Hanuman Chalisa Pdf is composed of 40 verses that extol the virtues of Lord Hanuman.
Hanuman Chalisa Chaupai 3 in Bengali with Meaning & Analysis
মহাবীর বিক্রম বজরঙ্গী।
কুমতি নিবার সুমতি কে সঙ্গী।।
সারানুবাদ : মহা বলবান, বিশেষ পরাক্রমী, বজ্রতুল্য দেহ, কুবুদ্ধিনিবারক এবং সুবুদ্ধির সাথী।
ব্যাখ্যা : আসুন, আমরা প্রত্যেকটি শব্দের যথা সম্ভব সংক্ষিপু ব্যাখ্যা
জানার চেষ্টা করি। সংক্ষিপ্ত এই জন্য যে, এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা যা গোস্বামীজীর ও মহামুনি বাল্মীকির রচনায় পর্যাপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে তার বিবরণ দিলে এই লেখা শেষ করা যাবে না।
মহাবীর : এই শব্দের মূলতঃ চারটি অর্থ হতে পারে-
(১) যে যোদ্ধা অজেয় তাকে মহাবীর বলা যেতে পারে অথবা যার শক্তি এবং পুরুষার্থের সামলে কেউ টিকতে না পারে তাকে মহাবীর বলা চলে। রামায়ণে আমরা দেখি শ্রীহনুমানজীকে কেউ কখনো হারাতে পারেনি। শুধু একবার তিনি স্বইছায় রাবণের পুত্র মেঘনাদের হাতে ব্রস্মাস্ত্রের মর্যাদা রাখতে বন্ধন স্বীকার করেছিলেন। কিস্তু সেটাও তিনি করেছিলেন আরও একটা কারণে। তা হলো রাবগের সভায় গিয়ে রাবণকে উপদেশ দেওয়া এবং প্রভু শ্রীরামের দূত হিসাবে তাঁর পরিচয় রাখার জন্য।
(২) যে অন্যকে পরাজিত করে তাকে বলা হয় বীর আর যিনি নিজেকে জেতেন তাকে বলা হয় মহাবীর। অন্য কারোকে পরাজিত করা সহজ কারণ এই কাজে কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি বা বাহ্যিক কোনো কিছুর সাহায্য নেওয়া যায় কিল্তু নিজের উপর বিজয় পাওয়া সোজা কাজ নয়। নিজের উপর শাসন করার জন্য অনবরত সাত্ত্বিক সংঘর্ষ করতে হয়। অন্যের উপর বিজয় ক্ষণস্থায়ী কিস্তু নিজের উপর যে নিয়ন্ত্রণ রাখে তার এই বিজয় হয় শাশ্বত বা সর্বকালের জন্য।
ब্রীমদ্ আদি শংকরাচার্য তাঁর বিবেকচূড়ামণি গ্রন্থে ৭৬-নং শ্লোকে মানুষকে সাবধান করে দিয়ে বলছেন যে, হরিণ, হাতি, পতঙ্গ, মাছ এবং মৌমাছি এরা রূপ, রস, শব্দ, গন্ধ ও স্পর্শের মধ্যে যে কোনো একটিতে আকর্ষিত হয়ে সংযমের অভাবে মৃত্যুমুতে পতিত হয় আর সেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত এই পাঁচটির দ্বারা আকর্ষিত হচ্ছে, তাহলে তাদের অবস্থা কি হবে? সেই মানুষ যদি এই পাঁচ ইন্দ্রিয়ের উপর তার কর্তৃত্ব করতে পারে অর্থাৎ যে স্বয়ংকে শাসনে রাখতে পারে তাকে মহাবীর ছাড়া আর কি বলা যায় ? আর শ্রীহনুমানজী তো জিতেন্দিয় ছিলেনই।
(৩) যিনি ইন্দিরিয় ছাড়া, মন ও বুদ্ধির উপরও কর্তৃত্ব করেন তাকেও মহাবীর বলা চলে। মূলতঃ অস্থির এবং দুর্বল মন মানুষকে হাজারো দলদলে পাঁকে ফেলে আর মানুষ ক্রমশ নিচের দিকে তলিয়ে যায় যার ফলে অশান্তি ও অন্যান্য দুর্তুণ তাকে পেয়ে বসে। মুস্কিল হচ্ছে যে মানুষ বিচারশীল এবং বুদ্ধিমান হওয়া সত্ত্বেও কুবিচার আর বুদ্ধিহীন কাজকে যখন এই গুণগুলির দ্বারা সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে তখনই সমস্যা তার ঘাঁটি গেড়ে বসে।
আর এই কারণেই মানুষ জন্ম-মরণের পাকচক্রে আটকে যায় আর অসীম যাতনার শিকার হয়। আধ্যাছ্মিক উন্নতির জন্য ইন্দ্রিয়, মন আর বুদ্ধির উপর অঞ্কুশ লাগানো অত্যন্ত জরুরী। শ্রীহনুমানজী সমস্ত সদ্গুণের সাগর আর তাই ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধি তাঁর সদা অনুগত। এই কারণেও তিনি মহাবীর।
(৪) শ্রীমদ্ বল্লভাচার্য মহাবীর শব্দের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন যে, যার মধ্যে মদ, মদন ও মাৎসর্য নেই, তিনিই মহাবীর আখ্যার যোগ্য। সংক্ষেপে দেখা যাক এর অর্থ কি।
মদ ; দন্ত। ভারী অদ্ভুত মনে হয় যখন দেখা যায় প্রভু শ্রীরাম, মাতা সীতা, শত্রু রাবণ ও বানরবীর ও দেব-দেবীর অসংখ্য প্রশংসা সত্ত্বেও শীরীহুমানজীর মধ্যে দম্ভের বা গর্বের লেশমাত্র হয় না। শেখার জিনিস এটই যে, যখনই শ্রীহনুমানজীর কেউ প্রশংসা করতো, তখন তিনি এই প্রশংসার শ্রেয় সর্বদাই প্রভু শ্রীরামকে দিতেন। আর প্রভু রাম স্বয়ং বললে তো তিনি অর্টু সংবরণ করতে পারতেন না। প্রভুর পা জড়িয়ে ধরতেন। শ্রীহনুমানজী তাই সর্বদাই এক অতি বিরল ব্যক্তিত্ব।
মদন : যার আর এক অর্থ কাম। ভগবান শংকর দ্বারা ‘মদন-ভস্ম’-এর কাহিনী আমরা সবাই জানি। সুতরাং খুবই স্বাভাবিক যে একাদশ রুদ্রাবতার অর্থাৎ শ্রীহনুমানজী কামদেবকে তাঁর থেকে সদা দূরে থাকতে বাধ্য করেছেন। শ্রীহনুমানজী মাতা সীতার খোঁজে লঙ্কাপুরীর সর্বত্র রাত্রে যখন ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তখন তিনি রাবণের অন্তঃপুরে প্রবেশ করে অসংখ্য সুন্দরী নারীর রাত্রিকালীন শয়নের বিভিন্ন ভঙ্গিমা ও অঙ্গসজ্জা প্রত্যক্ষ করেছিলেন।
কিস্তু এই দর্শন তাঁর মনের মধ্যে এতটুকু কাম-গন্ধের দাগও ফেলতে পারেনি। ঘটনা হলো সত্যিকারের মহাপুরুষের কাছে কাম ইত্যাদি নিকৃষ্ট বিচার টিকতেই পারে না যার জগতে অসংখ্য উদাহরণ আছে। আর শ্রীহনুমানজী তো স্বয়ং ত্রিগুণাতীত বা মায়ার অতীত, তাই কামদেবের মায়া কোনো কাজে আসেনি।
মাৎসর্য : অর্থাৎ ঈর্ষা; মানুষের অত্যন্ত পুরনো স্বভাব হলো নিজের অবস্থাকে অপরের সঙ্গে তুলনা করে জোর করে দুঃখ বা মনের পীড়াকে টেনে আনা। সংবাদপত্রে কোনো ভিখারীর পঞ্ণশ লক্ষ টাকা লটারী পাওয়ার
খবর দশজনকে জানাতে মানুষ সদা উৎসুক হয় কিন্তু যদি পাঁচ হাজার টাকা তার কোনো পড়শী পায় তবে মন বিষাদগ্রস্ত হয়ে কয়েকদিনের ঘুম কেড়ে নেয় বা সুস্বাদু খাবারও বিস্বাদ লাগতে থাকে। আধ্যাছ্মিক পথের মহাজনরা বলেন এই রোগের নিরসনের সহজ উপায় হলো অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে নিজের যা আছে তার আনন্দ নেওয়া। এটা তখনি করা যাবে যখন মনের মধ্যে এই ধারণা বদ্ধমূল হবে যে, মানুষ তার প্রারদ্ধ অনুযায়ী সুখ বা দুঃখ পায়। সুতরাং আমর প্রারদ্ধে যা আছে তাই আমি পেয়েছি। “যাহে বিধি রাখে রাম, তাহে বিধি রহিয়ে।।”
বিক্রম : এই শব্দ পরাক্রমের শ্রেষ্ঠত্বকে সূচিত করে। শ্রীহনুমানজী বীরত্বে, দাসভক্তিতে, সময়জ্ঞানে, জ্ঞানে, বৈরাগ্যে, কর্মযোগে ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষ্য রেখেছেন। তাই শ্রীহনুমানজী ‘অনস্ত বিক্রমী’ এ হেন কথা বললে কোনো অত্যুক্তি হবে না।
বজরঙ্গী : মূল শব্দ হলো বভ্রাঙ্গী অর্থাৎ বজ্র সমান যার দেহ। শ্রীহনুমানজীর দেহ বভ্র সমান তো ছিলই, তাঁর মানোবল ও আআ্মবল ছিল বজ্রের সমান কঠিন। শ্রীহনুমানজীকে বিচলিত করা শধু কঠিন নয় অসম্ভবও বটে।
কুমতি নিবার সুমতিকে সঙ্গী : তুলসীদাসজী বলছেন যে, শ্রীহনুমানজীর শরণ কেউ নিলে তিনি প্রথমে তার যে কাজটি ধীরে ধীরে করে দেন তা হলো তার মধ্যে বিচারশীলতা এনে দেন, সদ্বুদ্ধি দান করেন আর কুবুদ্ধির নাশ করেন। শ্রীহনুমানজী জানেন শধু কুবুদ্ধির প্রভাব কমালেই হবে না, কারণ বুদ্ধিকে খালি ছেড়ে দিলে কুবুদ্ধি আবার ফিরে আসতে পারে। শ্রীশ্রীরামচরিতমানসের সুন্দরকাণে বিভীষণ বলছেন যে, সবার হৃদয়েই সুমতি আর কুমতি পাশাপাশি অবস্থান করে :-
সুমতি কুমতি সবকে ঔর রহश। নাথ পুরান নিগম অস কহश।।
সুমতি মানে সৎ সঙ্গ, সদ্বিচার, সদ্চর্চা, শভ নির্ণয়। কুমতি অর্থে ভুল নির্ণয়।
বুদ্ধির দু রকম দিশা। যে নির্ণয় ক্ষতিকারক, যে বুদ্ধি সূক্ষ্ম ছলনার আশ্রয় নেয়, যে নির্ণয় শাশ্বত নয় তাই কুমতি। আর সুমতির সঙ্গ সদাই শ্রীহনুমানজী করিয়ে দেন তাঁর শরণাগতদের। কিষ্কিন্ধায় শ্রীসুগ্রীব আর অঙ্গদের কুমতি দূর করেছিলেন শ্রীহনুমানজী, লঙ্কা নগরীতে প্রবেশ দ্বারে মুষ্ঠাঘাতের ফলে লঙ্কিনীর শাশ্বত চেতনা ফিরেছিলো, মূচ্চিত লক্ষ্মণকে চিকিৎসা না
করার যুক্তিজাল বিস্তার করার জন্য চিকিৎসক সুযেণকে ডাঁর কর্তব্য বুঝিয়েছিলেন; ইত্যাদি অনেক দৃষ্টান্ত আছে যেখানে শ্রীহনুমানজী কুমতি দূর করে সুমতি প্রদান করেছিলেন।