, যেমন-
গৌ = গরু ! অর্থাৎ যিনি গৌী রক্ষক ও পোষক তিনিই গোস্বামী। শ্রীইনুমানজী সদাই এর রক্ষক।
গ্গে = ইন্দ্রিয়! बরীহনুমানজী জিতেন্দ্রিয় হওয়ার কারণে তাঁকে গোস্বামী বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
গেগে = বাণী! শ্রীহনুমানজী ‘বাণী’র সার্থক অধিপতি। প্রভু শ্রীরাম, ভরত, জনকনन্দিনী সীতা, সমস্ত ঋযিগণ ঢাঁর বাণীর শতমুতে প্রশংসা করেছেন। তাই তাঁকে গোস্বামী বলে সন্বোধন করা হয়েছে।
গৌ = পৃথিবী! শ্রীহনুমানজী রাক্ষসদের পাপাচার থেকে পৃথিবীকে সদা রক্ষা করেন। এই পৃথিবীলোকে তাঁর কৃপায় তমোগুণ নাশ হয়। তাই তাঁকে গোস্বামী সম্বোধন সার্থক।
কৃপা করহু গুরুদেব কী নাঈ
গোস্বামীজী চালীসার একদম শেষে এসে শ্রীহনুমানজীর কছছ প্রার্থনা করছেন যে, তিনি যেন গুরুর মতন তাঁর কৃপা বর্ষণ করেন কারণ ‘ইষ্ট যদি গুরু হন’ তাহলে তো কথাই নেই।
আমরা জানি যে, আধ্যাগ্মিক যাত্রায় গুরুর ভূমিকা কি হতে পারে। এই যাত্রায় পদে পদে সংশয়, অধৈর্যতা, দিশাহীনতা ইত্যাদির মত সঙ্কট মাথা চাড়া দেয়। এই সময় মার্গদর্শন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। বিশেষতঃ আধুনিক সময়ে, সম্পত্তি, শক্তি, অর্থ প্রভৃতির দরকার কেউ অস্বীকার করতে পারে না। সমাজে বাস করার জন্য এ সবই জরুরি। যেটা দরকার তা হলো এই সবের সদ্উপযোগ। এই সব সম্পত্তি ইত্যাদি আবার অনেক বিষয়কে টেনে আনে যেমন কপট বন্ধু, অহংকার, দূরদৃষ্টির অভাব প্রভৃতি।
এই সময় দরকার সত্যি কথা রলার সাহস করা কোনো দূরদৃষ্টিসי্পন্ন সদ্গুরূর যাঁর বিষয়-লোভ জয় হয়েছে এবং সংসারে সবার মঙ্গল কামনাই যাঁর একমাত্র লক্ষ্য। জীবনের যাত্রাপথ সদাই অজ্ঞান অক্ধকারে ঢাক। একটি ভুল সিদ্ধাত্ত যাত্রাপথের দিক পাল্টে দিতে পারে এবং তা বুঝতে বুঝতে জীবনের মূল্যবান অনেক সময় পেরিয়ে যায়। তই যোগ্য ব্যক্তির মার্গদর্শন জীবনে এত গুরুত্তপূুর্ণ।
এইটা জরুরি নয় যে এই মার্গদর্শীকে কোলো গেরুয়াধারী সন্ম্যাসী হতে হবে বা উচ্চকোটীর যোগী-ঋযি হতে হবে। দরকার সেই ব্যক্তির যে, নিজে তার জীবনে তার গুরুর নির্দেশ অহংকারশূন্যভাবে পালন করেছে এবং বিষয়ে থেকেও বিষয়লিপু হয়নি। সমর্থ সদ্গুরু একজনের শুষু মার্গদর্শনই করান না, তিনি জীবাআ্কে পরমাত্মার সাথে মিলনের সেতু হন।
গোস্বামীজীর এই টৌপাঈ আমাদের ভরসা দেয় যে, শ্রীহনুমানজী সাধককে যোগ্য গুরু পাওয়ায় সাহায্য করেন। চৌপাঈ-এর অংশ ‘কৃপা করহু গুরুদেব কী নাঙ্গ’-এর অন্য অর্থও করা যায় অর্থাৎ হে হনুমান! হে গুরু! দেবতাদের মতো কৃপা করুন।
গুরুবন্দনার সেই বিখ্যাত শ্লোক আমরা স্মরণ করতে পারি যেখানে গুরু ব্রহ্মার স্বরূপে শিষ্যের মনে আধ্যাত্মিক জিষ্ভাসার স্রোত জাগান ; গুরু, বিষুণুর রূপে তাঁর শিষ্যের মধ্যে নিষ্ঠার বীজ বপন করেন যা শ্রদ্ধা ও বিশ্যাসের মূল কারণস্বরূপ এবং গুরু, শিব রূপে শিষ্যের মনে বাসা বেঁঁে থাকা মোহ ও ভ্রম দূর করেন। গুরু, এরপর, পরব্রস্মের রূপে সাধককে জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধন থেকে মুক্ত করান।