Hanuman Chalisa Chaupai 17 Meaning in Bengali

Hanuman Chalisa Meaning is considered a source of spiritual strength during challenging times.

Hanuman Chalisa Chaupai 17 in Bengali with Meaning & Analysis

তুম্হরো মন্ত্র বিভীষণ মানা।
লঙ্কেশ্বর ভএ সব জগ জানা।

সারানুবাদ : তোমার (শ্রীহনমানজীর) পরামর্শ মান্য করে বিভীষণ লঙ্কার রাজা হয়েছিলেন, এই কথা সমস্ত সংসার জেনেছিলেন।

ব্যাখ্যা : এই চৌপাঈতে এমন কয়েকটি মূল্যবান তথ্য সম্মিলিত আছে যা ভগবদ্-ভক্ত বা সাধকের মনে প্রেরণা দেয়।

সাধারণতঃ এই কথা মানা হয় যে, প্রভুভক্তি বা ঈশ্বর সাধনায় ফল পেতে হলে সাংসারিক সুখ, সম্পত্তি, পদের মোহ, নাম-যশ কামনা ইত্যাদি সব ত্যাগ করতে হয়। কিন্তু চোপাঈ ১৬ এবং ১৭ আমাদের সামনে এক স্পষ্ট উদাহরণ দেয় যে, শ্রীহনুমানজীর কৃপা বানররাজ সুগ্রীব ও লঙ্কেশ্বর রাবণের ছোট ভাই বিভীষণের অপার আনন্দ ও লৌকিক সুখের কারণ হয়েছিল এই সব কিছু না ত্যাগ করেই।

তাই উপরের উদাহরণ সর্বসাধারণের জন্য এই কথা সিদ্ধ করে যে শ্রীহনুমান চালীসার পাঠ, শ্রীহনুমানজীর উপাসনা এবং অন্যান্য উপদেশ ইত্যাদি ঠিকমতো পালন করলে অর্থাৎ শ্রীহনুমানজীর নিত্য সঙ্গ করলে সংসারে থেকেই অলৌকিক আনन্দ ও সুখ পাওয়া যায়।

আগেই বলা হয়েছে যে লঙ্কাপতি রাবনের ছোট ভাই ছিলেন বিভীষণ। তিনি শ্রীহনুমানজীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনেক আগে থেকেই শ্রীরামের ভক্ত ছিলেন। লঙ্কেশ রাবণের মতো কঠোর শ্রীরামের বিরোধীর ছোট ভাই হওয়া সত্তৃও এবং রাজকীয় আয়েশ-আরামের মধ্যে থেকেও তাঁর শ্রীরাম-ভক্তিতে এতটুকু শিথিলতা আসেনি। অযোধ্যায় অনুকূল পরিবেশে শ্রীরামের ভক্তি আর লঙ্কায় অতি প্রতিকূল অবস্থায় ভক্তি সাধনায় অটুট থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য। শীবিভীষণ নিজের ঘরকে মন্দির বানিয়েছিলেন।

তুলসীমঞ্চ থেকে ঘরের বিভিন্ন অংশে তুভ প্রতীক রেখে তিনি শ্রীরামভক্তিতে মগ্ন থাকতেন। আর সেই প্রতীক দেখেই তো শ্রীহনুমানজীর মাতা সীতার থোঁজে লঙ্কায় ঘুরতে ঘুরতে বিভীষণের ঘরে প্রবেশ। তারপর বিভীষণের ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময় ‘রাম’, ‘রাম’, ‘রাম’ নামের উদাত্ত আহ্বান শ্রীহনুমানজীর মনে দৃঢ় বিশ্বাস জাগায় যে তিনি একজন ভক্তর বাড়িতে পৌঁছেছেন।

শ্রীহনুমানজীর বিভীষণের সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনাক্রম এইজন্য উম্লেখ করছি কারণ তাঁদের কথাবার্তার মধ্যে শ্রীহনুমানজীর বিভীষণকে কোনো ‘মস্ত্র’ দেওয়ার প্রসঙ্গ আসেনি। অথচ চৌপাঈতে উল্লেখ আছে যে, শ্রীহনুমানজীর দেওয়া ‘মন্ত্র’ বিভীষণ মান্য করেছিলেন। সমসু রামায়ণের কোথাও শ্রীহনুমানজীর বিধিবদ্ধভাবে দেওয়া ‘মন্ত্র-দীক্ষার’ কোনো উল্লেখ নেই। তাহলে গোস্বামী তুলসীদাসজী কোন মন্ত্র দেওয়ার কথা বলছেন ?

শ্রীহনুমানজীর দর্শন ও পরিচয় পেয়ে একজন সত্যিকারের ভক্তের মতো বিভীষণ তাঁর মনের বেদনা ও দুর্ভাগ্যের কথা তাঁকে জানালেন। রাক্ষসকুলে তাঁর জন্ম, লঙ্কায় চতুর্দিকের আসুরিক শক্তির মধ্যে তাঁর বাস, অনুকূল পরিস্থিতির অভাবে তাঁর পর্যাপু আধ্যাছ্মিক বিকাশ না হওয়া এবং তার কারণে প্রভু শ্রীরামের কৃপালাভ থেকে বঞ্চিত হওয়া প্রভৃতি কথা বলে তিনি তাঁর মনের বেদনা ঢাঁর কাছে প্রকাশ করলেন।

শ্রীহনুমানজী তাঁর অপূর্ব বাক্যশৈলীর প্রয়োগে শ্রীবিভীষণকে আশ্বস্ত করলেন যে কৃপাসিক্ধু শ্রীরাম তাঁর ভক্তদের সদইই করুণা করেন। শ্রীহনুমানজী তাঁর

নিজের উদাহরণ দিয়ে বোঝালেন যে তাঁর মতো একজন সদা চঞ্চল বানরও তাঁর কৃপা ও করুণা লাভ থেকে বধ্চিত হয়নি। একথা সত্য যে বিভীষণের প্রভু শ্রীরামের প্রতি প্রেম ছিল অনन, কিস্তু চাঁর ভক্তি নিষ্्্রিয় ছিল। যখন শ্রীহনুমানজী মাতা সীতার বিষয়ে জানতে চাইলেন, তখন বিভীষণ তাঁকে জানালেন যে, সীতা অশোক বাটীকায় রাক্ষসী দ্বারা বেষ্টিত হয়ে পরম দুঃ: দিন অতিবাহিত করছেন। একথা শুনে শ্রীহনুমানজী মাতা সীতার থোঁজ পাওয়ায় তাঁর এখানে আগমনের সার্থকতার কথা ভেবে প্রসন্ন হলেন, কিন্তু চাঁর মন বিষাদময় হয়ে উঠলো দুটো কারণে:

(এক) বিভীষণ প্রভু শ্রীরামের ভক্ত হওয়া সন্তেত একবারের জন্যও সীতার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে এই দুঃসহ অবস্থায় মানসিক সাত্ত্বনা দেবার চেষ্টা করেননি ;

(দুই) ভ্রাতা লঙ্কেশ রাবণকে তার কুকীর্তি ও নীতিবিরুদ্ধ কাজের জন্য তাকে তিরস্কার করা বা যুক্তি দিয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা পর্যন্ত করেননি। প্রশ্ন উঠডে পারে বিভীষণ তাঁর ইষ্টদেবের পত্নী, যিনি কিনা তাঁর পরম পূজনীয়া, তাঁর দুঃখ লাঘবের কোলো চেষ্টাই কেন করলেন না? লঙ্কেশ রাবণ ভ্রাতা বিভীষণকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন এবং বিভিন্ন সময়ে তাঁর সুপরামর্শ নিতেন। ভ্রাতা বিভীষণও তাঁর জ্যেষ্ঠর অত্যন্ত অনুগত ছিলেন। তা হলে ?

আসলে ভগবদ্-ভক্ত তথা সাধকদের মধ্যে একটা বড় অংশ নিজের ঘর অথবা মন্দিরের চার দেওয়ালের মধ্যে সংকুচিত মনোবৃত্তিতে ইষ্টস্বরূপের আরাধনায় রত থাকেন, কিস্তু ধর্মের গ্লানি বা সমাজের ধর্মের শোষণের ঘটনা তাঁরা দেখেও দেখেন না বা নিজেদের নিয়েই তাঁরা ব্যস্ত থাকতে ভালবাসেন।

শ্রীহনুমানজীর সাক্ষাৎ সর্বদাই অমোঘ হয়। বিভীযণকে মার্গদর্শন করাতে তিনি বোঝালেন যে, কোলো নীচ বা আসুরিক কুলে জন্ম হলেই তার আধ্যাত্মিক বিকাশ হবে না এমন নয়। (ভক্ত প্রহুদা, রাক্ষসরাজ বৃত্তাসুর এঁরা এর জূলত্ত উদাহরণ)।

নিষ্ঠাবান সাধকের সাত্ত্বিক পুরুযার্থের কারণে প্রভু শ্রীরাম তাঁর (সাধকের) সাক্ষাৎ জ্ঞানী এবং সদ্গুরুর সঙ্গ করান। এই রকম সদ্গুরু অথবা মহাপুরুষের উপর পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে তাঁর মার্গদর্শন এবং আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলে সময়ের সাথে সাথে সব রকম জিজ্ঞাসা ও সংশয় দূর হয় এবং ইট্টে ধ্যান কেন্দ্রীভূত হয়। আর তখন সংসারের সব বিপরীত পরিস্থিতিতে

সত্যকে আঁকড়ে থাকার হিম্মত এসে যায়। তপস্যার ভূমি তখন দৃঢ় হয় যার দ্বারা সাধক বাহ্য জগতের বিবাদ এবং অন্তঃকরণের বিকার থেকে মুক্ত হয় এবং আখ্ম-সাক্ষাৎকারের চরম অবস্থায় পোঁছোয়।

শ্রীহনুমানজীর মার্গদর্শনের পর বিভীষণের পরম তত্ত্বের জ্ঞান এবং আধ্যাত্ম যাত্রা গতি লাভ করলো। বিভীষণ শ্রীহনুমানজীকে কথা দিলেন যে, দাদাকে তিনি মাতা সীতাকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বলবেন এবং এই কাজে কোনো বিলম্ব হবে না। বিভীষণ তাঁর কথা রেখেছিলেন এবং এই কাজে দাদার বারংবার পদাঘাতও তাঁকে তাঁর কাজ থেকে টলাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত দাদার কাছে বিতাড়িত হয়ে এই অধর্ম ও বিনাশের রাজ্য লঙ্কা ছাড়তে এক মুহূর্তও বিলম্ব করেনनি। তাই শ্রীহনুমানজীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ তাঁর জন্য কোলো সদ্গুরুর সঙ্গ থেকে কম ছিল না।

প্রশ্ন এখনও থেকে যায় যে, শ্রীহনুমানজী বিভীষণকে কোন মন্ত্র দেন এবং কখন? বিভিন্ন রামায়ণ ঘাটলে দেখা যায় যে, শ্রীহনুমানজী কোনো বিধিবদ্ধ মন্ত্র বিভীষণকে দেননি কিল্তু শ্রীহনুমানজী যখন লঙ্কেশ রাবণকে তাঁর রাজদরবারে মাতা সীতাকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রভু শ্রীরামের চরণের স্মরণ নিয়ে নিষ্কন্টক রাজ্যভোগের কথা বলেছিলেন, সেই অমূল্য পরামর্শ বিভীষণ মন্ত্রের রূপে অক্ষরে অক্ষরে গ্রহণ করেছিলেন।

শ্রীহনুমানজী লঙ্কেশ রাবণের রাজসভায় অত্যন্ত নির্ভীকভাবে যখন রাবণকে বুঝিয়ে বললেন,“রাম চরণ পঙ্কজ উর ধরহ। লঙ্কা অচল রাজু তুমহ করহু।।” (রা:চ:মা:), তখন রাবণ শ্রীহনুমানজীকে ‘জ্ঞনী গুরু’ বলে বিদ্রপ করে তাঁর এই পরামর্শ স্বীকার করলেন না, কিস্তু তাঁর এই কথা বিভীষণের চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্ডন আনলো। এই কথাগুলি মন্ত্রের মতো ঢাঁর হৃদয়ে শক্তি সঞ্ণার করে তাঁর নিষ্ক্রিয়ভাবকে মুহূর্তে কাটিয়ে দিলো।

তিনি বুঝলেন প্রভু শ্রীরামের চরণরজ প্রাপ্ত করতে হলে শুধু শ্রদ্ধা ও বিধিবদ্ধ পূজাই যথেষ্ট নয়, তাঁর নাম, স্মরণ-মনন করাই যথেষ্ট নয়, প্রভুর অসমাপ্ত কাজে যোগদান ও সাধ্যমত সহযোগ করাও জরুরি। ঈশ্বরপ্রেম সাধককে নির্ভীক করে কারণ সে দেহাখবোধের উর্ধে উঠে যায় এবং সত্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য নিজেকে সঙ্কল্পবদ্ধ করে। আর এইসব হলে তখন সে ভগবদ্ সান্নিষ্যের যোগ্য হয়। তাই বিভীষণ প্রভু শ্রীরামের শরণাগত হওয়ার শুষু যোগ্যই হলেন না, প্রভু

Leave a Comment