The Hanuman Chalisa Pdf is recited to seek Lord Hanuman’s blessings for overcoming obstacles.
Hanuman Chalisa Chaupai 12 in Bengali with Meaning & Analysis
রঘুপতি কীন্হী বহুত বড়াঈ।
তুম মম প্রিয় ভরতহি সম ভাই।।
সারানুবাদঃ রঘুপতি শ্রীরাম অনেক প্রশংসা করেন, “আপনি আমার ভরতের মতো প্রিয় ভাই হন।।”
ব্যাখ্যা : এই চৌপাঈ অনেকদিক থেকে অর্থপূর্ণ এবং ইঙ্গিতবাহী। প্রভু শীরাম তাঁর একান্ত প্রিয় শ্রীহনুমানজীর প্রশংসায় সদাই পঞ্চ্মুখ থাকতেন। শ্রীহনুমানজীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষনৎ থেকে শুরু করে প্রভু শ্রীরাম ঢাঁর নরলীলা
সংবরণের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অনেকের কাছে শ্রীংনুমানজীর সম্বন্ধে অনেক মহত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। ত্রীহনুমান চালীসায় গোস্বামীজী প্রভুর মুখ দিয়ে এই চোপাঈ (নং ১২) এবং তারপর (নং ১৩ – ১৫)
আরো তিনটি চৌপাঈ ধরে শ্রীহনুমানজীর চরিত্রের বিভিন্ন দিকগুলির বর্ণনা করেছেন। শ্রীহনুমানজীর ভক্ত, গুণী, প্রভুঋণী ও অন্যান্য গুণের মহিমার বিশালত্ব চৌপাঈগ্লুলিতে উল্লেখ করেছেন। এইগুলি ছাড়া প্রভু শ্রীরামের মুখ দিয়ে শ্রীহনুমান চালীসায় সরাসরি আর কোনো কথার উল্লেখ নেই। তাই কয়েকটি প্রশ্ন স্বভাবতই মনের কোণে জনে ওঠে। যেমন :
প্রথম প্রশ্ন : প্রভু শ্রীরাম ঢাঁর ভাই লক্ষ্মেনের সঞ্জীবনী বুটির দ্বারা প্রাণ ফিরে পাবার পরই কেন এতগুলি কথা বললেন শ্রীহনুমানজীর সম্বহ্ধে?
দ্বিতীয় প্রশ্ন : শ্রীহনুমানজী বানররূপে আছেন আর ভরত তো মানবরূপে লীলা করছেন। এই দুজনের ভ্রাতৃত্বের সম্বল্ধ কিভাবে সম্ভব?
তৃতীয় প্রশ্ন : প্রভু শ্রীরাম তাঁর ভাই লক্ষ্মনেের সামনে শ্রীহনুমানজীর তুলনা বা তার প্রিয়ত্ব ভরতের সঙ্গে করায় লক্ষ্মনের মনে কি কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়নি? আর সর্বদা মর্যাদা রক্ষার আদর্শ স্বরূপ শ্রীরামের এই কথা লক্ষ্মনের সামনে বলাটা কি অবাক লাগছে না ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা পেয়ে যাবো ‘আনন্দ রামায়ণ’, ‘গিরধর রামায়ণ’ ও শ্রীশ্রীরামচরিতমানসের মধ্যে।
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, লক্ষ্মপের ‘শক্তিশেল’ দ্বারা আহত ও মৃতপ্রায় অবস্থা প্রভু শ্রীরামকে এতটা ভাববিহ্বল করেছিলো যে তিনি ক্রমাগত অশ্রুবিসর্জনের সাথে সাথে মাতা সুমিত্রার কাছে তাঁর দেওয়া বচন ও লক্ষ্মনেের মৃত্যুর (যদি হয়) পরবর্তী নিজের প্রাণত্যাগের কথাও উচ্চেস্বরে বলতে লাগলেন।
তাই শ্রীহনুমানজীর সঞ্জীবনী বুটির সাহায্যে যখন লক্ষন বেঁচে উঠলেন, তখন প্রভু শ্রীরামের যুগপৎ আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা শ্রীহনুমানজীর প্রতি বর্ষিত হতে লাগলো। তাঁর এই ‘হনুমৎ-ঋণ’ ঢাঁকে এতটা ছেয়েছিলো যে তিনি শ্রীহনুমানকে প্রাণভরা আশীর্বাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পরের চৌপাঈগুলি বলতে লাগলেন। প্রভু শ্রীরাম যখন যুদ্ধ শেযে অযোধ্যায় ফিরলেন এবং তার রাজ্যাভিযেকও হয়ে গেলো, তখন তাঁকে প্রশ্ন করায় তিনি বলেছিলেন, “আমাকে এবং ভাই লক্ষ্মণকে প্রিয় হনুমান দু-দুবার রক্ষা
করেছিলেন, প্রথমবার নাগপাশ থেকে এবং দ্বিতীয়বার অহিরাবণের পাতাল থেকে ; কিস্তু শ্রীহনুমানজীর সঞ্জীবনী বুটির আনয়ন ও লক্ষ্ণের প্রাণ ফিরে পাওয়ার মাহাত্য পরের দুইটির থেকে অনেক আলাদা। জিষ্ঞসা করায় তিনি বলেছিলেন মাতা সুমিত্রাকে তিনি বচন দিয়েছিলেন যে, লক্ষ্ককে তিনি সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে আনবেন। অর্থাৎ প্রভু শ্রীরামের বনবাসের থেকে প্রভু শ্রীরাম স্বশরীরে ফিরলে লক্ষ্মণও সুস্থ শরীরে ফিরবেন।
রঘুকুলে এক রীতি পরম্পরায় চলে আসছে যে- ‘রঘুকুল রীতি সদা চলি অই, প্রাণ জায় পর বচন না যাই’ (রা.চ.মা.)। প্রভু বলছেন, “এখন ল’ক্ষ্নণের কিছু হয়ে গেলে, আমার প্রাণত্যাগ তো নিশ্চিত ছিলো। কিস্তু আমাদের দুজনের একসাথে মৃত্যু হলে (দুবার সেই অবস্থা তৈরি হয়েছিলো), মর্যাদা রক্ষায় কোনো অমর্যাদা হতো না।” প্রভু শ্রীরাম সর্বথা মর্যাদা পুরুযোত্তম। আর তাই শ্রীহনুমানজী লক্ষ্নেণের প্রাণরক্ষা করলে তিনি শ্রীহনুমানজীকে প্রাণভরে আশীর্বাদ এবং মুক্তকণ্ঠে তাঁর মহিমার গুণগান করেছিলেন।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রশ্নের্ন উত্তর থুঁজতে গেলে আমাদের একটু পিছনে ফিরতে হবে। সস্তান প্রাপ্তির ইচ্ছায় শ্রীহনুমানজীর মাতা দেবী অঞ্জনা ভগবান শিবের প্রসন্নতা কামনায় কঠোর থেকে কঠোরতর তপস্যা করেছিলেন।
তাঁর এই তপস্যায় ভগবান শংকর প্রসন্ন হয়ে দেবীর কাছে প্রকট হয়ে বর প্রার্থনা করার জন্য বললেন। দেবী, ভগবান শিবের চরণ বন্দনা ও স্তুতি করে বললেন, “প্রভু, আপনি আমাকে আপনার মতো নির্দোষ এবং পবনদেবের সমান পরাক্রমী পুত্র লাভের আশীর্বাদ করুন।” তাঁর এই প্রার্থনা শুনে ভগবান শংকর বললেন, “দেবী, একাদশ রুদ্র আপনার পুত্র হয়ে অবতাররূপ ধারণ করবেন।
আপনি এই তপশ্রর্যা বজায় রাখুন এবং ধ্যানস্থ মুদ্রায় চোখ বন্ধ রেখে দুই হাত একন্র করে আকাশের দিকে খুলে রাখুন। বায়ুদেব আপনার হাতে প্রসাদ দেবেন, যা গ্রহণ করলে আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী পুত্রপ্রাপ্তি হবে।” ভগবান শংকর এই বর দিয়ে অন্তর্হিত হলেন।
দেবী অঞ্জনা আদেশ অনুসারে তাঁর তপশ্চর্যা বজায় রেখে চললেন। ঠিক সেই সময় অযোধ্যা নরেশ চক্রবর্তী সম্রাট দশরথ গুরুদেব বশিষ্ঠর ইচ্ছানুসারে ‘পুত্রকামেষ্টি যজ্ঞ’ করেছিলেন। এই যজ্ঞে সস্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং অগ্গিদেব যজ্ঞাগ্নি থেকে প্রকট হয়ে রাজার হাতে পায়েস ভর্তি একটি পাত্র দিলেন এবং এই প্রসাদ তিনি রানীদের খাওয়াতে বললেন। সম্রাট দশরথ
তাঁর তিন রানী, কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রাকে তা ভাগ করে নিয়ে খেতে বললেন। অযোধ্যা নরেশ দশরথের ইচ্ছা অনুযায়ী তিন রানী তা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হুলেন। রানী কৈকেয়ী সেই প্রসাদ যখন খেতে যাবেন, ঠিক সেইসময় হঠাৎ একটি চিল এসে সেই প্রসাদের কিছু অংশ মুখে নিয়ে আকাশপথে উড়ে চলে গেলো।
আশর্যজনকভভাবে সেই চিল অনেকটা পথ অতিক্রম করে শ্রীকেশরীজায়া অঞ্জনার তপং্তুলীতে এসে হাজির হলো। দেবতাদের ইচ্ছা অনুयায়ী, হঠাৎ সেই চিলের মুখ খুলে গেলো এবং অঞ্জনার খোলা দুই হাতের তালুতে ওই মুতে রাখা প্রসাদ এসে পড়লো। ভগবান শংকরের বরদানের কথা ভেবে মাতা অঞ্জনা সেই প্রসাদ গ্রহণ করলেন।
সময়ের নিয়ম অনুসারে অযোধ্যায় রানি কৈকেয়ী শ্রীভরতের জন্ম দিলেন আর দেবী অঞ্জনা জন্ম দিলেন শ্রীহনুমানজীকে। একই প্রসাদের ফলস্বরূপ জন্ম নেওয়ার কারণে শ্রীযুক্ত ভরত এবং শ্রীহনুমান পরস্পরের ভাই হলেন। তাই প্রতু শ্রীরাম শ্রীহনুমানজীকে বললেন, ““তুম মম প্রিয় ভরতহি সম ভাই।”
শ্রীহনুমানজীকে ভ্রাতা ভরতের সমান প্রিয় বলায় লক্ষ্ ণ অসళ্টষ্ট তো হলেনই না বরং প্রভু শ্রীরামের কথায় খুশি হয়ে শ্রীহনুমানজীকে জড়িয়ে ধরলেন। শ্রীহনুমানজী এই অসম্তব কাজটি না করলে (সঞ্জীবনী বুটি আনা) আজ তো তিনি মৃত্যুপ্রাপু হতেন।