Pilgrims visiting Hanuman temples often offer the recitation of Hanuman Chalisa with Meaning as a form of worship.
Hanuman Chalisa Chaupai 18 in Bengali with Meaning & Analysis
যুগ সহস্র যোজন পর ভানূ।
লীল্যো তাহি মধর ফল জানূ॥
সারানুবাদ : সহম্র বা হাজার যুগ-যোজন দূরে অবস্থিত যে সূর্য, তাকে আপনি সুমিষ্ট ফল মনে করে গ্রহণ করতে উদ্যত হয়েছিলেন।
ব্যাখ্যা : এই চোপাঈতে গোস্বামীজী তাঁর ভক্ত হৃদয়ের অপূর্ব কাব্যশৈলীর পরিচয় রেখে শ্রীহনুমানজীর পরাক্রমের চিত্র অক্কন করেছেন।
শ্রীহনুমানজীর নাম কেন হনুমান রাখা হলো প্রসঙ্গের মূল সূত্র এই চোপাঈতে খুঁজে পাওয়া যাবে। হনুমান চালীসার আলোচনা করতে গিয়ে হনুমান নামকরণের কাহিনী আগে সংক্ষেপে বলেছি। এখন আমরা দেখব গোস্বামীজী এই প্রসঙ্গে আমাদের মনের মধ্যে ওঠা কয়েকটি প্রশ্নের কিভাবে নিরসন করছেন।
প্রথম প্রল্ন : স্বয়ং ভগবান শংকরের একাদশ অবতার কিভাবে ভোরের উদীয়মান সূর্যকে একটি ফল বলে ভুল করলেন ?
দ্বিতীয় बরশ্ন : গোস্বামীজী পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব বোঝাতে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা আধুনিক গণনাকারদের সঙ্গে কতটা মেলে ?
তৃতীয় প্রশ্ন : যে হনুমানজী মাতা জানকীর অনুমতি নিয়ে নিজের তীব্র খিদে নিবারণের জন্য অশোকবাটীকায় ইচ্ছে মতো ফল খেলেন এবং তার আগে প্রচণ খিদে সত্ত্বেও মৈনাক পর্বতের অনুরোধেও বিশ্রাম ও ফল গ্রহণ করলেন না, ওধু তাই নয় সমুদ্র লখ্বনের পরেও ফলের বাগান দেখে খিদে চেপে রাখলেন, সেই তিনি ওই অল্প বয়সে মায়ের আগমনের জন্য (মা অঞ্জনা বাড়ির বাইরে ছিলেন) খিদে চেপে রাখতে পারলেন না ?
মহাপরাক্রমী শ্রীহনুমানজীর অনनয কথার রস-আস্বাদনের জন্য এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আসুন, আমরা সেই রস-সাগরে ডুব দিই।। প্রথমেই দেখি, “যুগ সহস্র যোজন পর ভানূ” বলতে কি বোঝানো হচ্ছে?
দূরত্ব মাপবার সংস্কৃত শব্দ ‘যোজন’। আমরা যদি আরো বিস্তৃত তথ্যের অনুসন্ধানে যাই তাহলে কয়েকটি জিনিস আমাদের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন পঞ্চম শতাব্দীতে রচিত ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ অনুসারে পাঁচ মাইলকে এক যোজন বলে ধরা হতো।
আবার আর্যভট্ট তাঁর রচিত গ্রন্থ আর্যভট্টীয়তেও এই হিসাবকে সঠিক বলে মান্য করেছিলেন। কিস্তু চতুর্দশ শতাব্দীতে এই হিসাবকে অস্বীকার করে এক যোজনকে আট মইল সমান ধরা হয়েছিলো। আলেকজাগার কানিংহাম নামে এক ভৌগোলিক এক যোজনকে আট মাইলই মেনেছিলেন। তাই আমরা এক যোজনকে আট মাইল মেনেই এগিয়ে চল|
এই চৌপাঈতে গোস্বামীজী পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে দূরত্বকে তাঁর ভক্তিমিশ্রিত কাব্যে সূত্রাকারে প্রস্তুত করে বলছেন যে ‘যুগ সহস্র যোজন’। এবার দেখা যাক হিসেব কি দাঁড়াচ্ছে ?
১ যুগ = ১২,০০০ বছর
হাজার = ১, ০০০
১ যোজন = মাইল
তাহলে ‘যুগ সरस যোজন’ দাঁড়ায় : ১২,০০০ x ১, ০ ০ ০ x = ৯,৬০,০০,০০০ অর্থাৎ ন কোটি ষাট লক্ষ মইল। তাহলে দেখা যাচ্ছে গোস্বামীজী যোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব বৈজ্ঞানিক সিদ্ধাস্তের প্রায় কাছাকাছিই বলেছিলেন। গোস্বামীজী শ্রীহনুমানজীর অসামান্য কীর্তির বর্ণনায় এই বিশাল ও অসম্ভব দূরত্বের বর্ণনা রেখেছেন।
এরপর আমরা প্রথম ও তৃতীয় প্রণ্নের উত্তর থুঁজবো। প্রভাতের উদীয়মান সূর্যকে ফল ভেবে তাকে গ্রহণ করার জন্য লাফ মেরে শ্রীহনুমানজীর এগিয়ে চলার ঘটনা প্রধানতঃ বিভিন্ন রামায়ণে কিষ্কিন্ধাকাণ্ড, উত্তরকাণ্ত ও সুন্দরকাণ্ডে পাই। মহাকবি বাল্মীকির রামায়ণে এই ঘটনার বিস্তারিত উঙ্লেখ দুই জায়গায় পাই। প্রথমে কিষ্কিন্ধাকাগ্ডে ও পরে উত্তরকাগ্ডে।
উত্তরকাগ্ডের বর্ণনা অনুসারে এই ঘটনার দিন ছিল অমাবস্যা। রাহ সূর্যকে গ্রাস করার জন্য অগ্রসর হচ্ছিল, তখন শ্রীহনুমানজীকে দেখে সে পালিয়ে যায়। দেবরাজ ইন্দ্র, রাহুর কাছে খবর পেয়ে শ্রীহনুমানজীকে নিরস্ত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ঢাঁর ওপর বজ্জ প্রহার করেন। বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে শ্রীহনুমান মুখে আঘাত পেয়ে
মূর্ছিতিত অবস্থায় উদয়গিরি পর্বতের শিখরে পড়েন। যেহেতু তাঁর হনু খগ্ডিত বা বসে যায়, তাই তাঁর নাম হনুমান। এই ঘটনায় পবনদেব (ब্রীহনুমানজীর মানস পিতা) অত্যন্ত রুষ্ট হয়ে তাঁর কাজ বন্ধ করে দেন। সমস্ত জগৎ প্রাণবায়ুর অভাবে লয়প্রাপ্ত হওয়ার দিকে এগোতে থাকলে দেবতারা প্রমাদ গোনেন। ব্রহ্মদেব দেবতাদের অনুরোধে সকলকে নিয়ে পবনদেবকে বোঝান এবং শ্রীহনুমানজীকে সুস্থ করে তুলে তাঁকে আশীর্বাদসহ সমস্ত রকম শক্তি আলাদা আলাদাভাবে দেবতাদের দিয়ে দেওয়ান।
পরে অবশ্য ঋযিগণ তাঁর ওপর রুষ্ট হয়ে তাঁর এই সমস্ত শক্তি বিস্মরণের অভিশাপ দেন। অনেক পরে বয়োঃজ্যেষ্ঠ ঋক্ষরাজ জাম্ববান তাঁর এই শক্তির কথা মনে করালে শ্রীহনুমানজী দেবতাদের আশীর্বাদে তাঁকে দেওয়া সমস্ত শক্তি ফিরে পান। এই সমস্ত ঘটনা থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যায় যে, অত্যন্ত ছোট বয়স থেকেইই শ্রীহনুমানজী ছিলেন অসম সাহসী, निর্ভয় ও প্রচঞ শক্তিধর।
এইবার আমরা দেখি শ্রীহনুমানজী সূর্যকে কি করে ফল বলে ভুল করলেন এবং প্রচগু খিদেকে কেন সহ্য করলেন না ? শ্রীহনুমানজীর দ্বারা সংঘঠিত এই ঘটনার ফল ছিল সূদূরপ্রসারী। রামায়ণের ঘটনাক্রমে ও ভক্তদের সাধকের জিজ্ঞাসার উত্তর এতে নিহিত আ৫ছ। গোস্বামীজীর এই চৌপাঈ-এর আধ্যাছ্মিক ব্যাখ্যার দিকটা একবার দেখি।
এই ঘটনা এই কথা প্রমাণ করে যে, শ্রীহনুমানজী সেই সকালে অত্যন্ত ক্ষুধার্ত ছিলেন। ক্কুধা সাধারণতঃ তিন প্রকারের হয়। সর্বপ্রথম – শরীরের ক্ষুধা। এই ক্ষুধা, ধনী হোক বা গরীব, সবার একইরকম হয়। ধর্ম, বর্ণ, জাত, সদ্গুণী বা নির্তণ, অ্ঞানী বা অজ্ঞানী সবারই শারীরিক ক্ষুধা একই রকম হয়। আর সবাই এই ক্ষুধাকে খাবার গ্রহণের দ্বারা নিবৃত্ত করে।
শরীরের ক্ষুধার মতো মন ও বুদ্ধিরও ক্কুধা আছে। কারণ মানব কেবল শরীর নয়, মন ও বুদ্ধির সমন্বয়ও বটে। মানুযের মনের অনেক কুষুধার মধ্যে সর্বদাই প্রাথমিকতা হলো প্রেম ও আদর পাওয়া। মনের আরেক ক্ষুধা হলো প্রসন্ন হওয়া বা প্রসন্নতাকে পাওয়া। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় ক্ষুধা হলো শাত্তির এবং এই ক্ষুধার নিবৃত্তি হল শাত্তিলাভ।এইরকমই বুদ্ধির ক্ষুধা হলো সত্যকে জানা অর্থাৎ আমি কে? সংসার কি? ভগবান কেমন ?
অর্থাৎ প্রথম প্রশ জীব সম্পর্কিত, দ্বিতীয় প্রশ্ জগতকে নিঢ়ে আর তৃতীয় প্রশ্ন জগদীশকে নিয়ে। মানুমের সুস্থ দেহ এবং উই্ততির জন্য অত্যন্ত জরুরি হলো তার শরীর, মন ও বুদ্ধির খিদে যেন সদা জাগ্রিত থাকে এবং সুচারূপে যেন তা সধ্ট্টি প্রদান করে। এই বিশ্লেষণ থেকে আমরা বুঝডে পারছি যে শ্রীহনমমানজী খিদের তাড়নায় সূর্যকে ফল ভেবে ভে লম্ফ দিয়েছিলেন, তাঁর সেই খিদে ছিল বোধ্ধিক অর্থাৎ বুদ্ধি দ্বারা পুষ্ট। উদীয়মান সূর্যকে নিতের অস্তঃকরণে উতরানোর প্রয়াস পরম সত্যকে উপলক্ধির প্রতীকস্বরূপ।
अসঢো মা সদ্গময়।
उसসো মা জ্যোতির্গুয়।
মৃर्णযো মা অমৃতং গময়।
(বৃহদারণ্যক উপनियদ) আক্মস করার জন্য যেমন বড় নাফ দেওয়ার প্রেরণা দেয়, সেই রক্ম ভক্ত ও সাধকদের সদা সত্য, জ্ঞান এবং অমৃত্তৃর থোঁজে উর্ধগমনের (সাধন ৫ বৈরাগ্যের সিঁंড়ি আরোহণের) চেষ্টা করা উচিত।