The Hanuman Chalisa in English is a cherished part of Hindu religious literature.
Hanuman Chalisa Chaupai 22 in Bengali with Meaning & Analysis
সব সুখ লহৈ তুমহারী সরনা।
তুম রচ্ছক কাহ কো ডর না।
সারানুবাদ : আপনার শরণ সমস্ত রকমের সুখ দেয়। আপনি যেখানে রক্ষক, সেখানে কার ভয় পাবো ?
ব্যাখ্যা : আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, শ্রীহনুমানজীর শরণ নেওয়ায় বানররাজ সুগ্রীবের সঙ্গে প্রভু শ্রীরামের বক্ধুত্ত হয় এবং পরে তিনি কিষ্কিক্ধার রাজাও হন। তেমনি রাবণের ভাই বিভীযণও শ্রীহনুমানজীর শরণ নেওয়ায় প্রভু শ্রীরামের শধু পরম মিত্রই হননি, উপরব্তু রাবণের মৃত্যুর পর লঙ্কার मिशহাসলেও বসেন।বস্তুত বিভিন্ন রামায়ণে এ রকম আরও অনেক ঘটনার উম্লেখ আছে যেখানে শ্রীহনুমানজীর শরণ সমস্ত রকম ভয় দূর করে সুখের প্রাপ্তি ঘটিয়েছে। তারই দু-একটি ঘটনামাত্র উল্লেখ করছি এই বইয়ের কলেবরের কথথা মাথায় রেখে।
প্রভু শ্রীরাম, অযোধ্যার সিংহাসনে আরোহণ করার কিছুদিন পরে ঋষিপ্রবর গুরু বশিষ্ঠ মুনির ইচ্ছায় অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেন। এই যজ্ঞের ঘোড়ার রক্ষার ভার দেওয়া হয়েছিল শ্রীহনুমানজীকে। এছাড়াও শত্রুঘ্ন, ভরতের পুত্র পুষ্কল, চতুরঙ্গী সেনা ইত্যাদিও সাথে গিয়েছিলো।
এরকমই ঘুরতে ঘুরতে সেই ঘোড়া একবার দক্ষিণের এক রাজা বীরমণির রাজ্যে প্রবেশ করে। সেই রাজার রাজ্যের নাম ছিল দেবপুর এবং রাজা ছিলেন পরম ধর্মপ্রাণ। সেই ঘোড়াকে আটক করা হলে এক ভীযণ যুদ্ধ শুরু হয়। বীর রাজার পুত্র ও রাজার সঙ্গে যুদ্ধে শত্রুঘ ও পুক্ষল পরাস্ত হন ও প্রাণ হারান।
ख্রীহনুমানজী যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন না এবং পরে এই ভয়ানক সংবাদ পান। তিনি তৎক্ষণাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছেই এই নিদারুণ দৃশ্য দেখে মুহূর্তের মধ্যে সংকল্প করেন, “यদি আমি আজীবন ব্রম্মাচর্য্য ব্রত পালন করে থাকি এবং শ্রীরামের অনন্যভাবে সেবা করে থাকি, তবে শত্রঘয় ও পুক্ষল এই মুহূর্তে জীবিত হয়ে উঠুন।” শ্রীহনুমানজীর এই সংকল্পের ঘোষণা হওয়া মাত্র শত্রুয় ও পুক্ষলের দেহে প্রাণের সঞ্চার হয়।
“তুম রচ্ছক কাহূ কো ডর না”-তুমি যেখানে রক্ষাকর্তা, সেখানে আবার ভয় কিসের? শ্রীরামের আরেক ঘটনায় সঙ্কটমোচন শ্রীহনুমানজী তাঁর নিজের এক গভীর সঙ্কটময় অবস্থায় তাঁর এক শরণাগতকে রক্ষা করেন। একবার কাশীনরেশ অযোধ্যায় এলে তাঁর দ্বারা এক বড় অপরাধ হয়ে যায় ঋষি বিশ্বামিত্রের উপর। ঋষি প্রভু শ্রীরামকে এই অপরাধের কথা জানালে মর্যাদা পুরুযোক্তম শ্রীরাম তিনটি তীক্ষ্ন বাণ দ্বারা কাশীনরেশকে বধের সংকল্প
নেন। তখন দেবর্ষি নারদের পরামর্শে কাশীনরেশ শ্রীহনুমানজীর মাতা অঞ্জনার শরণাপন্ন হন এবং মাতা অঞ্জনা কাশীনরেশের করুণ ক্রন্দনে বিচলিত হয়ে তাঁকে রক্ষা করার সংকল্প করেন। শ্রীহনুমানজী এসবের কিছুই জানতেন না। মা অঞ্জনা শ্রীহনুমানজীকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে কাশীনরেশের মৃত্যুসঙ্কট ও নিজের দেওয়া আশ্বাস ও সংকল্পের কথা জানান। মায়ের দেওয়া সংকল্প শ্রীহনুমানজীকে এক ভীষণ সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দেয়।
একদিকে মায়ের দেওয়া সংকল্প রক্ষা এবং অন্যদিকে প্রভু শ্রীরামের সংকল্প বিফল করা। এ এক উভয় সঙ্কট। কিস্তু “তুম রচ্ছক কাহূ কো ডর না”-শ্রীহনুমানজী নিজে সঙ্কটমোচলকারী হয়ে এবং স্বয়ং সঙ্কটের মধ্যে থেকেও মাকে দেওয়া আশ্বাসের মর্যাদা রক্ষার জন্য তাঁর বুদ্ধি ও সেবকত্বের এক কঠিন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। শ্রীহনুমানজী কাশীনরেশকে সরয় নদীর জলে দাঁড়িয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ এই মন্ত্র শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে উচ্চস্বরে করতে বললেন বিরামহীনভাবে
এবং নিজে সরযূ নদীর তীরে আসন করে বসে ধ্যানে লীন হলেন। কাশীনরেশ প্রাণের ভয়ে বিরামহীনভাবে নাম করে চললেন এবং দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে এলো এবং দিন শেষ হওয়ার সময় ক্রমশ এগিয়ে এলো। প্রভু শ্রীরাম সূর্যাস্তের পূর্বেই তাঁর প্রাণনাশের সঙ্কল্প করেছিলেন এবং তাই তাঁর প্রথম তীক্ষ্নবাণ নিক্ষেপ করলেন। কিন্তু সেই বাণ কিছুক্ষণ পরেই তাঁর কাছে তূণে ফিরে এল!
অন্তর্যামী প্রভু বুঝলেন যে কাশীনরেশ অবশ্যই তাঁর নাম শ্বাস-প্রশ্বাসে নিচ্ছেন। এদিকে প্রথম বাণ ফিরে যাওয়া মাত্রই শ্রীহনুমানজী কাশীনরেশকে বললেন, ‘জয় সীয়া রাম’ এই নাম আবার বিরামহীনভাবে নিতে এবং নিজে আবার প্রভুর ধ্যানে লীন হলেন। এদিকে সূর্যাস্তের সময় এগিয়ে আসছে দেখে প্রভু শ্রীরাম তাঁর দ্বিতীয় তীক্ষ্ববাণ নিক্ষেপ করলেন।
সেই বাণও কিছুক্ষণের মধ্যে প্রভুর তৃণে ফিরে এলো কাশীনরেশের ল্রুযুগলের মধ্যস্থলের একহাত দূরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। প্রভু শ্রীরাম এবার বিচলিত হয়ে পড়লেন সূর্যাস্তের আর বেশি দেরি নেই দেখে। তিনি এও বুঝলেন যে, এ সবই তাঁর পরম ভক্ত ও দাস শ্রীহনুমানজীর কাজ।
যাই হোক, প্রভু শ্রীরাম এবার সরযূ নদীর তীরে নিজে যাবেন এবং বাণ নিক্ষেপ করবেন, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে অশ্বে আরোহণ করে তীব্র বেগে এগিয়ে চললেন। এই খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ায় দলে দলে অযোধ্যাবাসী সরযূ নদীর তীরে এসে উপস্থিত হতে লাগলেন। এদিকে গুরুদেব ঋযিপ্রবর বশিষ্ঠ খবর পেয়েই অত্যন্ত উদ্বিগ হয়ে ঋষি বিশ্বামিত্রের কাছে উপস্থিভ হয়ে তাঁকে শ্রীহনুমানজী ও প্রভু শ্রীরামের মধ্যে এই অভাবিত দ্বন্দ্বের কথা বলে ঋষিবরকে অনুরোধ করলেন এই সঙ্কট দূর করতে।
প্রভু শ্রীরামের সরযূ নদীর তীরে আসার খবর শ্রীহনুমানজী ধ্যানস্থ অবস্থায় জানতে পেরে, কাশীনরেশকে বললেন, “আপনি এবার ‘জয় সীয়ারাম হনুমৎ’ এই মন্ত্র অবিচ্ছিন্নভাবে জপ করুন আর আমি সূক্ষ্মরূপে আপনার অত্তরে প্রবেশ করে অবস্থান করবো। আপনি ভয় পাবেন না।”
যাই হোক, ঋষি বশিষ্ঠের অনুরোধে বিশ্ধামিত্র সরযূ নদীর তীরে এসে প্রভু শ্রীরামকে এই বলে নিরস্ত করলেন যে, তিনি (ঋষি বিশ্বামিত্র) ঢাঁর কথা ফিরিয়ে নিচ্ছেন। প্রভু শ্রীরাম শ্রীহনুমানজীর দাস্যভক্তি ও মাতৃআজ্ঞ পালনের দৃঢ় সঙ্কল্লের জন্য খুশি হলেন এবং এইভাবে কাশীনরেশের প্রাণরঞ্ষা পেলো। তই “ তুুম রচ্ছক কাহূ কো ডর না”।
ভোলেবাবার অবতার শ্রীহনুমানজী স্বভভাবতই অত্যন্ত উদার এবং করুণাবান। তাঁর শরণাগত ভক্তের সব সুখ এমনিতেই এসে যায়। শ্রীহনুমানজী ঢাঁর শরণাগত ভক্তকে ভক্তের কল্পনাতীত সুখ দান করে থাকেন।