Hanuman devotees recite the Hanuman Chalisa Pdf to seek blessings for health and well-being.
Hanuman Chalisa Chaupai 21 in Bengali with Meaning & Analysis
রাম দুয়ারে তুম রখবারে।
হোত ন আজ্ঞা বিনু পৈসারে।।
সারানুবাদ : শ্রীরামের প্রবেশ দ্বারের আপনিই রঙ্ষক। আপনার অনুমতি ছাড়া কারোর পক্ষেই প্রবেশ কবা সম্টব নয়।
ব্যাখ্যা : প্রভু শীরীম পরব্র২্ন কিন্তু নরলীলায় তিনি অযোধ্যার রাজা। তাই এক রাজার গৃহ বা রাজপ্রাসাদ যেমন সবল ও অস্ত্রধারী প্রহরী দ্বারা সর্বদা রক্ষিত হয়, তাঁর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। তফাতের মধ্যে তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থীদের ছিল অবারিত দ্বার। তারা দিন বা রাতের যে কোনো সময় তাঁর সাক্ষাৎ চাইলে তিনি তৎক্ষণাৎ তাদের মনস্কামনা বা প্রার্থনা স্বীকার করতেন এবং তা পূরণ করার প্রয়াস করতেন।
তাহলে ‘রাম দুয়ারে তুম রখবারে’ বলতে ঠিক কি বোঝানো হচ্ছে? আসুন, আমরা গোস্বামী তুলসীদাসজীর ‘শ্রীশ্রীরামচরিতমানস’ থেকে এর অর্থ খুঁজে দেখি। কিষ্কিষ্ধাকাত্ডের ওুরুতে আমরা দেখি যে, শ্রীহনুমানজী, শ্রীরাম ও লক্ষ্মণকে ঋষ্যমুক পর্বতের শীর্যে নিয়ে গিয়ে সুগ্রীবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে মৈত্রী স্থাপন করালেন।
ওই সময় তিনি ঢাঁর দাদা কিষ্কিন্ধানরেশ বালীর কাছে পরাজিত হয়ে ও রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে এই পর্বতের গুহায় লুকিয়েছিলেন। শ্রীহনুমানজীও তাঁর সঙ্গে সঙ্গে কিষ্কিদ্ধা থেকে বেরিয়ে আসেন যদিও বালী তাঁকে সম্মান সহকারে তাঁর রাজসভায় মন্ত্রী হয়ে থাকতে অনুরোধ করেছিলেন।
শ্রীহনুমানজী প্রভু শ্রীরামকে সুগ্রীবের এই দুর্দশার কারণ বিস্তারিত জানালে তিনি তাকে সমস্ত রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন এবং পরে অগ্নি সাক্ষী করে দুইজনের মৈত্রী স্থাপিত হয়। প্রভু শ্রীরাম সুগ্রীবকে সব অবস্থায় রস্ষা করারও কথা দেন। ভাই লক্ষ্ণনের এই অগ্নি সাক্ষী করে মিত্রতা ভাল লাগেনি, কারণ সুগ্রীবের কিছু কিছু চারিত্রিক গুণ তাঁর কাছে রাজাসুলভ মনে হয়নি এবং প্রভু শ্রীরামের মৈত্রতার পরিপন্থী বলে মনে হয়েছিল।
কিস্তু শ্রীরাম কেবল একটি কারণেই ঢাঁর ভাই লক্মৃকে মানিয়ে নিয়েছিলেন যে, শ্রীহনুমানজী যেহেতু তাঁর (সুগ্রীবের) প্রশংসা করেছেন, কাজেই তাঁকে তিনি ত্যাগ করতে পারেন না। আবার, শ্রীশ্রীরামচরিতমানস-এর আরেকটি প্রসঙ্গ যা কিন্না সুন্দরকণ্ডে আছে যেখানে আমরা দেখি যে, লঙ্কাধিপতি রাবনের ভাই বিভীষণ লঙ্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে সমুদ্রের অপর পারে প্রভু শ্রীরামের কাছে শরণাগতির আশায় পোঁছে যান। তিনি যখন তাঁর অনুগত পার্যদদের নিয়ে সমুদ্রের ওপর দিয়ে আকাশমার্গ হয়ে আসছিলেন, ত্খন সুগ্রীবসহ সমস্ত বানরকুল যোদ্ধারা
ঢাঁদের দেখে তাঁরা কোনো গুপু মতলবে আসছেন এই আশঙ্কা করে প্রভু শ্রীরামকে খবর দেন। কিস্তু প্রভু শ্রীরাম শ্রীহনুমানজীর দিকে তাকালে শ্রীহনুমান ইশারায় বিভীষণকে সাদর আমন্ত্রণ জানানোর কথা বললেন এবং শ্রীরাম শ্রীহনুমানজীর শুধু ইচ্ছাই পূর্ণ করলেন না পরন্ত বিভীষণকে অন্তরঙ্গ সখা করলেন। এই দুই প্রসঙ্গ থেকে এটা পরিষ্কার যে, শ্রীহনুমানজীর কৃপাপাত্র ভক্তর দোষ-গুণ প্রভু দেখেন না, শুধু তাই নয় প্রভু শ্রীরাম তৎক্ষণাৎ তাঁকে তাঁর নিজের শরণে নিয়ে নেন এবং সবরকমের অভয় প্রদান করেন।
এর আর এক অর্থ এ রকমও হতে পারে যে, প্রভু শ্রীরামের চরণে শরণাগত হবার জন্য যে ভক্ত প্রভুর দুয়ারে আসে, শ্রীহনুমানজী সেই ভক্তর সব সঙ্কট অবস্থায় তার রক্ষার দায়িত্ব স্বীকার করেন। লঙ্কাদহনের সময় সমস্ত লঙ্কাপুরী জূলে ছারখার হয়ে গেলেও, বিভীষণের ঘর কিন্তু জ্বলেনি কারণ (১) সেই ঘর ছিল শ্রীহরি মন্দির যার আঙ্গিনায় তুলসীমঞ্চ শোভা পাচ্ছিল এবং (২) সমস্ত ঘর প্রভু শ্রীরামের বিভিন্ন চিহৃ দ্বারা সুশোভিত ছিল।
একবার ভাবুন, আমরা যদি প্রভুর শরণাগত ইই এবং নিজেদের ঘরের বাইরে নেমপ্লেটে নিজেদের নাম সরিয়ে ‘রামদ্বার’ লিখি এবং দেহের আমি/আমার অহংকার ত্যাগ করতে পারি, তবে এই দুয়ারই ‘রামদ্বার’ হবে এবং স্বয়ং শ্রীহনুমানজী তা রক্ষা করবেন এই বিষয়ে কোলো সন্দেহ নেই যা তিনি বিভীষণের ক্ষেত্রে করেছিলেন।
ভারতবর্বের যত মন্দিরে প্রভু শীরীামের মূর্তি আছে, সেই মন্দিরের বাইরে অবশ্যই শ্রীহনুমানজীর মূর্তির দর্শন আপনার হবেই। কিস্তু যেখানে শ্রীহনুমানজীর মূর্তি আছে সেখানে প্রভু শ্রীরামের মূর্তি নাও থাকতে পারে।
গোস্বামী তুলসীদাসজীর বিভিন্ন লেখার মধ্যে একটা কথা আমরা বারবার পাই যে যেখানে প্রভু-প্রেনের কথা হয়, সৎসঙ্গ হয়, সাধু ও সন্তদের আগমন হয়, সেই স্থান/ভবনের রক্ষা শ্রীহনুমানজী নিজের কাঁধে নিয়ে নেন। প্রভু-পপ্রেমের, নৈঘ্ঠিক ভজনের প্রতীক হলেন শ্রীহনুমানজী। তাঁর কৃপা ছাড়া হৃদয়স্থিত পরমতত্ট্বের অনুভব সম্ভবই নয়। আসুন, এই চৌপাঈ-এর তাত্ত্বিক দিকটা একবার বিচার করি|
মনে এই প্রশ্ন আসতেই পারে যে, শ্রীহনুমানজী রাম-দ্বারে কাকে রক্ষা করবেন ? শ্রীরামকে ? প্রভু শ্রীরামের নিজেকে রঙ্ষা করার জন্য কাউকে কি দূককার লাগতে পারে? অবশ্যই নয়। তাহলে ?
আধ্যাখিক দৃষ্টিতে শ্রীরাম হলেন পূর্ণভ্রম্ম। তিনি বিভু চৈতন্য। জীবাজ্মা অর্থাং আমরা হলাম অণুচেতন্য। অণুচেতন্যের বিভুতে একাত্ম হবার নামই সাধনা। সমুদ্রের জলবিন্দু যেমন সমুদ্রেরই অংশ, তেমনই ভক্ত ভগবানের অংশ। গোস্বামীজীর ভাষায় ‘ঈশ্বর অংশ জীব অবিনাশী। চেতন অমল সহজ সুখরাশী॥’
(রা: চ: মা:) কিন্তু অনাদিকাল থেকে জীব প্রারক্ধে পাওয়া দেহকে নিজের বলে অহং করে, ইন্দিয়, মন, বুদ্ধিকে ব্যবহারিক জীবনের কায়িক সুখের খোঁজে আটকে রেখে, সেই পরমতত্ত্ব তথা বিভু চৈতন্যের থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।
তাই জীবাডারার ‘রামদ্বার’-এ প্রবেশের চেষ্টায় ভভক্তকে যেখানে যেখানে অত্যন্ত সংবেদনশীল অবস্থা দিয়ে পেরতে হয় এবং মূল্য বান শ্রদ্ধা, ভক্তি যেখানে যেখানে ডগমগ করে, সেখানে সেখানে এই শ্রীহনুমানজীই তো তকে হাত ধরে পার করে দেন, ভরসা যোগান, মনোবল বাড়ান এবং সবার ওপরে প্রভুর কাছে তার হয়ে দরবার করেন, যেমন তিনি সুগ্রীবের বেলায়, বিভীষণের বেলায় করেছিলেন।
দেখুন, সাধকের জীবনে আস্থা এমন এক তত্ত্ব যার উপস্থিতি সব অবস্থায় জরুরি। কিন্তু বুদ্ধির উপস্থিতির কারণে বিচারশক্তি এবং ক্রিয়াশক্তির প্রভাবও অবশ্যম্ভাবী। আধ্যাখ্মিক উন্নতিতে এই দুই শক্তি যেমন উপকারক হয়, তেমনই এরাই আবার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
উপাসনা বা সাধনার কাখ্বিত ফল অনুভব না হলে ভক্তের সাত্ত্বিক উদ্বিগ্নতা বাড়ে। এই সময় যদি বিচারশক্তি সঠিক রাস্তা না পায় এবং ক্রিয়াশক্তি বিপথে চালিত হয়, তবে ভক্তের সব চেষ্টাই বিফলে যাবার সম্ভাবনা থাকে এবং ভক্তের আস্থা টলমল করে। আসলে প্রভু-শরণাগতিই ভক্তকে প্রভু-প্রেম দেয়।
আস্থা টলমল হলে শরণাগতি হতে চায় না। ‘রামদ্বার’-এ উপস্থিত শ্রীহনুমানজী তাকে সেই অবস্থা থেকে তুলে এনে প্রভু-শরণাগতির রাস্তা দেখান, কারণ তিনি স্বয়ংই তো প্রভু বিশ্বসের মূর্তিময় স্বরূপ।